আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৯:৪৫
এস, এম, মনির হোসেন জীবন- রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায় হানিফ পরিবহন ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্টার লাইন পরিবহনের বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সর্দার সহ ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারের সময় তারা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল । এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, গুলি, বাসের টিকিট, মোবাইল ও ব্যাগ জব্দ করা হয়।
র্যাব বলছে, এই ডাকাত চক্রটি গত দেড় বছরে যাত্রীবেশে মহাসড়কে ১৫টির বেশি ডাকাতি করেছে। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কারাগারে গিয়ে তারা জামিন নিয়ে এসে আবারও ডাকাতির কাজে লিপ্ত হন। এছাড়া ঢাকা-দিনাজপুরগামী একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটান তারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্হ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গোপনে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৮ এর অপর একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- ডাকাত চক্রের সর্দার হিরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখ (৪০), হাসান মোল্লা ওরফে ইশারত মোল্লা (৩৯), আরিফ প্রামাণিক ওরফে আরিফ হোসেন (৩৩), নুর ইসলাম (৫৩), রাজু শেখ ওরফে রাজ্জাক (৫৪), রেজাউল সরকার (৪৯), মো. রতন (৩৬), শরিফুল ইসলাম (৩৯), মো. হানিফ (৪২) ও নজরুল ইসলাম (৩৫)।
তিনি জানান, এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, আটটি দেশি অস্ত্র, শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের চারটি টিকিট ও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকালে ঢাকা-রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল তারা।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা হতে গোপালগঞ্জগামী স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ৮ জুন ডাকাত মহব্বত ওরফে রয়েলকে লুন্ঠিত মালামালসহ রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরবর্তীতে রয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব গোয়েন্দারা বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায়। র্যাব জানতে পারে, ডাকাত হীরার নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটি গত এক মাসে ৩টি দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি করে। এই ডাকাত চক্রটি গত ১১ মে চট্টগ্রাম থেকে যশোর-বেনাপোলগামী হানিফ পরিবহন, ২৫ মে ঢাকা-রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস পরিবহন এবং ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে কোটালীপাড়াগামী স্টারলাইন পরিবহনে ডাকাতি করে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার মূখপাত্র বলেন, গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। এই দলের সদস্য সংখ্যা ১০-১৫ জন। গ্রেফতার ডাকাত সর্দার হীরা ও তার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লা বিভিন্ন ডাকাতির পরিকল্পনা করে থাকেন। ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলামুখী যাত্রীবাহী বাসে উঠে ডাকাতি করে আসছিল। গত দেড় বছরে তারা প্রায় ১০-১৫টি বাসে ডাকাতি করেছে। এর আগে চক্রটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও মামুন ট্রাভেলস, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও একতা ট্রাভেলসে ডাকাতি করে বলে স্বীকার করেছে।
র্যাব জানান, এছাড়া, চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় তারা বাসচালকের হাতে ও হেলপারের পেটে ছুরিকাঘাত করে। এছাড়াও এই চক্রটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফাল্গুনী ট্রাভেলস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও কণক পরিবহন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সুরভী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, সিলেট-রাজশাহী মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও রইস পরিবহন, ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে পাবনা এক্সপ্রেস ও সরকার ট্রাভেলস, রাজশাহী-বরিশাল মহাসড়কে সেবা গ্রীনলাইন পরিবহন ও তুহিন পরিবহনে ডাকাতি করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, তিনবছর আগে ঢাকা-দিনাজপুরগামী একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটায় বলে জানায়। ডাকাতির জন্য তারা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসগুলোকে টার্গেট করেন। এক্ষেত্রে চক্রটির কয়েকজন আগে থেকেই কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার মাধ্যমে বাসে ওঠেন। অন্য সদস্যরা পরবর্তী বিভিন্ন কাউন্টার থেকে টার্গেটকৃত বাসে ওঠেন। এছাড়াও, যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী ওঠায় তারা এসব বাসকে প্রাধান্য দিয়ে ডাকাতি করেন।
তিনি জানান, সাধারণত তারা মহাসড়কের নির্জন এলাকায় বাস ডাকাতির জন্য বেছে নিতেন। ডাকাতি করার পর তারা পুনরায় আশুলিয়ায় ফিরে আসেন। এছাড়া এ চক্রটি বিভিন্ন সময় বাড়িঘরে ডাকাতি করতেন বলে জানা যায়। ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত সবাই ডাকাতিসহ অন্যান্য মামলায় ২-৬ বছর মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার হিরা শেখ জানান, তিনি এই ডাকাত চক্রের অন্যতম মূলহোতা। সে দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে ডাকাতি করেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি বাস ডাকাতি তার নেতৃত্বে হয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবহনে ডাকাতিতে তিনি নিজে সশরীরে অংশ নেন। ডাকাতির সময় তিনি পরিবহনে উঠে প্রথমে বাস স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভীতির সঞ্চার করেন। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, মোবাইল এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করতেন। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে মোট ৭টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা দীর্ঘ দিন ধরে ডাকাতি করে আসছিল। এ চক্রটি প্রথমে তারা গাড়ির ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারকে অস্ত্রের মুখে গাড়ির পেছনের সিটে হাত-পা বেঁধে রেখে এরপর বাস ডাকাতি করতো।
দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে চক্রটি কী পরিমাণ সম্পদ গড়েছে জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করলেও চক্রের সব সদস্যর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় হাজিরাসহ বিভিন্নভাবে টাকা খরচ হয়ে যেত। এ কারণে তারা সেভাবে সম্পদ গড়তে পারেননি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,ডাকাত সর্দার হিরা শেখের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে মোট ৭টি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লার বিরুদ্ধ ডাকাতিসহ মোট ১০ মামলা রয়েছে।
এছাড়া এদের প্রত্যেকের নামে বিভিন্ন থানায় মাদক, ডাকাতি, ছিনতাই ও অস্ত্র আইনে আছে।
তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |