আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:২৫
শায়রুল কবির খান:- মওদুদ আহমদের মতো দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদকে নিয়ে লিখার মতো যোগ্যতা যে আমার নেই এই কথাটা শুরুতেই বলে নেওয়া দরকার। এটাও উল্লেখ করতে চাই যে, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং-এ কাজের বদৌলতেই মূলত মওদুদ আহমদের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। কোনো কোনো সময়ে চা খাওয়ার কথা বলে অনেক আন্তরিকভাবে বসতে বলতেন। এমন বড় মাপের একজন রাজনীতিবিদের সান্নিধ্য পাওয়া অবশ্যই আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার।
চা খেতে খেতেই তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কোনো কোনো কথা, কোনো কোনো স্মৃতির কথা বলতেন। সেসব নিয়ে নানা পর্যালোচনা সামনে নিয়ে আসতেন।
তার কথা বলার ধরন ছিল মনোমুগ্ধকর। মাঝে মধ্যে কোনো একটি বিষয় আরও সহজ করে বুঝবার আগ্রহ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলে তিনি আরও চমৎকারভাবে সেসব বুঝিয়ে দিতেন। অনেক যুক্তি দিয়ে একই বিষয় ভিন্ন ভিন্নভাবে তুলে ধরতেন। অত্যন্ত মেধাবী ও অভিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে তার স্বরূপ সেই ভঙ্গিমায় ফুটে উঠত।
একদিন বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত আমার একটি লেখা তাকে দেখতে দিয়েছিলাম, তিনি লেখাটি হাতে নিয়ে একঝলক দেখে, নিজে শিরোনামটা উচ্চারণ করে আমাকেই লেখাটা শব্দ করে পড়তে বলেন। তার সামনে বসে নিজের লেখা পড়তে গিয়ে নার্ভাস ছিলাম। সেটা দেখে আমাকে বললেন, তোমার লেখার বিষয়বস্তু আমার পছন্দ হয়েছে আমি সময় করে পড়ে নেব।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ছিলেন অত্যন্ত নিয়মনিষ্ঠ। গুলশানে চেয়ারপারসনের অফিসে বিএনপির কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে কিংবা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসার আগে ফোন করে বলতেন, আশা করি সময় মতো পৌঁছে যাব।
বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি অগাধ আস্থা রাখতেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগদানের পর সাংবিধানিকভাবে একটি বিষয়ে তিনি ঐতিহাসিক সাফল্যও পেয়েছিলেন। বিএনপির দুজন সাংসদ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিত্ব নেওয়ার পর তিনি মামলা করে প্রায় এক বছরের বেশি সময়ে শুনানির মধ্য দিয়ে তার পক্ষেই রায় এসেছিল।
রাজশাহীর চারঘাটের এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের দুজন সাংসদের বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়েছিল। মামলায় হেরে যাওয়ায় তাদের সদস্যপদ শূন্য হয়ে যায়। এই সাফল্যের নায়ক ছিলেন তিনি। সে সময়ে দেশে বেশ আলোড়ন তোলা এই ঘটনায় তিনি আনন্দিত ছিলেন। কিন্তু জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে নিজের বাড়ির মামলায় পরাজিত হয়ে গিয়েছিলেন মওদুদ আহমদ।
আদালতের রায়ের পর যে-দিন মওদুদ আহমদের বাড়ি দখল নিতে কর্তৃপক্ষ এলো সেদিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে একটি ইফতার মাহফিলে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি আসেন। দেখলাম মওদুদ আহমদ একদম যেন পাথরের মূর্তি হয়েই নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
সেখানে উপস্থিত আমাদের সবার চোখে তখন ভেসে উঠেছিল আরেকটি দিনের কথা। সেদিনটিতে সরকার জোরপূর্বক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিতাড়িত করেছিল।
মওদুদ আহমদ যদি কোনো সময়ে কাজের ব্যস্ততার কারণে ফোন করতে ভুলে যেতেন, তখন পৌঁছেই গাড়ি থেকে নেমে দেখামাত্রই আমার গায়ে হাত দিয়ে বলতেন আজ ফোন করিনি, তোমার কি মনে হয়েছিল আমি আসব না? আমি উত্তর তৈরি করে ‘না স্যার, তা মনে হয়নি’ বলার আগেই তিনি আবার বলতেন দেশের খবর কী? বলতামস্যার এই খবর তো আমরা আপনাদের কাছে থেকে জানব।
তখন তিনি একটা কথা স্পষ্ট করে বলতেন ‘দেশের যে নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে তা সহজে পূর্ণ হবে না। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান দুর্বল থেকে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমার জীবদ্দশায় হয়তো দেখে যেতে পারব না তার গুণগত পরিবর্তন। ’
বলতেন, ‘তোমরা এই প্রজন্মের। চেষ্টা করো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে সংগ্রামটা করতে, যদি একনিষ্ঠভাবে করে যেতে পার তাহলে হয়তো তোমাদের সময়ে তার সুফল আসতে পারে। ’
আরও একটি কথা প্রায়ই বলতেন তিনি ‘যে জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে সেই জায়গাটা যেন দুর্বল না হয় সব সময় সতর্ক থেকো। দীর্ঘদিন এক জায়গায় একটি নীতি নিয়ে বসবাস করতে পারলে দেখবে এমনিতেই তার ভিত মজবুত হয়ে যায়। ’
মওদুদ আহমদকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে তিনি এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার একান্ত সচিবের সঙ্গে আমার প্রতিদিন যোগাযোগ হতো। তিনিও তার মাধ্যমে আমার খোঁজ রাখতেন। দুদিন বলেছেন, তিনি সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখা করি। দুর্ভাগ্য আমাদের তিনি সুস্থ হয়ে আর ফিরে আসতে পারলেন না। তার সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা করা হবে না। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
লেখক : বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |