বিডি দিনকাল ডেস্ক :- কয়েক দিন থেকে ভাবতেছিলাম কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানকে নিয়ে একটি লেখা লিখবো। কিন্তু লেখার আগেই তার বদলী জনিত বিদায় হয়ে গেল। খবরটা শুনে ব্যথিত হয়েছি। কেন না মহিবুল ইসলাম খানের বিদায় মানে কুড়িগ্রামের একজন মানবিক মানুষের বিদায়। তিনি শুধু পুলিশ সুপার ছিলেন না একজন মানবিক মানুষও ছিলেন।
জেলায় কর্মরত একজন সাংবাদিক হিসেবে এসপি মহিবুল ইসলাম খানের সাথে আমার মিডিয়া সম্পর্ক কখনই ভালো ছিল না। যখনই তার ভালো কাজ প্রচার করতে চেয়েছি তখনই কোন না কোন সমস্যার কারনে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
একটি কাজের কথা না বললেই নয়। চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে লংকাবাংলার পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়া হবে। নিউজটি কাভার করার জন্য আমাকে অফিস থেকে এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল। পরে চিলমারীতে এসে পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান, চিলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী বীর বিক্রম, লংকাবাংলা ফ্যাইনান্সের দুইজন অতিথি ও আমার ক্যামেরা পারসন জামিল ইসলামসহ একই নৌকার যাত্রী হয়েছিলাম। সেখানে জানতে পারলাম পুলিশ সুপার সহোদয় ও তার স্ত্রী যিনি রাজারহাট উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা তাদের দু’জনের চেষ্টায় করোনাকালীন সময়ে চরাঞ্চলের ১ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তার প্যাকেজ দেয়া হবে। তারা দু’জনে মিলে লংকাবাংলার কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে এই খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন এবং নিজের উদ্যোগে প্যাকেজে বস্তা গুলো দুর্গম চরাঞ্চলে পৌঁছানোসহ নিজেই উপস্থিত থেকে বিতরণ করেছেন।
এরকম অসংখ্য উদাহরন রয়েছে কুড়িগ্রাম থেকে সদ্য বদলী হওয়া পুলিশ সুপারের। এছাড়া যখন যেখানে অসহায় মানুষের খোঁজ পেয়েছেন তার পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
ছোট একটি অসুস্থ শিশুর চিকিৎসায় সহযোগীতার জন্য আমার ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। শিশুটির চিকিৎসা করানোর জন্য তার বাবার কোন সামর্থ ছিল না। পোষ্টটি পুলিশ সুপারের দৃষ্টি গোচর হওয়ার পর তিনি সহযোগীতা করার জন্য অফিসে ডেকেছিলেন। কিন্তু দেখা করার আগেই শিশুটি মৃত্যু বরণ করেছে। তিনি শিশুটির মৃত্যুর খবর খবর পেয়ে তার কষ্টের অনুভুতির কথা আমাকে জানিয়েছেন। তিনি আসাকে আরো জানিয়েছিলেন তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলেছেন রেখেছেন যিনি শিশুটির পুরো চিকিৎসার দায়িত্ব নিবেন। তিনি আরো জানিয়েছিলেন যে শীতে যাতে করে জেলার অসহায় দরিদ্র মানুষ কষ্ট না পায় সেজন্য কিছু শীত বস্ত্র দেয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তিনি।
যাই হোক আমার জানা মতে তিনি মানব দরদী মানুষ হওয়ার পাশাপাশি জেলার আইন শৃংখলা রক্ষা ও যেকোন ধরনের দুর্ণীতির বিরুদ্ধে অনড় ছিলেন। সৎ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।
সর্বশেষ চিলমারী ঘাটে দেখা এবং কথা হয়েছিল এই মানবিক পুলিশ কর্কর্তার সাথে। তিনি রৌমারী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ফিরছিলেন আর আমরা কয়েকজন সাংবাদিক নির্বাচনী নিউজ কাভার করার জন্য রৌমারীতে যাচ্ছিলাম। পরে নৌকায় দেড় ঘন্টার নদী পথ পাড়ি দিয়ে রৌমারী এসে প্রেস ক্লাবে বসেই তার বদলীর খবরটা পেলাম। খারাপই লাগলো। ভাবলাম তার মত মানবিক এবং সৎ মানুষদের খুব বেশি প্রয়োজন দেশের জন্য। বদলীর খবরের কিছু সময় পর জানতে পারলাম তার বদলী হয়েছে পাবনায়। যেখানেই খাকুক ভালো মানুষরা ভালোই থাকবেন। মানবিক মানুষরা চিরদিন মানবিকই থাকবেন।
লেখক :বাদশা সৈকত সাংবাদিক
(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত )