আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১০:১৮
এস.এম.মনির হোসেন জীবন – ঢাকা জেলা সাভারের আশুলিয়ায় ক্লু-লেস ও চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর বিশ্বাস হত্যা মামলার মূল আসামী আহিনা খাতুন (২৯)’কে নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানীর অদূরে নারায়নগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকায় সাড়াশি অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আজ র্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক (এএসপি) জিয়াউল হক চৌধুরী হত্যা মামলার মূল আসামীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। র্যাব জানান, সাভারের আশুলিয়ার ক্লু-লেস চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর বিশ্বাস হত্যা মামলার মূল আসামিকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।
ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক জানান, ভিকটিম আলী নূর বিশ্বাস মাগুড়া জেলার শ্রীপুর থানার হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। সে চাকুরির সন্ধানে ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে গার্মেন্টসকর্মী হিসাবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে বিগত কিছুদিন যাবৎ অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। গ্রেফতারকৃত আসামীর বক্তব্য অনুযায়ী প্রায় তিন বছর আগে ভিকটিমের সাথে আসামীর পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে গভীর সখ্যতা গড়ে উঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তারা দুই জনই একসাথে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমতাবস্থায় বিবাহ ব্যতিরেকে তারা নিজ নিজ পরিবারকে না জানিয়েই স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় বিভিন্ন বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকে। তবে, তারা গত ৩ বছরে ৫ বার বাসা পরিবর্তন করেছে। জুলাই মাসের শুরুতে হত্যার শিকার ভিকটিম আলী নূর বিশ্বাস কিছু দিনের জন্য মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার গ্রামের বাড়ি গেলে আহিনা খাতুন গত ১৪ জুলাই ২২ তারিখে জানতে পারে আলী নূর তার গ্রামের বাড়িতে ভিকটিম অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। এরপর ভিকটিম আলী নূর ১৭ জুলাই ঢাকায় ফিরে আসে। ভিকটিম আলী নূর এর বিয়ের কথা জানতে পেরে আসামী আহিনা খাতুনের মনে প্রচন্ড ক্রোধ এবং প্রতিহিৎসার সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রতিহিৎসা ও ক্রোধের বিষয়টি সে গোপন রেখে ভিকটিম আলী নূর’কে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করে। র্যাব সূত্রে জানা যায়, পরবর্তীতে তাদের মধ্যকার মান-অভিমান চলতে থাকলেও ভিকটিম গ্রামের বাড়ি থেকে আশুলিয়ায় আসার পর আসামী ভিকটিমকে কৌশলে গত ২৯ জুলাই ২০২২ আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকায় জনৈক দেলোয়ার বেপারী এর টিনশেড বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে শুরু করে। গত ৩০ জুলাই ২০২২ তারিখ রাতের খাবার শেষে উভয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু আসামী ঘুমের ভান করে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সে ঘুমায়নি। হত্যার পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক আসামি আহিনা খাতুন সেদিন ভোররাতে ভিকটিমকে ঘুমন্ত অবস্থায় বটি দিয়ে মাথা, গলা এবং বুকে নৃশংশভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।পরে সে রক্তাক্ত লাশ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় এবং লাশটি কাঁথা চাপা দিয়ে রাখে। হত্যার পরে তার থালা-বাসন, কাপড় চোপর এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি একটি বস্তায় ভরে ঘটনার দিন ভোর ৬ টার দিকে ঘরে তালা দিয়ে বস্তাটি নিয়ে হেঁটে প্রথমে আশুলিয়া জিরাবো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসে। সেখান থেকে বাস যোগে উত্তরার আবদুল্লাহপুর আসে। আব্দুল্লাহপুর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বাসযোগে কুড়িল বিশ্বরোডে আসে। পরবর্তীতে কুড়িল বিশ্বরোড হতে বাসযোগে নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় পৌঁছায় । মোজাম্মেল হক জানান, আহিনা সেখানে নিজেকে চাকুরী প্রত্যাশী গার্মেন্টসকর্মী পরিচয় দিয়ে ২২শ টাকায় ভাড়ায় জনৈক বয়স্ক ব্যাক্তি মজিবুরের সহযোগীতায় একটি টিনশেড বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠে এবং আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আহিনা বিবেকের তাড়নায় ৩১ জুলাই বিকাল ৪ টার দিকে ভিকটিম আলী নূর এর মোবাইলের মাধ্যমে ভিকটিমের ভগ্নিপতি জনৈক জাকিরকে জানায়, আলী নূর অসুস্থ অবস্থায় আছে, তাকে বাঁচাতে তার পরিবার যেন দ্রুত আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড ভাড়া বাসায় যান। এরপর ১ আগস্ট অনুমান দুপুর সোয়া ২ টার দিকে সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন জিরাবো এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর ভাড়া দেওয়া টিনশেড বাসায় গিয়ে দেখতে পায়, রুমের দরজা বাহির থেকে তালাবদ্ধ। তারা বাসার মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জানালা খুললে রুমের ভিতর থেকে তীব্র দুর্গন্ধসহ মেঝেতে কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় চিৎ হয়ে ভিকটিম আলী নূরের লাশ দেখতে পায়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্হলে পৌঁছে ঘরের তালা ভেঙ্গে রুমের ভিতর থেকে আলী নূর বিশ্বাসের মরদেহটি উদ্ধার করে। র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, সুরতহাল ও ময়না তদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার (২ আগষ্ট) ২০২২ ইং তারিখে ভিকটিমের বড় ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামী আহিনা খাতুন (২৯) স্থানীয় নীলফামারীর একটি স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সে চতুর্থ। ২০১২ সালে জনৈক মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে তার প্রথম বিবাহ হলেও পারিবারিক কলহের জেরে দেড় বছর পরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ওই পরিবারে তার ১ টি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে জীবিকার তাগিদে তার সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে ২০১৮ সালে ঢাকায় আসেন এবং আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টস এ চাকুরি নেন। চাকুরির সুবাদে ভিকটিমের সাথে তার পরিচয় হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিঙাসাবাদ শেষে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |