আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৮:৩৮
মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম:- টাঙ্গাইলে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, ১০ জন ডাক্তার ও ৩৮ জন নার্স আক্রান্ত হওয়ায় ডাক্তারের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রায় শতভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।এদিকে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের বেড ছাড়াও গাদাগাদি করে মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।জেলার একমাত্র করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়ায় অন্য রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি ফ্লোরে অতিরিক্ত রোগীর সেবা চালু বিষয়ে চিঠি দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক। অধ্যক্ষের অবহেলার কারণে খুব কষ্টে দুর্ভোগে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীরা।জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৯০ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। আক্রান্তের হার ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৬৫ জন।এছাড়াও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪জন ও উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৫০ জন। গত জুন মাস থেকে করোনা বাড়তে থাকে। ১২ জুন থেকে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মাঝে ২৫ ও ২৬ জুন আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশের নিচে থাকলেও পরে তা আবার বেড়ে যায়। জুলাই মাস থেকে আক্রান্তের হার ৪০ শতাংশের উপরে রয়েছে। ১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৭ জনের।গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টার ভবনে ৫০ শয্যার একটি করোনা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়। এখন এই ওয়ার্ডটিতে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য জেনারেল হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডকে করোনা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে ৫৬টি শয্যা রয়েছে। এছাড়াও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ১০টি শয্যা রয়েছে। ওয়ার্ডে উপচেপড়া ভিড়। জেলার গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী রয়েছে। করোনা পরীক্ষা করালেই অধিকাংশ রোগীর পজিটিভ আসে। এজন্য গ্রামেগঞ্জে করোনার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল কলেজের ১৫ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ গত বছরের জুনে শেষ হয়েছে। অথচ এ ভবনটিতে হাসপাতালের কার্যক্রম এখনো শুরু করা হয়নি।জেলায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ক্রমে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ রোগীদের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে চিকিৎসা সেবা চালু বিষয়ে অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালককে ১ জুলাই চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে- জেলায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের জন্য নব নির্মিত শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ম ও ২য় তলায় জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালুকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয় অধ্যক্ষকে।এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন মিঞা।এছাড়াও গত ৬ জুলাই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. খন্দাকর সাদিকুর রহমান টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ ভর্তিকৃত রোগী সেবা কার্যক্রম শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করার জন্য চিঠি দিয়েছেন। ব্যবস্থা না নেওয়ায় কষ্ট করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনা রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।করোনাকালীন হাসপাতালে সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করলেও নুরুল আমিন প্রতিনিয়ত ক্লিনিকে রোগী দেখছেন। এমনকি করোনার মহামারিতেও জেলা করোনা প্রতিরোধ সভায় নামেমাত্র উপস্থিত হয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করেই ক্লিনিকে রোগী দেখার কথা বলে চলে যান। এ নিয়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও চিকিৎসকদের মধ্যে অধ্যক্ষের ওপর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ২০০ চিকিৎসক থাকলেও করোনা ইউনিটে ২১ জনসহ ৩৯ জন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছে বলে জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানিয়েছে। বাকি চিকিৎসকরা করোনার দুর্যোগের সময়ে টাঙ্গাইলে অবস্থান না করে ঢাকাসহ যার যার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। অধ্যক্ষ এ ব্যাপারে অনুপস্থিত চিকিৎসকদের বিষয়ে সাফাই গান।সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, করোনার এ দুর্যোগের সময় জীবন বাজি রেখে ডাক্তার নার্সরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এতে ডাক্তার ও নার্সরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসক সংকট দূর করতে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব ডাক্তার দুর্যোগের সময় দায়িত্ব পালন করলে চিকিৎসক সংকট কেটে যেত।তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের রোগীদের প্রায় শতভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত। আইসিসিডিডিআরের ল্যাবে পরীক্ষা করে এ তথ্যই মিলেছে।শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল আমিন মিঞা দায়িত্ব অবহেলার কথা অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালে কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ সংযোগ হলে দুটি নয় একটি ফ্লোরে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, জেলার করোনাকালীন দুর্যোগের সময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণ সংগ্রহ করে হাসপাতালে দেয়া হয়েছে। যাতে চিকিৎসা উপকরণের জন্য করোনা রোগীদের সেবা পেতে ব্যত্যয় সৃষ্টি না হয়।করোনা দুর্যোগকালে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সব ডাক্তারকে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সবার সহায়তায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা যাবে।
Dhaka, Bangladesh শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:30 PM |
Isha | 6:50 PM |