আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৭:৫৮
আবুবকর সিদ্দিক,জয়পুরহাট প্রতিনিধি:-সোনালী মুরগী আর লতিরাজ কচু , এই নিয়ে জয়পুরহাটের গর্ব জয়পুরহাটে জেলা ব্রন্ডিংএর নাম । জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে লতিরাজ কচু। তুলনামূলক কম শ্রম ও খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কচুর লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এই লতি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়রল্যান্ড, সৌদি আরব,অস্ট্রোলিয়া, ইংল্যান্ডসহ প্রায় ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। তাই অন্য ফসলের তুলনায় লতিরাজ কচু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেশি।
এতে কওে রপ্তানীতে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, লাভবান হচ্ছে কৃষকরাও।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুর ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, কচুর লতির প্রচুর চাহিদা থাকায়, জমি থেকে তুলে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে নেওয়া মাত্রই তা বিক্রি হয়ে যায়। এক বিঘা কচু চাষে তাদের খরচ হয় ১৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মতো। কচুর লতি ও কচু বিক্রি করে প্রতি বিঘা জমিতে নূন্যতম ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়।
সমসা গ্রামের লতি চাষি সেলিম মন্ডল বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় এতে সেচ, ঔষধ, আর পরিচর্যাও অনেক কম করতে হয়। কম খরচে বেশি লাভ হয় তাই আমরা এই এলাকার মানুষেরা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কচুর লতি বেশি চাষ করি।
জয়পুরহাট সরেজমিন কৃষি গবেষনা ইনষ্টিিিটউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রেসাবুল হক ,তিনি বলেন, আমাদেও জোন পাঁচবিবি এলাকার আয়মা, সদরের পুরানাপৈল,পাটাবুকা , এলাকায় অনেকেই এই লতি চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয় এটি আমাদের দেশকে যেমন পরিচিত করাতে ভূমিকা রাখছে, তেমনি আমাদেরজয়পুরহাটকেও বিশ্বের বুকে পরিচিত করে তুলছে।
সরেজমিনে বাগজানা, ধরঞ্জি, স্লুইচ গেট, শিমুলতলী, দরগাপাড়া, আয়মারসুলপুর, বালিঘাটা, কড়িয়া, বেলপুকুরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ বছর আগে উপজেলায় পরীক্ষামূলক ভাবে লতিরাজ কচু চাষ শুরু হয়। অল্প সময়ে এতে প্রথম উৎপাদন ও লাভ হওয়ায় দ্রত ছড়িয়ে পড়ে কৃষকদের মাঝে। স্বাদে, পুষ্টিতে এবং উৎপাদনে সেরা হওয়ায় খুব দ্রত জনপ্রিয়তা লাভ করে এটি। এখন স্থান পেয়েছে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে।
কিšু‘ এখনও লতির বাজারের জন্য স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, ‘এখান থেকে কচুর লতি মধ্যপ্রাচ্য, কুয়েত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এগুলো বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াজাত কাজে তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করে। এতে এলাকার অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু সমস্যা একটাই, এখানে বাজারের স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করতে কেউ সহযোগিতা করছেন না।’
পাঁচবিবি উপজেলার শিমুলতলীর ফকিরপাড়া গ্রামের লতি চাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস লতির মৌসুম হলেও সারা বছর এর ফলন পাওয়া যায়। গত বছর ২ বিঘা জমিতে কচুর লতি চাষ করেছিলাম, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে লাগিয়েছি। গত মাস থেকে ভালো ফলনও পাচ্ছি।
লতির পাইকার মাহাবুব ও খোরশেদ জানান, বটতলীতে এ লতির বাজার থেকে সিজন টাইমে প্রতিদিন ৬০-৭০ টন লতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন তারা। বর্তমানে কৃষকদের কাছ থেকে প্রকারভেদে প্রতি কেজি লতি ২৫-৪০ টাকা দরে কিনে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন তারা। কচুর লতি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিমান সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এবং এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মৌসুমে লতিরাজ কচু চাষ হয়। এটি চারার মাধ্যমে,রোপন করা হয়। রোপণের এক মাস পর এবং চারা রোপণ করার আড়াই থেকে তিন মাস পর লতিরাজ কচু উৎপাদন শুরু হয়।
ষড়ঃরৎধল ষড়ঃরপ্রতি বিঘা জমিতে হাল চাষ, শ্রম, সেচ, গোবর, ডিএপি, পটাশ, জিপসাম, ইউরিয়া বাবদ ১৭-২২ হাজার টাকা খরচ করে লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৩-৪ হাজার কেজি কচুর লতি পেয়ে থাকে কৃষকরা। এ কচু চাষের এক-দুই মাস পর থেকে লতি বিক্রি হয় প্রায় সাত-আট মাস পর্যন্ত। লতির পাশাপাশি কাণ্ডও উৎপাদন হয়।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার পাঁচবিবি ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লতিরাজ কচু চাষ হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা থেকে ৭০ হাজার টন লতি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কচুর লতিতে প্রচুর আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এতে আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ডায়াবেটিস রোগীসহ সুস্থ এবং অসুস্থ সব মানুষের শরীরের জন্যই সবজি হিসেবে এটি খুব উপকারী।
Dhaka, Bangladesh মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |