আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১২:৫৯
নজরুল ইসলাম মানিক, সাভার ও আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে সরকারি রাস্তার মধ্যে ছোট ছোট পিলার বসিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। আওয়ামীলীগের পদপদবির ক্ষমতার দাপটে বছরখানেক ধরে রাস্তাটি বন্ধ করে রাখায় বাসা বদল কিংবা বাড়ি নির্মাণের জন্য মালামাল নিতে পারছেন না সেখানকার বাসিন্দারা। রাস্তা বন্ধ করে রাখার অভিযোগ ওঠা হালিম পালোয়ান আশুলিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি প্রায় এক বছর আগে রাস্তাটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।
এদিকে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী কয়েক মাস আগে আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা সড়কের মাঝখানের পিলার অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় এক বছর আগে কাঠগড়া পশ্চিমপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হালিম পালোয়ান এলাকার বিভিন্ন প্লট মালিকদের কাছ থেকে ইট-বালু কেনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্য দাবি করায় প্লট মালিকরা নিজেদের সুবিধামতো অন্য জায়গা থেকে নির্মাণসামগ্রী কিনে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হালিম পালোয়ান প্রথমে বাইরে থেকে আনা নির্মাণসামগ্রীর গাড়ি আটকে চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হালিম পালোয়ান রাস্তা ব্যবহারের জন্য প্লট মালিকের কাছে তাদের মালিকানাধীন শতাংশ প্রতি জমির জন্য এককালীন ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করেন। তাতেও কাজ না হলে তিনি নির্মাণসামগ্রীর ট্রাক চলাচল বন্ধে মহল্লার প্রধান রাস্তার একাধিক জায়গায় কংক্রিটের ছোট ছোট পিলার বসান। সরেজমিনে সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় এমন একাধিক পিলার চোখে পড়েছে এই প্রতিবেদকের।
রাস্তার মাঝখানে পিলার স্থাপনের বিষয়ে প্লট মালিক সেন্টু মিয়া বলেন, ‘জমি কেনার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা হালিম পালোয়ান বিভিন্নভাবে আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করছেন। এখানে বাড়ি করতে হলে তার কাছ থেকে ইট-বালু নিতে চাপ দেন। কিন্তু দাম অতিরিক্ত চাওয়ায় আমরা বাইরে থেকে ইট-বালু কিনে জমিতে কাজ শুরু করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ট্রাক চলাচলের সরকারি রাস্তা ব্যবহারের জন্য প্রতিটি প্লটের মালিকের কাছে শতাংশ প্রতি ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু প্লট মালিকরা তার দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় তিনি রাস্তার মাঝখানে বেশ কয়েকটি পিলার তুলে দেন। যাতে এলাকায় কোনো গাড়ি ঢুকতে না পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার স্থায়ী একজন বাসিন্দা বলেন, ‘৪০ বছরের পুরনো চলাচলের রাস্তাটি এক বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন হালিম পালোয়ান। গেল বছরই সরকারের অনুদানে রাস্তাটিতে মাটিও ফেলা হয়েছে। এখানে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন প্লট মালিক আছেন, যারা জমি কিনে বসবাস করছেন। হালিম পালোয়ান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিরীহ প্লট মালিকদের ওপর জুলুম করছেন। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
কাঠগড়া এলাকার আরেক প্লট মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ নেতা হালিম পালোয়ানের বিষয়টি নিয়ে আমাদেরই প্রতিবেশী মামুন মোলা নামে একজন সাংবাদিক লেখালেখি করেছিলেন। এজন্য তিনি ওই সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংবাদিক মামুন মোল্লা বলেন, ‘কাঠগড়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় সামান্য জমি কিনে বাড়ির কাজে হাত দেওয়ার পর থেকেই হালিম পালোয়ান বিভিন্ন সময় চাঁদা দাবি করেন। এছাড়া বাড়ির নির্মাণসামগ্রী তার কাছ থেকে না নিলে কাজ বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেন। যারাই এখানে বাড়ির কাজে হাত দেন, তাদেরই নির্মাণসামগ্রী তার কাছ থেকে নিতে বাধ্য করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ ও লেখালেখি শুরু করলে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেন হালিম পালোয়ান।’
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হালিম পালোয়ান। তিনি বলেন, ‘যে জায়গায় ইটের পিলার দেওয়া হয়েছে সেটা কোনো সরকারি রাস্তা না। আমার জায়গা আমি বন্ধ করেছি।’
প্লট মালিকদের কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন কৃষক। আমার কোনো ইট-বালুর ব্যবসা নেই। আমি কেন প্লট মালিকদের কাছে চাঁদা চাইতে যাব?’
কাঠগড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হাজি হান্নান সরকার জানান, চলাচলের একমাত্র সরকারি রাস্তাটি খুলে দেওয়ার জন্য তারা সব প্লট মালিক মিলে গত মার্চে আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তা বন্ধ করে রাখা আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা সড়কের মধ্যকার পিলার অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি ঠিক মনে করতে পারছি না, তবে এমন কোনো অভিযোগ এলে অবশ্যই তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি খুব শিগগিরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব।’
Dhaka, Bangladesh শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:30 PM |
Isha | 6:50 PM |