আজ শুক্রবার | ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১২:০৮
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:-টাঙ্গাইল জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলায় সরকারের গুরুত্বপূর্ন পদে কাজ করছেন ৩৭ নারী কর্মকর্তা।নানা প্রতিকূলতা ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে চলছেন নারীরা। এই যুগে নারী শুধু বধূ, মাতা কিংবা কন্যা নয়; পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সমান অংশীদার। পুরুষের পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারিগর। সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক—সব ক্ষেত্রেই নারীর অগ্রযাত্রা আজ দৃশ্যমান।
এরই ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইলে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাচ্ছেন ৩৭ নারী। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে সফল তারা। দক্ষতার সঙ্গে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দৈনন্দিন কাজ করছেন। বাল্যবিয়ে ও যৌতুক ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধের পাশাপাশি নিজ নিজ উপজেলাকে মাদক-দুর্নীতি-জঙ্গিমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রাখছেন এসব নারী। মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলার চিত্র তুলে ধরা হলো ।টাঙ্গাইল জেলায় উপজেলা ১২টি। এর মধ্যে সাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিস, কৃষি অফিস, নির্বাচন অফিসসহ শীর্ষ পদে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে ছয় নারী দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিন নারী।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদরে রানুয়ারা খাতুন, বাসাইলে নাহিদা পারভীন, ভূঞাপুরে ইশরাত জাহান, দেলদুয়ারে ফারহানা আলী, মধুপুরে শামীমা ইয়াসমীন, সখিপুরে ফারজানা আলম ও ঘাটাইলে মুনিয়া চৌধুরী ইউএনওর দায়িত্ব পালন করছেন।
পাশাপাশি উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচ নারী। তারা হলেন বাসাইলে নাহিয়ান নুরেন, ঘাটাইলে ফারজানা ইয়াসমিন, গোপালপুরে সাদিয়া ইসলাম সীমা, ধনবাড়ীতে ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা ও সখিপুরে জাকিয়া সুলতানা।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ছয় নারী। তারা হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (এসএ শাখা) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ এবং লাইব্রেরি শাখা) সুলতানা রাজিয়া, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আরএম শাখা, এনজিও শাখা, ফরম ও স্টেশনারি শাখা) বাবলী শবনম, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আইসিটি শাখা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র, ফ্রন্টডেস্ক) সিনথিয়া হোসেন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (স্থানীয় সরকার শাখা, অভিযোগ ও তথ্য শাখা, প্রবাসী কল্যাণ শাখা) সাবরিন আক্তার।
এছাড়া জেলায় শিক্ষা প্রশাসনে রয়েছেন নয় নারী। তারা হলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম, গোপালপুরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা, দেলদুয়ারে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদ পারভীন, নাগরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমানা আরা বিথী, বাসাইল উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর পদে সেলিনা আকতার, দেলদুয়ারে সুরাইয়া ইসয়াসমিন, সখিপুরে হেলেনা পারভীন, ভূঞাপুরে রাজিয়া সুলতানা ও মধুপুরে খন্দকার জাকিয়া শামছি।
নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন দুই নারী। তারা হলেন মির্জাপুরে শরিফা বেগম ও ভূঞাপুরে নাজমা সুলতানা। কৃষি দফতরে রয়েছেন তিন নারী। তারা হলেন বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার, সখিপুরে নিয়ন্তা বর্মণ ও ঘাটাইলে বিলশাদ জাহান।
উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন দুই নারী। তারা হলেন বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারলী হামিদ ও ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহনাজ সুলতানা।
পুলিশ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করছেন তিন নারী। তারা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী নুসরাত এদীব লুনা, মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অ্যাডিশনাল এসপি মারুফা নাজনীন ও টাঙ্গাইলের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পলি দাস।
উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ পদে থাকা এই নারী কর্মকর্তারা জানান, দেশের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঠ প্রশাসনের কাজের সমন্বয় ও তদারকি, জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন তারা। স্ব স্ব উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দেখভালও করতে হয় তাদের। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের তদারকি এবং বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরকারের স্থায়ী আশ্রয়ণ, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং অসহায় মানুষদের সহায়তায় কাজ করেন। একইসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।
টাঙ্গাইল সদরের ইউএনও রানুয়ারা খাতুন বলেন, ‘এমপি ও চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করায় কোনও সমস্যার সৃষ্টি হয় না। কাজের ক্ষেত্রে পুরুষ ইউএনওর চেয়ে নারীরা কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক জায়গায় পুরুষ ইউএনওদের চেয়ে নারী ইউএনওরা বেশি কাজ করছেন। নারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। নারী ইউএনও হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে আমরা সফল।’
বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, ‘কাজ করতে গেলে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকে। জনপ্রতিনিধি, জনগণ ও অফিসারসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করি এবং সরকারি নীতিমালার আলোকে কাজগুলো করি। প্রধানমন্ত্রীর যে আশ্রয়ণ প্রকল্প, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। এটির সঙ্গে জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত। প্রতিটি কাজেই আমাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছি। সরকারি কাজ আমরা সঠিকভাবে করছি, সফল বা ব্যর্থতা জনগণ তাদের মতো করে বুঝবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী নুসরাত এদীব লুনা বলেন, ‘কর্ম ক্ষেত্রেও নারীরা এগিয়ে আছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা একধাপ এগিয়ে আছেন, যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে। আর চ্যালেঞ্জিং পেশা এখন নারীরাও গ্রহণ করছেন। এখন বাংলাদেশে প্রত্যেক স্তরেই নারী আছেন। পুলিশে, চিকিৎসায়, শিক্ষায়, সৈনিক ও সীমান্তরক্ষী হিসেবেও নারীরা আছেন। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছেন নারীরা। ব্যবসা ক্ষেত্রেও নারী আছেন। অনেক নারী উদ্যোক্তা, যারা সফলভাবে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করছেন। তারা সফল হচ্ছেন, কোনও সন্দেহ নেই। নারীরা মাত্র কয়েকটি সাধারণ পেশায় আছেন, এই কথা এখন কেউ বলতে পারবে না। চ্যালেঞ্জিং পেশা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে সফল হয়েছেন অসংখ্য নারী।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিংয়ের বিষয়গুলো কিন্তু বহুমুখী। একজন নারী পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কতটুকু স্বাধীন, সেটা বুঝতে হবে। এখনও নারীরা পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীন নন। তাকে বিভিন্ন জিনিস চিন্তা করতে হয়। সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করতে হয়, পারিবারিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করতে হয় এবং পরিবারের অনুমতি নিতে হয়। সেটা হতে পারে বাবা, হতে পারে স্বামী কিংবা ভাই। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ পরিবারের অভিভাবকদের অনুমতি লাগে। যেখানে একজন পুরুষের পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব অনুমতি লাগে না। আবার একজন নারীর ক্ষেত্রে চিন্তা করা হয়, যে নারী আসলে কতটুকু সেই পেশাতে যোগ্য হয়ে উঠবেন। ফলে যিনি চাকরিদাতা তিনিও চিন্তা করেন, সব ক্ষেত্রে নারী দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন কিনা। আবার আরও কিছু বিষয় থাকে, আমাদের অনেক নারী মোটরসাইকেল চালাতে জানেন না, গাড়ি চালাতে জানেন না। অনেক পেশায় এটা প্রয়োজন হয়। সেসব পেশায় চাকরিদাতা নারীকর্মী নিয়োগ দিতে চান না। তারা এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন।’
তিনি বলেন, ‘আরও কিছু বিষয় আছে—নারীদের শারীরিক সক্ষমতা, আমাদের দেশের নারীদের স্বাস্থ্যের প্রতি বয়ঃসন্ধিতে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। নারীরা অনেক ধরনের পুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগেন। এই কারণে নারীদের সক্ষমতাও কম। কিছু কিছু চাকরিতে শারীরিক সক্ষমতা খুব জরুরি। নারীর স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের জন্যও শারীরিক সক্ষমতা জরুরি। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা এখনও পিছিয়ে আছেন। পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে নারীদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।’
পুলিশে চাকরির প্রসঙ্গে কাজী নুসরাত এদীব লুনা বলেন, ‘আমরা যারা পুলিশে আসি—নারী পুলিশ সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও ছাড় পাই না। একজন পুরুষ পুলিশ সদস্যকে যে প্রশিক্ষণ দিতে হয়, যেভাবে পেশায় যোগদান করতে হয়। একই প্রশিক্ষণ একজন নারীও দিয়ে থাকেন। ফলে প্রশিক্ষণগত কারণেই হয়তো নারীরা এগিয়ে থাকেন। আমি কখনও দেখিনি অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে, শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে নারী—মূলত নারী হওয়ার জন্য পিছিয়ে আছেন। তারা অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন, পুরুষের মতোই। আমরা খুব সুন্দরভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখি। সুন্দরভাবে নির্বাচন করি। এছাড়া মারামারি, হট্টগোল নিয়ন্ত্রণ করি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার অনুসন্ধান করি। সবদিক থেকেই নারীরা পুরুষের সমকক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশেও।’
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গণি বলেন, ‘জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সাতটিতে নারী ইউএনও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাচ্ছেন নারীরা। তারা পুরুষের সমান সমান কাজ করছেন। কোনও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় না। তারা যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করে সফল হয়েছেন।’
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 12:00 PM |
Asr | 3:00 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:41 PM |