আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১২:৩৯
বিডি দিনকাল ডেস্ক : -১৯ জানুয়ারী ২০২৩। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭ তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের ইতিহাসের মহানায়ক জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমান মাত্র ৪৫ বছর বেঁচে ছিলেন। তবে এই স্বল্প জীবনের প্রতিটি কর্মে প্রতিটি দায়িত্বেই তিনি ছিলেন সফল।
বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের একটি অনিবার্য নাম, জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া রণাঙ্গনে যেমন ছিলেন একজন সফল অধিনায়ক তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায়ও ছিলেন সফল রাষ্ট্র নায়ক। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাত্র ৫ মাসের মাথায় ১৯৭১ সালের ২৮ আগস্ট স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া কুড়িগ্রামের রৌমারীতে একটি স্বাধীন প্রশাসনের উদ্বোধন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই রৌমারীতে স্বাধীন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা ছিল স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে সাহস ও বীরত্বের একটি অনন্য উদাহরণ।
স্বাধীনতার ঘোষককে জানতে হলে, বুঝতে হলে কারো সঙ্গে তুলনা দেয়ার প্রয়োজন নেই। জিয়াউর রহমান মানেই একটি স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাশীল, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া ইতিহাসের পাতায় অবিনশ্বর। তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে। তিনি জনগণের হৃদয়ে ভাস্বর গর্জনে নয় অর্জনে।
বগুড়া এবং কলকাতায় শৈশব-কৈশোর কাটানোর পর ১৯৫৫ সাল থেকে করাচিতে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমানের কর্ম জীবন শুরু হয়েছিল। কর্ম জীবনে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের শত্রুতা ও বৈষম্যমূলক আচরণ প্রত্যক্ষ করেছেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জিয়াউর রহমানের মনকে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। সেই ক্ষোভের আগুন জিয়াউর রহমানের তরুণ মনে জ্বলছিল আগুনের ফুলকির মতো।
জিয়াউর রহমানের মনে জমতে থাকা ছাইচাপা বিদ্রোহের আগুন তাঁকে ধীরে ধীরে ভবিষ্যতের একজন স্বাধীনতা যোদ্ধা হিসেবে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলে। এ কারণেই দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলা চালালে নিজের করণীয় নির্ধারণে জিয়াউর রহমানকে বেগ পেতে হয়নি। সময়ক্ষেপণ করতে হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণের উপর হামলার খবর শুনতেই ‘উই রিভোল্ট’ হুংকার দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে একমুহূর্ত দেরি হয়নি। স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেও খুব বেশি সময় কালক্ষেপন করতে হয়নি।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তৎকালীন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান। সেই সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল তূর্যধ্বনির মতো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলা’য় ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্রে ‘একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামে জিয়াউর রহমানের লেখা একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জিয়াউর রহমান কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন, কোন প্রেক্ষাপটে তিনি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন এর বিস্তারিত বর্ণনা জিয়াউর রহমানের লেখা নিবন্ধে রয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লেখা এই নিবন্ধটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য দলিল।
রাষ্ট্র পরিচালনায়ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন অনন্যসাধারণ। ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পর থেকেই মূলতঃ স্বাধীনতার ঘোষকের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রে ফেরে বাংলাদেশ। প্রেসিডেন্ট জিয়ার সরকার পরিচালনার সকল কর্মকান্ডে সমুন্নত ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক ন্যায় বিচার।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতা দখলের সশস্ত্র লড়াইয়ে দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল। খুন গুম অপহরণ দুর্নীতি লুটপাট সন্ত্রাস সদ্য স্বাধীন দেশের স্বাভাবিক চিত্রে পরিণত হয়েছিল। নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে জোর করে বাঙালি বানাতে গিয়ে তাদের মনে অবিশ্বাস অনৈক্যের বীজ বপন করা হয়েছিল।
এমন অদূরদর্শী পরিস্থিতি আর বিরোধ বিবাদ হিংসা হানাহানি নৈরাজ্য থেকে দেশকে বের করে এনে সকল দল মত ধর্ম বর্ণ বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সংশয়বাদী কিংবা নিজস্ব ভাষা ও সাংস্কৃতিক নৃগোষ্ঠী সকলকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন তাঁর যুগান্তকারী রাজনৈতিক দর্শন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে অবাধ লুটপাট, ব্যাংক ডাকাতি আর দুর্নীতির কারণে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দেশকে স্বাবলম্বী করে তুলেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আধিপত্যবাদী শক্তির থাবা মুক্ত করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশকে স্বীয় মর্যাদায় সমাসীন করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনকালেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব,নেতৃত্ব আর সফল কূটনীতির কারণে মিয়ানমার পিছু হটতে বাধ্য হয়। জিয়াউর রহমানের সময় বিশ্বের কমপক্ষে ২০ টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ।
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই সুসংহত হয়েছিল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নৈরাজ্য মুক্ত হয়েছিল দেশ। রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনগণ ফিরে পেয়েছিলো বাক- ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আইনের শাসন। শুধু তাই নয়, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সকল রাজনৈতিক দলকে দেশে স্বনামে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি জনগণের বাংলাদেশে জনগণের অধিকার রক্ষায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
৭৪ এর দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্ত করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিদেশে চাল এবং চিনি রপ্তানি করতে সমর্থ হয়েছিল। এখনো দেশের ফরেন রিজার্ভের অন্যতম প্রধান দুটি উৎস্য, গার্মেন্টস শিল্প এবং জনশক্তি রপ্তানি। এই দু’টি রপ্তানি খাতও স্বাধীনতার ঘোষকের অন্যতম সাফল্য। এভাবেই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি এবং তাবেদার গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেন।
বিএনপি সরকারের সাফল্য ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে বারবার ষড়যন্ত্রের থাবা বিস্তার করেছে গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তি। বিনাভোটে এই অপশক্তি বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে জনগণের ভোটের অধিকার। চারদিকে অবাধে চলছে চরম নৈরাজ্য দুর্নীতি লুটপাট টাকাপাচার। চলছে গুম খুন অপহরণ। ভুলুন্ঠিত মানবাধিকার। দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশের স্বার্থ নিয়ে ভাগ বাটোয়ারার হাট বসেছে। চলমান এই সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি-আদর্শ আজ আরো বেশি প্রাসঙ্গিক।
একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘অতীত নিয়ে সবসময় পড়ে থাকলে তোমার এক চোখ অন্ধ; অতীতকে ভুলে গেলে তোমার দুই চোখই অন্ধ। তাই দেশ বাঁচাতে মানুষ বাঁচাতে আর অন্ধ হয়ে থাকার সুযোগ নেই। সংকটকালে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, ৭১ সালের ২৬ মার্চ কিংবা ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশ এবং জনগণের সামনে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ শত্রুকে পরাজিত করতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল । আবার ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের আপামর সিপাহী- জনতা, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী তৎপরতা রুখে দিয়েছিলো।
৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেই পরাজিত অপশক্তির ক্ষমতা লোভের কারণে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ আবারো হুমকির সম্মুখীন। তাই দেশ এবং জনগণের স্বাধিকার রক্ষায় ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ শ্লোগানে আবারো আমাদেরকে ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে জেগে উঠতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, মহান রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মদিনে আমি আল্লাহর দরবারে তাঁর মাগফিরাত কামনা করছি। মহান নেতার জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষা এবং ভোটের অধিকার আদায়ের দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -জিন্দাবাদ
শহীদ জিয়া অমর হোক
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |