আজ সোমবার | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১:১৫
বিডি দিনকাল ডেস্ক- গণ-পেনশনের নামে সরকার আরেকটা ‘লুটের কায়দা-কানুন’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সর্বব্যাপী সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে শনিবার বিকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আজকে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে একটা লুটেরার দলের পরিণত হয়েছে। এই লুটপাট করে, সম্পদ লুট করে বিদেশে পাঁচার করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, এখন নাকী গণ-পেনশন দিবে, মানুষকে পেনশন দেবে।”
‘‘ আমরা যেটা বুঝতে পারছি- এটা আরেকটা লুটে কায়দা-কানুন তারা করতে যাচ্ছে। মানুষের কাছ থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে টাকা নেবে। ৬০ বছর পরে নেবে, এরপর মধ্যে মারা গেলে আর ফেরত পাবে না। পরিস্কার করে কিছু বলছে না। যদিও এটা পাস হয়নি কিন্তু এই প্রস্তাব তারা নিয়ে এসেছে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন শুধু মাত্র কি করে লুট করা যায়, কি করে মানুষের পকেট কাটা যায় সেই ব্যবস্থা তারা করেছে।মানুষের কোনো সমস্যার সমাধান তারা করতে পারছে না।”
‘‘এই সরকারের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে লুটপাট করছে না। তারা মানুষকে বিপদে ফেলছে। আজকে সমস্ত বাংলাদেশে একটাই সমস্যা। সমস্যা হচ্ছে-আওয়ামী লীগ। মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করতে শুরু করেছে। মানুষ গালিও দেয়- এই তুই মানুষ না আওয়ামী লীগ। এটা হয়ে গেছে সব জায়গায়-গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতি’ এবং ‘উপজেলা পর্যায়ের ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি’র দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
বিএনপি দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতির প্রতিবাদে সারাদেশে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১১ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে।
ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে এই সমাবেশ হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের চারপাশ, তোপখানা রোড, সেগুন বাগিচা, ঈদগাহ সড়কের ছোট ছোট মিছিল নিয়ে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেষ্টুন নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেয়।
‘দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমরা দেখছি এখন প্রতিদিন এই যে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে ট্রাকে করে সেখানে প্রতি লাইন লম্বা থেকে লম্বা হচ্ছে। সেই লাইনে মধ্যবিত্তরাও যাচ্ছেন কারণ তাদেরও প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে গ্যাসের দাম প্রতিবছরে ২/৩ বার করে বাড়ানো হচ্ছে, আজকে বিদ্যুতের দাম ধাপে ধাপে প্রতি বছর ২/৩/৪ বার করে বাড়ানো হচ্ছে, আজকে পানির দাম বার বার করে বাড়ানো হচ্ছে।”
‘‘ এর কারণ একটাই- এই সরকার তার নিজের এবং সমস্ত প্রশাসন যন্ত্রকে দুর্নীতির একটা স্বর্গ রাজ্য বানিয়ে দিয়েছে। পানির দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে যে, ওয়াসার যে এমডি আছেন তাকে তিনবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার বেতন কত জানেন? কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। এই যে অপচয়, এই যে একজন বিশেষ লোককে দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়া সেই কাজটা করছে সরকার। আজকে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি একটা সর্বগ্রাসী ব্যাথিতে পরিণত হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ চালের দাম বাড়ছে কেনো? উতপাদনের তো ঘাটতি আছে। প্রতিবছর সরকারকে ৫৭ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। মিথ্যা কথা বলেছে তারা সর্বক্ষন মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। আপনারা শুনেছেন যে, বিদ্যুতের দাম কেনো বাড়াতে হচ্ছে। যে চুরিগুলো তারা করেছে, কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট অথবা বিদ্যুতে দ্রব্যসামগ্রি আমদানি করতে যা ব্যয় করছে তা এতো বেশি পরিমান দুর্নীতি হচ্ছে সেখানে দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকছে না।”
‘‘ আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী ও এক উপদেষ্টার টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়ে গেছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে যিনি এই সরকারের আইটি উপদেষ্টা সেই সঙ্গে তিনি বিদেশে থাকেন, তার একটা বিশেষ প্রজেক্ট নিয়ে তারা কথা বলছিলেন।আমরা বার বার বলেছি, এই বিষয়টা পরিস্কার করে বলতে হবে, জনগনকে জানাতে হবে।”
ফখরুল বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নিজেরা পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, গণতান্ত্রিক লড়াই করেছে-এটা সত্য কথা। তাদেরকে আমি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই, এই গুম করে, খুন করে, হত্যা করে, নির্যাতন করে কোনো দিন জনগনের আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। কোনো যাইও নি।”
‘‘ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভুর্তকি দেওয়া আর যাবে না। আমি বলতে চাই, দরকার হবে না তো। চুরি বন্ধ করেন, লুট বন্ধ করেন ভুর্তকি দিতে হবে না। চুরি করছেন, লুট করছেন ভুর্তকি দিতে হয়।”
দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি আন্দোলনে সকলকে মাঠে নামার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আজকে সর্বত্র একটাই আওয়াজ- হাসিনা তুমি বিদায় হও, এই জনগনকে মুক্তি দাও। আমরা পথে নেমেছি, রাস্তায় নেমেছি।’’
‘‘ জনগনের কাছে আবেদন জানাতে চাই যে আসুন আজকে আপনার শরিক হউন। তরুন যুবকদের আহবান জানাতে চাই, জেগে উঠুন দেশ মাতৃকার ডাকে।সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহবান জানাতে চাই, আসুন এক সাথে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করি। বিজয় আমাদের অবশ্যই হবে ইনশাল্লাহ।”
‘জনগনের অর্থ ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ পত্রিকায় দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের একটি সংস্থা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সেনশন দিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এটাকে দূর করার জন্য তারা(সরকার) লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। মাসে ২০ হাজার ডলার দিতে হবে তাদের। এতোদিন তো লম্বা লেকচার মারলেন, অনেক কথা বললেন। এখন কেনো এই লবিস্ট নিয়োগ করছেন।”
‘‘ কারণ একটাই যে, জনগনের টাকা, ট্যাক্সের টাকা তা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জনগনের ওপর নির্যাতন করা, গুম করা, খুন করা তাকে হালাল করছেন, তাকে আড়াল করতে চাইছেন। ওই যে কয় না- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, সেই ধর্মের কল বাতাসে নড়ছে। এখন চর্তুদিকে ঘন্টা বাজতে শুরু করেছে। আর উপায় নাই। যতই ওলট-পালট করেন, যতই লবিস্ট নিয়োগ করেন আর যতই পাল্টা ডিগবাজী দিতে থাকেন, সুন্দর কথা বলেন লাভ নেই।”
মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনুসহ কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ এই সরকারের অপশাসন, এই সরকারের দুর্নীতি, এই সরকারের অত্যাচার, এই সরকারের সিন্ডিকেট আজকে বাংলাদেশের আজকে জনগনের নাভিশ্বাসে কারণ হয়েছে। আজকে ট্রাকের থেকে খাদ্য ক্রয়ের জন্য হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে, মধ্যবিত্ত মানুষ গরীব হয়ে গেছে, দারিদ্র্যের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
‘‘ আর অন্য দিকে এই সরকারের দুর্নীতির মাত্রা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকে ধনী আরো ধনী হয়েছে, গরীব আরো গরীব হয়েছে। এটা আমাদের কথা নয়, আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতি এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়। হঠাত করে লাফিয়ে লাফিয়ে তেলের দাম বাড়ছে, চালের দাম বাড়ছে। কী বাড়ছে না? ধনী থেকে দরিদ্র পর্যন্ত কেউ এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সকলেই ভুক্তভোগী।”
‘‘ তবে একটা জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে না- সেটা হলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে না। এদেশের মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নাই। হয় গুলি খেয়ে মরতে হবে, না হয় জেলে পুরে মরতে হবে, নয় তো এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রানে আমাদের মাঠে নামতে হবে।”
মহানগর বিএনপির দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের আমিনুল হক ও দক্ষিনের ইউনুস মৃধার সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, শ্যামা ওবায়েদ, নাসির উদ্দিন অসীম, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, আবুদস সালাম আজাদ, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, জাসাসের হেলাল খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজমুদার,মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ মহানগরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:07 PM |
Asr | 3:10 PM |
Magrib | 5:31 PM |
Isha | 6:50 PM |