আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:৪২
সাইফ মাহমুদ জুয়েল:- ৭১ এর উত্তাল দিন। মা নাকি মাতৃভূমি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রটি মাকে উপেক্ষা করে মাতৃভূমির ডাকে সাড়া দিয়ে পালিয়ে যুদ্ধে গেল।
মেজর হায়দার এর অধীনে টানা তিন সপ্তাহ ধরে ২ নং সেক্টরের “মেলাঘর” ক্যাম্পে গেরিলা ট্রেনিং নিচ্ছে ৪০ সদস্যের একটি গেরিলা দল। দলটি SMG,SLR এবং চাইনিজ রাইফেল চালনা আর গুপ্ত হামলায় বেশ পারদর্শী।
নভেম্বর,১৯৭১। পিলখানা বিডিআর গেটে সার্ভের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানের মালিক মজিদ সাহেব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছেন তার অফিসের ইঞ্জিনিয়ার মান্নান এবং আনিসের সহায়তায় অপরিচিত একটি মধ্যবয়সী ছেলে প্রতিদিন দিনমজুর সেজে পিলখানার ভেতরে ঢুকে। ছেলেটির ছোট গড়নের দেহ অথচ চোখদুটো ভয়হীন বাঘের মতো। প্রতিদিন সে দিনমজুর সেজে পিলখানার ভিতরে ঢুকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কি যেন দেখে। ই পি আর এর অবজার্ভেশন পোস্ট গুলো দেখলেই ছেঁড়া গেঞ্জি আর গাভর্তি বালুমাখা দিনমজুর ছেলেটির চোখ দুটি বড় হয়ে ওঠে!
কয়েকদিন পরের ঘটনা। দিনমজুর ছেলেটি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।কিন্তু আজ আর ভিতরে ঢুকতে পারছে না।মজিদ সাহেবদের সার্ভের কাজ শেষ। চোখেমুখে কী এক ভয়ানক যন্ত্রণা নিয়ে চলে গেল ছেলেটি।
দিন গড়িয়ে রাত। পিলখানার আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন গেটে প্রচন্ড শব্দে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ। ভিতর থেকে বিস্ফোরণের কাছাকাছি স্থান লক্ষ করে একের পর এক গুলি ছোড়া হচ্ছে। একটি গুলি এসে দেয়ালে লেগে গতিপথ পরিবর্তন করে এক ছোট্টাকায় দিন মজুরের পায়ে লাগলো। মুখ চেপে চিৎকার দিল দিনমজুর ছেলেটি, সেই দিনমজুর ছেলেটি! দুটো গ্রেনেডভর্তি ব্যাগটি রেখেই আহত পায়ে দৌড়াতে লাগলো ছেলেটি।
ই পি আর বাহিনীর ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তায় নেমে এসেছে কিছু মানুষ। দৌড়াতে গিয়ে মুসলীম লীগের ছাত্রনেতা মাহবুবুল হক দোলনের গায়ে ধাক্কা লাগলো ছেলেটির। অবাক হয়ে দোলন বলবো,” আরে, খোকা না? একী হাল তোর!”
দ্রুত বিদায় নিয়ে মানুষের মাঝে মিশে গেল দিনমজুরের আদলে গেরিলাযোদ্ধা পুরান ঢাকার খোকা, সাদেক হোসেন খোকা।
গতকাল ঐ খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে পুলিশের এক সদস্য “মাদারচো..আর খান…পোলা” বলে গালি দিয়েছে। ইশরাক ভাইয়ের অপরাধ সে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি প্রতিবাদে জনসচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ করছিলো।
একবার একটি টক’শোতে গেরিলাযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সে কিভাবে এত নিখুঁতভাবে পাকিস্তানি শিবিরে হামলাগুলো করতো। তার উত্তরটা এখনো মনে আছে,
“আমাদের কিছু টেকনিক ছিল।যেমনঃ
★হিট এন্ড রান
★জনসাধারণের মাঝে থেকে হামলা
★শত্রুকে অস্থির করে ফেলা
★সাথে সাথে প্রমান মুছে ফেলা
★সাফল্যে অতি উৎফুল্ল না হওয়া”
গোলামীর পিঞ্জিরায় আবদ্ধ,জ্ঞানপাপী, আধুনিক অজ্ঞাবাহ দাসগুলো(কিছুসংখ্যক) কর্মজীবনে কখনো “হিট এন্ড রান” থিউরি এপ্লাই করেছে কিনা জানা নেই, গেরিলা যোদ্ধাদের অসীম বীরত্বের কাহিনি কখনো শুনেছে বা পড়েছে কিনা তাও জানি না। তবে তারা এতটুকু জেনে রাখুক ,শুনে নিক যে, গেরিলাযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার যোগ্য উত্তরসূরী ইশরাক হোসেন ভাই জ্ঞানপাপীদের উদ্দ্যেশ্যে বলেছেন,
“এদেশের সরকার পরিবর্তন হবেই,
তখন আপনাদের এই অপরাধের
জবাবদিহিতা করতে হবে।
এই কোর্টেই আপনাদের বিচারের
মুখোমুখি করাবো,
ইনশাআল্লাহ।”
উৎসর্গ-মুক্তিযুদ্বার পরিবার সাদেক হোসেন খোকার বীর সন্তান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের জনতার মেয়র ইঞ্জিনিয়ার ইসরাক হোসেন
(লেখক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ,সাংগঠনিক সম্পাদক , জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি)
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |