আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার : প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের পোশাক সামগ্রীসহ কাভার্ড ভ্যান জব্দ মনির হোসেন জীবন-র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪) এর একটি দল কুমিল্লা থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য চোরাই গার্মেন্টস মালামালসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এসময় বিপুল পরিমাণ কিটস পোশাক সামগ্রী ও একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- মোঃ হিমেল ওরফে দুলাল (৩৮), আবুল কালাম (৪০), মোঃ মহসিন আলী ওরফে বাবু (৩১), মোঃ আলামিন (৩০)। র্যাব বলছে, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের কয়েকটি চক্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সক্রিয় রয়েছে। প্রতি বছর শত কোটি টাকা মূল্যের বেশী পোশাক এসব চক্রের মাধ্যমে চুরি হয়ে যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় র্যাব-৪ এর কার্যালয়ে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, বুধবার দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি দল কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানার বেলতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। ডিআইজি মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অভিযানকালে তাদের নিকট থেকে আনুমানিক প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের চোরাইকৃত প্রায় ৪৫৭ কার্টুন ভর্তি গার্মেন্টস সামগ্রী একটি কাভার্ড ভ্যানসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোরচক্রের ৪ সদস্য’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় র্যাবের উপস্হিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে চালকসহ ৩/৪ জন ব্যক্তি কৌশলে পালিয়ে যায়। ইতোমধ্যে উদ্ধারকৃত গার্মেন্টস মালামালসমূহ সংশ্লিষ্ট পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাদের বলে সনাক্ত করেছে বলে জানিয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। র্যাব বলছে, গত ১৪ আগস্ট ২০২১ ঢাকা জেলার আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে গার্মেন্টস মালামাল বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নেওয়ার পথে কিছু কিছু কাভার্ড ভ্যান হতে প্রায় ৩০%-৪০% দামী গার্মেন্টস মালামাল উধাও হবার ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ফ্যাক্টরী থেকে মালামাল নেওয়ার সময় পথিমধ্যে নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানার একটি পরিত্যাক্ত রি-রোলিং মিলস্ এ কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে র্যাব-৪ এর একটি দল আন্তঃজেলা চোর চক্রের মূলহোতা মোঃ সিরাজুলসহ ৬ জনকে আটক করে। এঘটনায় আনুমানিক ৬ কোটি টাকা মূল্যের চোরাইকৃত ৪১ বস্তা ও ৫০৬ কার্টুন ভর্তি গার্মেন্টস সামগ্রীসহ কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। এঘটনার পরবর্তীতে মূলহোতা সিরাজুল গত তিন মাস পূর্বে হাজত থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও পূর্বের ন্যায় একই কার্যক্রম শুরু করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবকে জানান, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানীর গার্মেন্টস মালামাল চুরির ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এছাড়া তারা মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে একটি দুর্ধর্ষ চোরাকারবারী চক্র গঠন করে পরস্পর যোগসাজোশে বিগত কয়েক বছর ধরে গার্মেন্টস মালামাল কাভার্ড ভ্যান হতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় চুরি করে স্থানীয় মার্কেটে চোরাইপথে কমদামে বিক্রি করে আসছিল বলে স্বীকার করেছে। এতে করে দেশ প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি গার্মেন্টস মালিকগণ প্রতিনিয়ত বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছিল। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানান, এদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ হিমেল ওরফে দুলাল কনস্ট্রাকশন কাজের রড মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে পেশা পরিবর্তন করে কিছুদিন লেগুনার হেলপার এবং ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে ড্রাইভার হিসেবে বাস ও প্রাইভেটকার চালায়। এছাড়া আবু কালাম (৪০) পেশায় একজন দক্ষ মিস্ত্রি। সে মূলত কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ড ভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলতে পারদর্শী। সে এই কাজের বিনিময়ে প্রত্যেক চুরিতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা পেত। গ্রেফতারকৃত আসামী মহসীন আলী ওরফে বাবু ও আলামিন একজন গার্মেন্টস পণ্য লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক। র্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার আরও বলেন, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী থেকে মালামাল কাভার্ড ভ্যানে সিলগালা অবস্থায় সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে না নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে সুবিধাজনক সময়ে নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা বা নিকটবর্তী নির্জন এলাকা বা পরিত্যক্ত ভবনের ভিতর কাভার্ড ভ্যান পার্কিং করে রপ্তানিযোগ্য চোরাই গার্মেন্টস মালামাল কৌশলে চুরি করতো সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোর চক্রটি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, চুরির মাধ্যমে মোঃ হিমেল ওরফে দুলাল একটি কাভার্ড ভ্যান ক্রয় করেছে। এছাড়াও ঢাকা ও ভোলাতে তার একাধিক বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। পলাতক আসামী সিরাজের ঢাকাতে একাধিক বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর র্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি জিয়াউর রহমান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় আজ একটি চুরির মামলা দায়ের করা হবে। পরে তাদেরকে থানায় সোপর্দ করা হবে বলে জানান র্যাব-৪ এ কর্মকর্তা।