- প্রচ্ছদ
-
- আর্ন্তজাতিক
- গণবিক্ষোভে রাষ্ট্রীয় বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দেশত্যাগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ
গণবিক্ষোভে রাষ্ট্রীয় বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দেশত্যাগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ
প্রকাশ: ১২ জুলাই, ২০২২ ৩:৫২ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিনিধি:- লুটপাট ও অপশাসনের অভিযোগে প্রচণ্ড গণবিক্ষোভে রাষ্ট্রীয় বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও শ্রীলঙ্কার সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ভাই বাসিল রাজাপাকসের দেশত্যাগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। কলম্বোয় অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘সিল্ক রুট প্যাসেঞ্জার ক্লিয়ারেন্স টার্মিনাল’ দিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেছিলেন তারা । ইমিগ্রেশেন কতৃপক্ষের অনীহায় তারা দেশত্যাগ করতে পারেনি নি। দুবাইয়ের উদ্দেশ্য যাওয়ার জন্য তারা এয়ারপোর্টে হাজির হয়েছিলেন। তাদের জন্য বিমানও অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন শাসক পরিবারে দুই ভাই।
যাত্রীদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে দেশ ত্যাগ করতে দিতে অস্বীকার করেন বলে শ্রীলঙ্কার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মিরর নিশ্চিত করেছে। ইমিগ্রেশন সূত্রের বরা দিয়ে পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে গত রাত ১২টায় বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন সাবেক মন্ত্রী বাসিল।
দেশটির গণমাধ্যম কলম্বো গেজেটের খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার (১২ই জুলাই) গোতাবায়ার ছোটভাই ও দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে গোপনে দেশ ছেড়ে দুবাই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দেশটির সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বাধার কারণে তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ৭৪ বছর বয়সী গোতাবায়া রাজাপাকসে স্ত্রীসহ কলম্বোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে সামরিক ঘাঁটিতে ছিলেন। তিনি সোমবার (১১ জুলাই) রাতে সেখানেই ছিলেন। সেখান থেকেই আজ মঙ্গলবার বিমানবন্দরে আসেন।
তাদের জন্য সংরক্ষিত ফ্লাইটটি রাত সোয়া তিনটায় দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল। তবে অভিবাসন কর্মকর্তারা দেশত্যাগের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। এতে ব্যর্থ চেষ্টা করে তাদের ফিরতে হয়েছে বিমানবন্দর থেকে।
পদত্যাগপত্রে সই করলেন গোতাবায়া:শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তার পদত্যাগপত্রে মঙ্গলবার সই করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। তবে বুধবার ১৩ জুলাই সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হবে।
শ্রীলংকা পার্লামেন্টের স্পিকার তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম গুলোর খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরের পর এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেটি পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
স্পিকার মহিন্দা ইয়াবা আবেবর্ধনেকে পদত্যাগপত্রটির বিষয় অবগত করা হয়েছে। তিনি বুধবার গোতাবায়ার পদত্যাগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন।
গত শনিবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ রাজধানী কলম্বোতে জড়ো হন। প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগেরও দাবি জানান তারা। এক পর্যায়ে হাজার হাজার লোক রাষ্ট্রপতির ভবনে ঢুকে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও বিক্ষোভ করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। গণরোষে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী দুইজনই পদত্যাগ করতে সম্মত হন। বিক্ষুব্ধ মানুষ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশের পর উল্লাস করতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং স্থিরচিত্রে।
শ্রীলঙ্কায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তাঁর ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও তারা এক পারিবারিক শাসন চাপিয়ে দেন জনগণের উপরে। পারিবারিক স্বেচ্ছাচারী শাসন-শোষণ ও লুটপাটে দেশের অর্থনীতি দেউলিয়া হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ শূন্যের ঘরে নেমে আসে। বন্ধ হয়ে যায় আমদানি। রিজার্ভ না থাকায় আমদানি ব্যায় ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর ঋনের টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দিতে হয়। এক পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় পুরো রাষ্ট্রকে। এতে দেশের ভেতরে চরম খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর মহাসঙ্কট দেখা দেয়। এক পর্যায়ে পারিবারিক শাসন ও লুটপাট থেকে রেহাই পেতে রাজপথে নেমে আসে সাধারণ মানুষ। প্রচণ্ড গণবিক্ষোভে গত ৯ মে পতন হয় প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের। এর দুইমাস পর পতন হলো তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার। দুইভাইয়ের এই পরিণতি হয়েছে গণবিক্ষোভে।
গোতাবায়ার বিদায়ের পর শ্রীলঙ্কায় সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
Please follow and like us:
20 20