আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৭:৪৮
নজরুল ইসলাম মানিক, সাভার ও আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : ঢাকার আশুলিয়ায় ডিইপিজেডের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে নতুন ইপিজেডের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় ব্যস্ততম নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কটিতে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের লক্ষ করে জলকামান থেকে গরম পানি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ,বুলেট ছোড়ে । পুলিশ ও শ্রমিক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় এক শ্রমিক আহত হলে পরে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান। পরিস্থিতি নিযন্ত্রনে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে।
রফিক, সুলতানা, রুমা, আকলিমা, তাসলিমা, জব্বার, সুজিত রায়, আকবর, সোহরাবসহ অন্যান্য শ্রমিকরা বাংলাদেশ দিনকালকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডিইপিজেডের পুরাতন জোনের লেনী ফ্যাশনে কাজ করে আসছেন প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক। এক মাসের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস চার্জের পাওনা পরিশোধ না করে হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। রোববার (১৩ জুন) সকালে লেনি ফ্যাশনের কয়েক শ শ্রমিক বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে নতুন ইপিজেডের সামনে উপস্থিত হয়। শ্রমিকরা আরোও জানায় ‘লেনি ফ্যাশন কারখানার মালিক একজন ভারতীয়। অনেক দিন আগে থেকেই কারণে মালিক ফ্যাক্টরিতে আসেন না। জানুয়ারি মাসের বেতনও শ্রমিকরা পাননি। তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও আটকে আছে। এই সকল দাবী নিয়ে শ্রমিকরা বেপজা কর্তৃপক্ষের নিকট দফায় দফায় আলোচনা হলেও কোন ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত হয়নি। কথা ছিলো ১৩ জুন রোববার ওই কারখানার শ্রমিকদের সাথে বকেয়া-বেতন প্রভিডেন্ট ফান্ডের পাওনা টাকা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বেপজা ও কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে ইপিজেডের গেটের সামনে সমবেত হয়ে ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। কিন্তু শ্রমিকদের কোন দাবীর বিষয় কনর্ণপাত না করায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় ব্যস্ততম নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কটি যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য পুলিশ অনুরোধ করেন। কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পাওয়ার দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে শ্রমিকেরা তিন থেকে চারটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এতে বিকেএসপির আম্পায়ারবাহী গাড়ির লুকিং গøাস ভেঙে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্পপুলিশ জল কামান ও ১০ থেকে ২০টি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এসময় শ্রমিকরা দৌড়ে ছুটাছুটি করে। এসময় শ্রমিক ও পুলিশের মাঝে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়াতে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কায় নারী পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত শ্রমিকের নাম জেসমিন আক্তার। তিনি ইপিজেডের গোল্ড টেক্স কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন।
নিহতের স্বামী মো. মাহবুব বাংলাদেশ দিনকালকে জানান, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করি। আমার স্ত্রী আশুলিয়া ইপিজেড গোলটেক্স গার্মেন্টসে চাকরি করে। সকালে গার্মেন্টসে যাওয়ার সময় বেতন ভাতার দাবিতে পুলিশ-শ্রমিক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পালাতে গিয়ে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় কিছু দেখতে পায়নি তিনি। পরে আইল্যান্ডের উপর পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসক জানান আগেই মারা গেছে জেসমিন।মাহবুব আরও জানান, তারা আশুলিয়ার মধুপুরে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার স্ত্রীর খুলনার ডুমুরিয়া থানার খাজুরিয়া গ্রামের আকাম সরদারের মেয়ে।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ দিনকালকে জানান, সকালে লেনি ফ্যাশনের কয়েক শ শ্রমিক বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে নতুন ইপিজেডের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় ব্যস্ততম এই সড়কটিতে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য বোঝালেও তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এক শ্রমিক নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। মৃত শ্রমিকের নাম জেসমিন আক্তার। তিনি ইপিজেডের গোল্ড টেক্স কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন। তিনি আরোও জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান জেসমিন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরোও জানান, স্থানীয় হাবিব ক্লিনিকি নামক একটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. বিল্লু জানান, বিক্ষোভের পর এক নারী শ্রমিককে অসুস্থ অবস্থায় সেখানে আনা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এসপি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমরা যখন ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছিলাম, আমাদের তখন করার কিছুই ছিল না। ওই শ্রমিক তখন দৌড়ে পালাতে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি খেয়াল না করায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লেগে তিনি মাথায় আঘাত পান। পরে এ ঘটনায় তিনি মারা যান বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই শ্রমিক লেনি ফ্যাশনে চাকরি করতেন না। তবে সকালে আন্দোলনের সময় ওই কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি যোগ দিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘সকালে ঘটনাস্থলে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য ছিল। আমরা শ্রমিকদের সড়ক থেকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়ার অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা শোনেননি। তার পরে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাস্তা ক্লিয়ার করা হয়েছে। ‘হালকা কাঁদানে গ্যাস ও পানি ছিটিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। তারা বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলেও তেমন কিছু হয়নি। অল্প সময় শুধু সড়কে যানচলাচল বিঘিœত হয়েছে।’ পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘লেনি ফ্যাশন কারখানার মালিক একজন ভারতীয়। অনেক দিন আগে থেকেই করোনার কারণে মালিক ফ্যাক্টরিতে আসেন না। ওই মালিকের দুটি কারখানায় প্রায় ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। ‘চলতি বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি থেকে কারখানা দুটি বন্ধ। জানুয়ারি মাসের বেতনও তারা পাননি। তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও আটকে আছে। এখন করণীয় কিছু নাই। ফ্যাক্টরি বিক্রি করতে হবে। এই মুহূর্তে সেই প্রচেষ্টাও চলছে।’ সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ ব্যাপারে বেপজার (ডিইপিজেড) জিএম আব্দুস সোবহান বাংলাদেশ দিনকালকে বলেন, ওই কারখানার শ্রমিকরা কোনো এক ফেসবুক গ্রæপের মাধ্যমে ভুল খবর জানতে পারে, তাদের আজ বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে। এরপর শ্রমিকরা কারখানার সামনে জমায়েত হলে মাইক দিয়ে তাদের জানিয়ে দেয়া হয় কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো বার্তা দেয়নি। তারা ভুল খবর পেয়েছেন। যত দ্রæত সম্ভব তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। এরপর শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। তিনি আরোও বলেন, ‘লেনি ফ্যাশন কারখানার মালিক একজন ভারতীয়। অনেক দিন আগে থেকেই করোনার কারণে মালিক ফ্যাক্টরিতে আসেন না। ওই মালিকের দুটি কারখানায় প্রায় ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। চলতি বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি থেকে কারখানা দুটি বন্ধ। জানুয়ারি মাসের বেতনও তারা পাননি। তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও আটকে আছে। এখন করণীয় কিছু নাই। ফ্যাক্টরি বিক্রি করতে হবে। এই মুহূর্তে সেই প্রচেষ্টাও চলছে।’
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |