আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ২:১৪
গাজীপুর: গাজীপুর জেলা কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৩০৭ জন হলেও এখানে বর্তমানে প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ১ হাজার ৭৫০ জনের মতো বন্দি অবস্থান করছে। যা ধারণক্ষমতার প্রায় ছয়গুণ। ধারণক্ষমতার তুলনায় এত বেশিসংখ্যক বন্দি থাকায় তাদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কারাগারের নিরাপত্তা নিয়েও কারা কর্তৃপক্ষের ভাবনার শেষ নেই। এদিকে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় বন্দিদের গাদাগাদি এ অবস্থান করোনা সংক্রমণেরও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ বিষয়টিও কারা কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তুললেও তাদের সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৮৪ সালে গাজীপুর জেলায় উন্নীত হওয়ার পরপর গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের উত্তর পাশে বর্তমান ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সঙ্গে ছোট পরিসরে গাজীপুর জেলা কারাগারটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৯৯ সালে ৫ দশমিক ৯৮ একর জমির ওপর গাজীপুর পুলিশ লাইনসের কাছে বর্তমান স্থাপনায় কারাগারটি চালু করা হয়। দেশের অন্যান্য কারাগারের তুলনায় গাজীপুর জেলা কারাগারটি অপেক্ষাকৃত ছোট অর্থাৎ কম বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। গাজীপুর জেলাটি বিশেষ ক্যাটাগরির জেলা এবং এটি অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত।
এছাড়া এ জেলায় রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ৭ হাজার শিল্পকারখানা। বিপুল জনসংখ্যা ও প্রচুর শিল্পকারখানা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার আধিক্যের কারণে জেলায় অপরাধ প্রবণতার হারও বেশি। এছাড়া গাজীপুর জেলার অভ্যন্তরে রয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, যা আয়তনের দিক দিয়ে দেশের বৃহত্তম সিটি করপোরেশন। গাজীপুরের কাশিমপুরে হাই-সিকিউরিটি ও মহিলা কারাগারসহ ৪ টি কারাগার থাকলেও সেসব কারাগারে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দিসহ সব এলাকার বন্দিদের রাখা হয়। কিন্তু গাজীপুর জেলা কারাগারটিতে জেলার বন্দিদের রাখার ব্যবস্থা থাকলেও অধিক জনসংখ্যার কারণে এ কারাগারটিতে বন্দির সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর জেলা কারাগারে ৩০৭ জন বন্দির ধারণক্ষমতা থাকলেও এখানে প্রতিদিনই গড়ে ১ হাজার ৭৫০ জন বন্দি থাকে। ধারণক্ষমতার তুলনায় এত বেশিসংখ্যক বন্দি থাকায় ব্যবস্থাপনাসহ বন্দিদের নিরাপত্তার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আবাসন সমস্যা লাঘবের জন্য কারা অভ্যন্তরের ভবনগুলোর ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বর্তমান অবকাঠামোর ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা লাঘবে কারা বাউন্ডারি এলাকার বাইরে উত্তর পাশের পতিত জমিতে প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ সম্ভব বলে মনে করছে কারা কর্তৃপক্ষ। সরকারের একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান হিসেবে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন এবং বন্দিদের সার্বিক নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য ওই এলাকায় ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কারাগারের জনবল বাড়ানো প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে সদ্য কারামুক্ত এক বন্দি জানান, কারা অভ্যন্তরে দিনের বেলায় উন্মুক্ত পরিবেশে ভালোভাবেই ঘোরাফেরা করা যায়। কিন্তু রাত নেমে এলেই সমস্যার শেষ নেই। গাদাগাদি করে ১০ জনের জায়গায় থাকতে হচ্ছে ১০০ জনকে। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে হয়। বিশেষ করে বয়স্ক বন্দিদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গোসল, খাওয়া-দাওয়া এবং বাথরুমের জন্য সিরিয়াল ধরে থাকতে হয়।
জানা গেছে, গাজীপুর জেলা কারাগার চালু করার সময় কারারক্ষী ছিল ২৫ জন। সে অনুপাতে কারারক্ষী ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে কারাগারটিতে কারারক্ষীর অনুমোদিত পদ ৬৮।
এর বিপরীতে প্রেষণে ১৩ জন কারারক্ষীসহ ৮১ জন কারারক্ষী, সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর ১, সর্বপ্রধান কারারক্ষী ৩, প্রধান কারারক্ষী ৫, সহকারী প্রধান কারারক্ষী ১২ ও ১৩ জন মহিলা কারারক্ষীসহ মোট ১১৫ জন কারারক্ষী-কর্মচারী এখানে কর্মরত রয়েছেন। এদের সবার জন্য কারা অভ্যন্তরে আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ব্যারাকে গাদাগাদি করে এবং বাকিদের কারাগারের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে অনিরাপদভাবে বসবাস করতে হচ্ছে।
কারা কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, ১৯৯৯ সালে কারাগারটি বর্তমান স্থানে চালু করার সময় বন্দি ধারণক্ষমতা ছিল ২০৭ জন। সে অনুপাতে বন্দি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১০০ বন্দি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি ভবন নির্মাণ করায় বর্তমানে কারাগারটিতে বন্দি ধারণক্ষমতা ৩০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ২৯৭ এবং নারী বন্দি ১০ জন। অথচ এর বিপরীতে গত রবিবারের তথ্য অনুযায়ী কারাগারটিতে মোট বন্দি ছিল ১ হাজার ৭৪৯ জন। এদের মধ্যে নারী বন্দি ৬৯ জন।
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:19 PM |
Isha | 6:40 PM |