আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৩:৫২
নজরুল ইসলাম মানিক, সাভার ও আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : ঢাকার সাভারে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রহস্য দেখছে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক ও ফায়ার সার্ভিস। কারখানাটির শ্রমিকদের অভিযোগ, আগামী ১৩ এপ্রিল আমাদের বেতন পরিশোধের কথা রয়েছে। কিন্তু আজকের ঘটনায় মালিকপক্ষ বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেখিয়ে আমাদের বেতন পরিশোধ না করার অজুহাত দেখাতে পারে। শ্রমিক নেতাদের দাবি, সাত তলার আগুন হঠাৎ নিচতলায় চলে আসাটা রহস্যজনক। শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ সংক্রান্ত অন্য কোন বিষয় আছে কি না তা তদন্ত করে দেখা উচিত। ফায়ার সার্ভিস বলছে, সাত তলার ছাদে থাকা গোডাউনের আগুন তারা প্রায় এক ঘন্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিন্তু এর পরেই হঠাৎ নিচতলার ওয়্যারহাউজ কক্ষে আগুন লেগে সব পুড়ে যায়। যা রহস্যজনক। তবে মালিকপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে কিংবা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য, শনিবার ভোরে আগুনের খবরে ৫.৪৫ এর মধ্যে ফায়ার ইউনিট কারখানায় পৌছায়। জিরাবো এলাকার সিলভার অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সাত তলায় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ছয়টি ইউনিট। মূলত কারখানা কতৃপক্ষ সাত তলার ছাদে টিনশেডের মাধ্যমে গোডাউন তৈরি করেছে। চার হাজার বর্গ ফুটের গোডাউনটির এক পাশে অল্প পরিসরে ছিল ক্যান্টিন। ছাদের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা অবস্থায় ঘন্টা খানেক কাজ করার পরেই নিচতলার ওয়্যারহাউজে আবারও আগুন লেগেছে বলে জানায় উপস্থিত কারখানার লোকজন। এরপর প্রায় আধা ঘন্টা চেষ্টা করে দুই হাজার স্কয়্যার ফুট ওয়্যারহাউজ কক্ষের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ডিইপিজেড, সাভার ও উত্তরা ফায়ার সার্ভিসের মোট ছয়টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে সকাল ৮টায়। তবে অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক ভাবে জানা যায়নি।
কারখানাটির অপারেটর মমিন শেখ ও আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমাগো বেতন দেয়ার কথা আছিল ১০ তারিখ। এখন আমাগো বেতন দেয়ার কথা ১৩ তারিখ। আইজকা ফ্যাক্টিরির এই অবস্থা এখন আমাগোতো বেতন দিব না। ক্ষতি হইছে মনে করেন অল্প। কিন্তু বিশাল আকারে ক্ষতিপূরণ দেখায় মনে করেন আমাগো বেতন না দিয়া গেটে তালা দিয়া দিব। প্রত্যেক মাসে আগে সেলারি দিত ১৫ তারিখ। তারপর আমরা বলেকয়ে ১০ তারিখ আনছি। এখন বেতন না পাইলে আমাগো মনে করেন থালা-বাটি নিয়া পথে নামতে হইবো।’
স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের আশুলিয়া শাখার সভাপতি আল কামরান বলেন, ‘আজকের আগুনের চিত্রটা একটু ভিন্ন ধরণের। আগুন লাগার খবরে আমরা সকাল থেকেই কারখানার সামনে। আমাদের একটা প্রশ্ন আগুনটা লাগলো উপরে। সেই আগুনটা কিভাবে আবার নিচে চলে আসল। যেহেতু এই কারখানায় অনেক শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে। আর যেহেতু করোনা আর শ্রমিকদের বেতন সংশ্লিষ্ট বিষয়। তাই অন্য কোন বিষয় আছে কি না এটা তদন্ত করে দেখা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের সিলভার গ্যালারি নামে আরেকটি কারখানা আছে। ওই কারখানাটায় আগামী ১২ এপ্রিল বেতন দেয়ার কথা। কিন্তু ওই কারখানাটি কিন্তু তারা ইতোমধ্যেই ক্লোজ করছে।’
ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সাত তলা বিল্ডিংয়ের সাত তলা বিল্ডিংয়ের উপরে তারা এক শেড করছে। চার হাজার স্কয়ার ফুটের কিছু অংশ খালি ছিল। এর মধ্যে কিছু অংশে গার্মেন্টের মালামাল রাখত। আর কিছু অংশে ওয়ার্কারেদের খাওয়ার ক্যান্টিন। আরেকটা আগুন নিচতলার দুই হাজার স্কয়ার ফুটের মালামাল রাখা ছিল সেখানে লাগছে। কিছু ফেব্রিকস রাখা ছিল সেগুলো পুড়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রথমে সাত তলায় আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলাম। এক ঘন্টা পর নিচতলার ওয়্যারহাউজ থেকে ধোয়া বের হচ্ছিল প্রচুর। তখন দেখলাম যে, সেখানেও আগুন। তখন আমি একটু বিপদেই পড়েছিলাম।’
শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল শনিবার থেকে প্রায় সাত মাস আগেও নিচতলায় দুই হাজার স্কয়ার ফুটের জায়গায় ওইখানের মধ্যে আগুন লাগছিল। এই ভবনে আমি গতবার রমজানের সময় আসছিলাম।’
সাত তলা থেকে আগুন কিভাবে নিচতলায় ছড়ালো এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় তাদের যে ড্রাক লাইন গুলোরে ফাঁক দিয়ে (ইলেকট্রিক্যাল লাইন) আগুন নিচতলায় আসতে পারে। তবে আমরা তদন্ত করে বুঝতে পারব কিসের কারণে। এটা আপাতত নিশ্চিত না। কি কারণে আগুনটা লাগছে সেটা আমিও স্পেসিফিক বলতে পারতেছি না। এটার একটা তদন্ত কমিটি হবে অবশ্যই। যদি এরা (কারখানা কতৃপক্ষ) আবেদন করে তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি হবে। আর যদি তারা না করলে সেটা আমাদের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ ডিসিশন নেবে।’
এদিকে অগ্নিকান্ডের কারণ জানতে গেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কারখানাটির মো. লিটন নামে এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ করেন।
তবে সিলভার এ্যাপারেলস কারখানার ডিএমডি এস এম শাহজামান বলেন, ‘আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। উপরে প্রায় ১৫-২০ লাখ পিস মাল ছিল কাটিং করা। কোন লোকজন কারখানায় ছিল না। তাই কেউ আহত হয়নি। আমরাও ইনভেস্টিগেশন করতেছি।’
নাশকতা বা পরিকল্পিত কি না এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমি কখনই এটা মনে করি না। তারপরও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কি কারণে কিভাবে হইছে আমি বুঝতে পারব। তবে ইলেকট্রিক লাইন থেকেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।’
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:29 PM |
Isha | 6:49 PM |