আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:৫৬
বিডি দিনকাল ডেস্কঃ- ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করতে সরকার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ ঢাকার সমাবেশকে বানচাল করার লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জে আমাদের নিরহ লোকজনের ওপরে হামলা চালিয়ে, শহীদুল ইসলাম শাওনকে হত্যা করে, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। সেই মামলায় আপনারা জানেন যে, আমাদের কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মুন্সিগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনকে আটক করে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রফিক হাওলাদার, যুব দলের সাবেক সহসভাপতি আলী আকবর চুন্নুসহ বিভিন্ন থানায় ইতিমধ্যে ৫০জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরে হামলা চালিয়ে ৫০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছে।”
‘‘ এগুলো হচ্ছে খন্ডিত চিত্র। সামগ্রিকভাবে এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করছে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেন মনে হচ্ছে যে, ১০ তারিখে(১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় একটা যুদ্ধ হবে। এটা তারা তৈরি করছে?”
ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা একটা কঠিন সময়, ক্রান্তি লগ্নে উপস্থিত হয়েছি। এখানে আপনার নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে, শত বাধা-বিপত্তি, আক্রমন, নির্যাতন সহ্য করেও কিন্তু আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগুচ্ছি, শান্তিপূর্ণ পথে এগুচ্ছি।”
‘‘ এই অবৈধ সরকার তারা অত্যন্ত অর্বাচিনের মতো এই দেশকে একটা স্থিতিহীনতা দিকে, অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং তারা একটা উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে আবার সেভাবে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।”
“১০ ডিসেম্বর: চূড়ান্ত আন্দোলন নয়’
মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘ আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি, এখনো বলছি, আবারো বলছি, ঢাকার সমাবেশটা হচ্ছে আমাদের একটা বিভাগীয় সমাবেশ। আমরা যে ১০ বিভাগকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় শহরে যে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিলাম সেই সমাবেশগুলোর লাস্ট সমাবেশটা হচ্ছে ঢাকায়।”
‘‘ ঢাকার এই সমাবেশ থেকে আমরা পরিবর্তি কর্মসূচি, পরবর্তি দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে আরো বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে আমরা সামনে আসব। এটা তো চূড়ান্ত সমাবেশ নয়, চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক বিভাগীয় গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের নেতা-মন্ত্রীরা প্রমাদ বকছে। গণভিত্তি না থাকলে যেটা হয়, জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হলে যেটা হয় আর কি।”
‘‘ প্রতিমুহুর্তে এরা নাইট মেয়ার দেখে, দুঃস্বপ্ন দেখে। এই মুহুর্তে বুঝি গেলো গেলো, আমার সব গেলো।ওই ভয়ে ওই আতঙ্কে তারা এখন রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রকে ব্যবহার করে হুমকি দিচ্ছে আবার। ছেড়ে দেয়া হবে না, করতে দেয়া হবে না, দেখে নেয়া হবে।”
ফখরুল বলেন, ‘‘ আরে ! তোমরা কি গুন্ডাবাহিনীর সর্দার? তোমরা কি মাফিয়ার সর্দার? তাহলে ঘোষণা করো যে, আমরা তাই । তাহলে আমরা তোমাদেরকে রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাখবো না, গণতান্ত্রিক দলের মধ্যে চিন্তা করবো না।”
‘‘ আজকে গত ১৫টা বছর রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা সেইভাবে ব্যবহার করে এদেশের মানুষের সমস্ত অধিকারগুলোকে তারা হরণ করেছে।”
‘সেই অবস্থা এখন নেই’
হেফাজতের পরিণতি হবে বিএনপি-ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এরকম বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ শুনেন ওই একটা জিনিসই উনারা পারেন-অভ্যস্ত আর কি। সেই অবস্থা এখন আর নেই। আমি খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, হেফাজতের সময়ে তারা যেটা করেছে্ন এখন জনগনের সঙ্গে সেটা তারা করতে পারবেন না।কারণ জনগন তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে এবং জনগন যেকোনো মূল্যে এবার তাদের দাবি আদায় করে ছাড়বে।”
‘‘ এইটুকু নিশ্চয়তা আপনাদের দিতে পারি, আমরা এমন কোনো কর্মসূচি নেবো না যে, কর্মসূচিতে জনগনের কষ্ট হবে বা জনগন বিপদগ্রস্থ হবে, ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমরা জনগনকে নিয়ে জনগনের দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছি শান্তিপূর্ণভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাবো।”
সংবাদ সম্মেলনে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে বিভাগীয় সমাবেশে বাধা প্রদান, নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার, গ্রেফতার, মামলা-হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জে নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ নরসিংদীতে এক আওয়ামী লীগের নেতার বাসা থেকে বোমা উদ্ধার করেছে সাথে গানপাউডার ও অন্যান্য কিছু নিয়ে।তাকে গ্রেফতার করেছে। আর মামলা দিয়েছে বিএনপির ৭ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। এগুলো হাস্যকর না, বালখিল্য আচরণ না বলেন।”
‘‘ সিরাজগঞ্জে কোনো প্রচার-প্রচারনা করা যাবে নাঅ ওখানকার এসপি সাহেব আরিফ মন্ডল এতো বেশি উতসাহী যে, একটা কথা আছে না যে, হোলি হার্ট ইন দ্যা পোপ, পোপের চেয়েও পবিত্র। এরা হচ্ছেন যে, পোপের চেয়েও পবিত্র মানুষ। এসপি নির্দেশে সিরাজগঞ্জের একটি থানাতে প্রচারপত্র পর্যন্ত বিলি করতে দিচ্ছে না।যাতে না পারে সেজন্য গ্রেফতার করছে, মামলা দিচ্ছে।”
‘এই আলামত কিসের’
‘বিদ্যুতে দাম আবারো বৃদ্ধির পায়তারা’ এবং ‘ওএমএসে চালের জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন’- জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ শিরোনাম উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এটা আলামত কিসের ? এই আলামত হচ্ছে যে, আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন-অমূলক করেন নাই। তিনি একটা অবস্থা তৈরি করে রাখতে চাচ্ছেন যেটা হতে পারে।”
‘‘ যদি হয় সেটা হবে তোমাদের কারণে, তোমাদের দুর্নীতির কারণে, তোমাদের অব্যবস্থাপনার কারণে, তোমাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার যে একটা উদেগ্রো ভাবনা নিয়ে তোমারা যে দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করছো তার জন্য হবে। তোমরা বর্গীদের মতো কায়দা দেশের সম্পদ লুন্ঠ করে নিয়ে চলে যাচ্ছো তার জন্য হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আজকে রিজার্ভের কথা বলে। রিজার্ভের কথা এতো বলে কেনো? এখন খুব ডিফেন্ড করে রিজার্ভকে প্রতিদিন। তাহলে ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। তারা রিজার্ভের টাকা বের করে নিয়ে গেছে এবং বিদেশে রিজার্ভের টাকা দিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে-কৌশলে তারা বাড়ি-ঘর, অ্যাসেট সব তৈরি করেছে।”
‘পূঁজিবাজারে ক্যালেঙ্কারি প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ কালকে একটা পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, শেয়ার মার্কেট। দুর্ভাগ্যক্রমে সাকিবের(সাকিব হাসান) নামটাও উঠে এসে। একেবারে সেলফ সারপ্রাইজ, আমি জানতাম না।”
‘‘ সেটাও এসেছে যে, এসব শেয়ার ক্যালেঙ্কারির সঙ্গে অনেক বড় বড় রথী-মহারথীরা যুক্ত হয়ে পড়েছেন।”
‘তারল্য সংকট : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ব্যাংক তো শেষ। বার বার সেট্রাল ব্যাংক ঘোষণা দিচ্ছে যে, না ব্যাংকে এখন কোনো তারল্য সংকট নেই। না থাকলে এই স্টেটম্যান্ট দিতে হবে কেনো? মানুষ ভয় পাচ্ছে কেনো? মানুষ আশঙ্কা করছে কেনো?
‘‘ কারণ দেশের অর্থনীতির অবস্থা এমন জায়গা চলে গেছে যে, মানুষ এখন আর ব্যাংকে টাকা রাখতেও সাহস পাচ্ছে না যে, ওখান থেকেও তার টাকা চুরি হয়ে যেতে পারে।”
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে গত ১৪ নভেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। ওই সভায় ৬টি বিভাগীয় সমাবেশে সফল হওয়ার করার জন্য নেতা-কর্মী, ওইসব বিভাগের সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় বলে জানান তিনি।
Dhaka, Bangladesh শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:30 PM |
Isha | 6:50 PM |