- প্রচ্ছদ
-
- প্রবাসের সংবাদ
- তালেবানদের পুনরুজ্জাগরণ বনাম দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা
তালেবানদের পুনরুজ্জাগরণ বনাম দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা
প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৪:৩৮ অপরাহ্ণ
মো: ইমরান হোসাইন আনসারী:-দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর তালেবনাদের বিনা রক্তপাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিজয় দক্ষিণ এশিয়াসহ বৈশ্বিক রাজনৈতিক অনেক হিসেব নিকেষ পাল্টে দিয়েছে। তােেলবানদের এ সাফল্যের পেছনে কি কি ফ্যাক্টর কাজ করেছে তা নিয়ে চলছে সামরিক বিশ্লেষনের পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ। আর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা হিসেবের খাতা নিয়ে বসেছেন তালেবানদের বিজয়ে কোন দেশ কতটুকু হারাল আর কোন দেশ নতুন কিছু অর্জন করল।
লোকসানের খেরোখাতা মিলাতে গেলে সবচেয়ে আগে চলে আসে ভারতের নাম। কারণ ৯/১১ নিউ ইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ” প্রজেক্টের সবচেয়ে বেশি বেনিফিশিয়ারি হয় ভারত। এই প্রজেক্টের অংশ হিসেবে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় একচ্ছত্র অধিপতির আসন গ্রহন করে। অর্থাৎ ভারতের ইচ্ছা ব্যাতিরেকে এ অঞ্চলে একটি পাতাও নড়বে না এমন একটি পরিবেশ তৈরী হয়। ভারতের ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার গঠনে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর ধর্মীয় সহানুভূতিশীল দলগুলোর বিরুদ্ধে নেমে আসে অমানিসার অন্ধকার। কিন্তু তালেবানদেও কাবুল বিজয়ে যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাত। মূহুর্তের মধ্যে ধূলিস্যাৎ হওয়া শুরু করে আফগানিস্তানে ভারতের ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। যার মধ্যে আফগানিস্তানে ভারতের করে দেয়া চার শতাধিক প্রজেক্ট রয়েছে।
আফগানিস্তানের নতুন পার্লামেন্ট ভবন , জারজ দিলারাম হাইওয়ে (২১৮ কি. মি.) , স্টোর প্যালেস , সালমা ডেমসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করে দেয় ভারত। সেই সুবাধে বিনা বাঁধায় পাকিস্তানকে নজর দারির আওতায় আনতে দেশটির সীমান্তে চারটি কন্সুলেট চালু কওে দেশটি। যেগুলোর মাধ্যমে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামীদেও মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে । স্বাধীনতাকামীদের হামলার তীব্রতায় পাকিস্তানের বহু সেনা অফিসারকে প্রাণ দিতে হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেড়ে যায় পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়। কিন্তু এর জবাবে পাকিস্তানকে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তালেবানদের কাবুল বিজয়ের মাধ্যমে এই চারটি কন্সুলেট অলরেডি গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে ভারত। আর এর সুফল ভোগ করা শুরু করেছে পাকিস্তান। কারণ ২০০১ সালে আফগান অভিযানের পর পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বে বিরাট ধরণের ফাঁটল ধরে। তালেবানদেও সাথে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনায় সংঘত কারণেই দেশটির কাছে আবারো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে পাকিস্তান। উপনিবেশিক শাসনের কারণেই পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্থানের সম্পর্ক তেমন একটা ভাল ছিল না। কিন্তু আফগানিস্তানের রাজনীতিতে ভারতের প্রবল হস্তক্ষেপ তালেবানদেও বাধ্য করেছে পাকিস্তানের সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক করতে। ইতিমধ্যে তালেবান এই বিজয়ের পর দেশটির সরকার গঠনে সহায়তা করতে কাবুলে পৌছেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কোরেশি। এটি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য একটি নতুন বার্তা। পাকিস্তানের পাশাপাশি তালেবানরা এবার কাবুল অভিযানের আগেই চীনের সাথে একটি বুঝাপড়া করে নিয়েছে। চীনের রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ ত্বরান্বিত করতে আফগানিস্তানে বেইজিং-এর পছন্দসই সরকার যেনো সময়ের দাবী। আফগানিস্তানের পছন্দসই সরকারের সহায়তায় মধ্য এশিয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা চীনের জন্য সহায়ক বই ক্ষতি হবেনা। তালিবানদের কাবুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে কোয়াড ( যুক্তরাষ্ট্র-ভারত- জাপান- অষ্ট্রেলিয়া) এর বিপরীতে চীন-আফগান -পাকিস্তান সমেত একটি সামরিক জোট গড়ার সম্ভাবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। যে জোটে ইরানের যোগ দেয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে কাস্মীরের স্বাধীনতাকামীরা ইতোমধ্যেই তাদের অঞ্চলের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় তালেবানদের সহায়তা চেয়েছেন। সর্বোপুরি তালেবান কেন্দ্রিক দক্ষিন এশিয়ায় এক নতুন ধরণের সংঘাতের পরিবেশ তৈরী হচ্ছে।
এবার আসি তালেবানদের রক্তপাতহীন দ্রুত সফলতার আলোচনায়। তালেবানদের বিজয় পরবর্তী ঘঁটনা প্রবাহ জানান দিচ্ছে ১৯৯০ সালের তালেবান এবং বর্তমান তালেবানের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত রয়েছে। বলা চলে বিদ্যুৎ গতিতেই মাত্র সপ্তাহ দু’য়েক এর মধ্যেই প্রায় পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে তালেবান । তালেবানদের এই “অপারেশনাল আর্ট” নিয়ে রীতিমত গবেষণা শুরু হয়েছে। কারণ তালেবানরা তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সামরিক ও বেসমারিক সকল শক্তির একটি সমন্বয় সাধন করতে সচেষ্ট হয়েছে বলে মনে করছে সমরবিদরা। সামরিক পরিভাষায় ’অপারেশনাল আর্ট’ হচ্ছে- একটি সামরিক অভিযানের নীল নকশা।যা যুদ্ধক্ষেত্রে একটি বাহিনীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও কৌশলের দিক নির্দেশনা প্রদান করে। পশ্চিমা দুনিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সামনে এখন প্রশ্ন জেগেছে তালেবানরা আধুনিক এই অভিযানের কৌশল কিভাবে রপ্ত করল। কারণ তারা আধুনিক কোনো ওয়ার কলেজের দীক্ষা পান নি। তবে এটি অস্বীকার করা জো নেই যে প্রায় দুই দশকে তালেবানরা একটি শক্তিশালী সামরিক গ্রুপে পরিণত হতে সচেষ্ট হয়েছে। কারণ মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতিতেই তারা গ্রামাঞ্চলে জটিকা হামলা চালানোসহ ইম্প্রোভাইস এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইআইডি) স্থাপন করার মত দক্ষতা অর্জন করেছে। যুক্তরাস্ট্রের খ্যাতনামা থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের ভাষ্যমতে বর্তমান তালেবান একে ৪৭ এর চেয়েও সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারে বেশি দক্ষ। যা তালেবানদেও দ্রুত বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে। তালেবানদেও এ বিজয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা তা হচ্ছে –- আফগান সামরিক বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্যে সংহতি আদায়, নতুন ধারার অভিযান (অর্থাৎ হত্যা কর , বাধ্য কর), আলোচনার মাধ্যমে সময়ক্ষেপন ও তালেবানদেও বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি কমানো।
আফগান সামরিক বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা সারা বিশ্বের কাছে এখন এটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ন্যাটো জোটের সহযোগিতায় প্রায় ৮৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে গড়ে উঠা আফগান সামরিক বাহিনী কেন তালেবানদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারল না। আসলে এবারের অভিযানে আফগান সামরিক বাহনীকে মোকাবেলা করতে তালেবানরা সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে শারিরীক ও মানুষিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার উপায় অবলম্বন করে। আর এ সুযোগটি তালেবানরা পায় যখন গত ১৮ মাস যাবত আফগান সরকার ব্যাপক পরিমানে দেশব্যাপী তল্লাসী চৌকি স্থাপন করে। মূলত আফগান সামরিক বাহিনী তল্লাসী চৌকি নির্ভও হয়ে পড়ায় তালেবানরা মূল সামরিক ঘাঁটি থেকে যাতে প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী ও সামরিক সরঞ্জামাদি না আসতে পাওে এর জন্য পথিমধ্যে ব্যাপক ভিত্তিক হামলা অব্যাহত রাখে। যার ফলশ্রুতিতে তল্লাসি চৌকি গুলোর রসদ সরবরাহ সড়কের চেয়ে বিমান ও হেলিকপ্টার নির্ভর হয়ে উঠে।যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আর বিমান ও হেলিকপ্টার লক্ষ্য করেও হামলার তীব্রতা বাড়াতে থাকে তালেবানরা । আর এতে তল্লাসি চৌকিগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সংকটের পাশাপাশি গোলাববারুদের সংকট তীব্র হয়ে উঠে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অবাধে সড়ক পথে চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। আর এতে মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে আফগান বাহিনী। যার ফলশ্রুতিতে মার্কিন সেনাবাহিনী তুলে নেবার সাথে সাথে খুব দ্রুততার সাথে তালেবানরা তাদেও সামরিক অভিযানে সফল হয়।
টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে হুমকি আফগান সুসজ্জিত বাহিনীকে পরাস্ত করতে তালেবান সামরিক হামলার পাশাপাশি সৈনিকদের মনোবল ও সংহতি ভাঙ্গার কাজটি করে খুবই দক্ষতার সাথে। সমরবিদ সান টোজ এর মতানুসারে, যেকোনো যুদ্ধে একটি বাহিনীর মনোবল ও যুদ্ধ জয়ের আকাঙ্খা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি দিক। তালেবানরা আফগান বাহিনীকে শারিরীকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে মনোযোগি হয় একটি মনোজাগতিক যুদ্ধের মূখোমূখি করার মাধ্যমে। আর এতে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করে। জেনে রাখা ভাল আফগানিস্তানের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষই এখন মোবাইল ব্যবহার করে। আর তালেবানরা সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েই সোস্যাল মিডিয়ায় ফেইক আইডি খুলে ব্যাপক ভিত্তিক তথ্য যুদ্ধ পরিচালনা করে। ব্যাপক ভিত্তিক প্রপাগান্ডা আফগান সৈনিকদের মনোবল ভাঙ্গতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে তারা আফগানিস্তানের বিভিন্ন উপজাতির সিনিয়র সদস্যদের ব্যবহার করে যাতে তারা মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে তালেবানদেও কাছে আফগান বাহিনীর আত্মসমর্পনের আহ্বান জানানো হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন টুইটার একাউন্টে ভিডিও আপলোড করা হয় যেখানে আফগান বাহিনী বিভিন্ন শহরে তালেবানদের কাছে আত্মসমর্পন করছে সে দৃশ্য দেখানো হয়। ওইসব ভিডিও আবার মোবাইলে ম্যাসেজ আকারে পাঠানো হয় আফগান বাহিনীর বিভিন্ন জেনারেলদেও কাছে। যেখানে ক্যাপসনে লেখা থাকতো- “আপনি একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে আছেন, খাদ্য ও গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে, একটি অজনপ্রিয় সরকারের জন্য লড়াই করছেন । আপনি যখন আপনার মোবাইল ফোনের দিকে তাকান, আপনি যা দেখছেন তা হল সহযোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের ছবি। এমনকি যদি আপনি যুদ্ধ করতে চান, তবুও আপনার মনোবল এবং লড়াই করার ইচ্ছা বাধাগ্রস্ত হয়েছে”।
নতুন ধারার অভিযান আফগান সরকার ও কাবুলের সক্ষমতা অবনমিত করতে তালেবানরা গেল দু’বছর ধরে নতুন ধারার অভিযান পরিচালনা করে আসছে। দু’বছর আগে জনমনে ভীতি সঞ্চার করতে এবং সরকারের সক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মূখে ফেলতে তালেবানরা যেখানে চলন্ত গাড়ীতে এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের মাধ্যমে বোমা ফাটানোর মত ঘটনা ঘঁটাতো ,সেখানে তারা গেল বছর খানেক ধরে এ অভিযানে পরিবর্তন আনে। বোমা হামলার পরিবর্তে আফগানিস্তানের সামরিক অফিসার ও সিভিল সোসাইটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদেও বিরুদ্ধে গুপ্ত হত্যার মতো বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা কওে গ্রুপটি। বিশেষ করে সামরিক বিমানের বেশ কয়েকজন পাইলটকে তারা হত্যা করে। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে তালেবানরা দু’টি বার্তা দিতে চায়। প্রথমত: আশরাফ গানি সরকার জনগনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ , দ্বিতীয়ত; আফগানিস্তানের এয়ারফোর্সেও শক্তিমত্তাকে অঙ্কুরেই শেষ করের দেয়া। যার ফলে কেউ যাতে নতুন করে আর পাইলটের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী না হয়।
আলোচনার মাধ্যমে সময়ক্ষেপন ও তালেবানদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি কমানো
তালেবান তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সামরিক অভিযানের পাশাপাশি একটি সমন্বিত কূটনৈতিক স্ট্র্যাটিজি গ্রহণ করে। যার ফলে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানদের এক একটি শান্তি আলোচনার পর তালেবানদেও বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা হ্রাস পেতে থাকে। যাতে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করতে তালেবানরা সুযোগ পেয়ে যায়। শান্তি আলোচনার মাধ্যমে তালেবানরা সময়ক্ষেপন করে যাতে নতুন নতুন সদস্য নিয়োগ করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামাতে সক্ষম হয় তালেবানরা। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুধুমাত্র তালেবানদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এতে আশরাফ গানি সরকারের রাজনৈতিক পরাজয় হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তালেবানদেও শান্তিচুক্তি হবার সাথে সাথেই আঞ্চলিক শক্তিগুলো ( পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া, ইরান) তালেবানদের নতুন উদ্যমে সহযোগিতা করতে মরিয়া হয়ে উঠে। যা সর্বোপুরি তালেবানদের কাবুলে রক্তপাতহীন দ্রুত বিজয়ের পথকে সুপ্রসস্ত করে ।
তালেবানদের এবিজয়ই শেষ কথা নয়। কারণ তারা গেল এক দশক আক্রামনাত্মক অবস্থানে ছিলেন। এখন যেহেতু ক্ষমতা তাদেও হাতে তারা এখন আত্মরক্ষার অবস্থানে চলে এসেছেন। নিজেদেও রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ জনগণের জীবন সম্পদ রক্ষার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে। এছাড়া বিগত ২০ বছরে আফগানিস্তানে এক বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেনীর বিকাশ ঘটেছে। এই বিকাশের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও মনোজাগতিক অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে আফগান সমাজে। পরিবর্তনের এই ধারাগুলো বুঝতে হবে তালেবান শাসকদের। তবে ইতোমধ্যেই তারা বেশ স্মার্টনেস দেখাতে সচেষ্ট হয়েছেন। বিশেষ কওে মিডিয়ায় তাদের অব্যাহত উপস্থিতি। আমেরিকান ও ভারতীয় নাগরিকদেও প্রতি নমনীয় মনোভাব পোষন, আফগান সরকারের সাবেক কর্মকর্তা , কর্মচারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা -এক পরিবর্তিত তালেবানদেও চেহারা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া তারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে ইসলামি ইমারত প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দিয়েছেন- যাতে একটি গুরুত্বপূর্ন বার্তা রয়েছে। কারণ খেলাফতের ঘোষনা দিলে হয়তোবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তালেবানদের এই উন্থানকে আইসিস এর সাথে সম্পৃক্ত করবার চেষ্টা চালাতো। তাস্বত্ত্বেও তালেবানদের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জের মূখোমূখি হতে হবে তা হচ্ছে- আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক চাঁকা সচল রাখা, নারীদের জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা, আফগানিস্তানের বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি জনকল্যাণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা। আফগানিস্তানে অবস্থানরত আইসিস এর মতো উগ্রপন্থী গ্রুপগুলোকে মোকাবেলা করাও তালেবানদেও জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে এবং দেখা দিবে।
লেখক: আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও শিক্ষক, স্টেইট ইউনির্ভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক
Please follow and like us:
20 20