আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১:০৩
ব্রি: জে: মোঃ নাসিমুল গণি (অব:):বনভূমিতে মাটিতে কান পাতলে মানুষ/পশুর পায়ের শব্দে অনেক আগেই আমরা তাদের উপস্থিতি জানতে পারি। বিবিধ তথ্য, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিতভাবে বলা যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ইতিহাসের তথ্য ও উপাত্ত আমাদের পথ দেখায়। আমি ভবিষ্যৎ দেখতে চাই ইতিহাসের বাস্তবতায়। রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি শুরু হয়েছে। আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এই যুদ্ধে অস্ত্র, জনবল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রদান করছে এবং এর দীর্ঘসূত্রীতা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেছে। রাশিয়া ইতিমধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভব্যতা সম্পর্কে সতর্ক করেছে। আমার পর্যালোচনা মূলত: প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আলোকে। আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কারণ, ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ পাই ইতিহাসের পাতায় পাতায়। তাই আমার চিন্তাধারায় হয়তো সেই ইতিহাসের উপলব্ধির ছবি দেখতে পাবেন।
প্রথম মহাযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) প্রধান কারণ ছিল ইউরোপে সামরিকীকরণ ও জার্মানীর উত্থান, জাতীয়তাবাদ, উপনৈবাসিবাদ (Imperialism) রাশিয়ার উত্থান, বিবিধ বাক্সের জোট অটোমান সাম্রাজ্যের দূর্বলতা ইত্যাদি ফলাফলে দেখা যায় নব্য বিশ্ব শক্তির আবির্ভাব, অটোমান সম্রাজ্যে/খলিফাতের পতন, নূতন বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান (পুজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক), ইউরোপে জার্মানীর শক্তিমত্তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, বৃটেন ও ফ্রান্সের গোপন চুক্তির (১৯১৬) মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের তৈল সম্পদের নূতন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো সৃষ্টি, বিশ্ব নিয়ন্ত্রনের জন্য লীগ অব নেশনস এর ধারণার বাস্তবায়ন, সামরিক মারণাস্ত্র ও কলাকৌশল এর নূতনরূপ ধারণ ইত্যাদি
এই মহাযুদ্ধে সর্বমোট ১.৫-৩২.৫ কোটি জন নিহত এবং ২.৩০ কোটি আহত হয়েছিল। মানবতা এখানে পথ হারিয়েছে।
মাত্র ২২ বছরের মধ্যে পুনরায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সাক্ষাৎ পাই। এবারের কারণগুলোর মধ্যে লীগ অব নেশনস এর অনিরপেক্ষ কার্যক্রম, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী ও বিজিত শক্তিদ্বয়ের মধ্যে সম্মানজনক শান্তি চুক্তির অভাব, ইউরোপে জার্মানীর সামরিক শক্তির পুন: উত্থান, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, জোট ব্যবস্থার পুন: উত্থান, কাঁচামাল বাজারের উপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর দেশের আধিপত্য নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। এই মহাযুদ্ধের ফলাফলে দেখি ইউরোপীয় ও আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহ তাদের কালোনীদের নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা প্রদান করছে (যেমন ভারত বিভক্তি ১৯৪৭) এবং ছোট ছোট রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় যা প্রকৃতপক্ষে নূতন সাম্রাজ্যবাদের রূপান্তর মাত্র। পারমাণবিক অস্ত্রসসহ বিবিধ সমরাস্ত্রর উদ্ভাবন, বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা, দুই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার (পুজিবাদী ও সমাজন্ত্র) মধ্যে চরম প্রতিযোগিতা, জাপান ও জার্মানীকে সামগ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ, ইউরোপীয় শক্তির সাথে ন্যাটো এর মাধ্যমে আমেরিকার স্ট্রাজেটিক সম্পর্ক সৃষ্টি, দ্বিতীয় সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসাবে চীনের জন্ম, বিশ্ব অর্থনীতিতে লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে ডলার ও পাউন্ডের একচ্ছত্র আধিপত্য, রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে শক্তিমত্তার লড়াই শুরু (পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানী, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি) রাশিয়ার নেতৃত্বে WARSAW প্যাক্ট এর জন্ম এবং জ্ঞানের অগ্রযাত্রা নূতন রূপ ধারণ করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ৫-৬ কোটি মানুষ নিহত এবং ১.৯ হতে ২.৩ কোটি আহত হয়। শুধুমাত্র জাপানের নাগাসাকি ও হিরোশিমায় আমেরিকার পারমাণবিক বোমা হামলায় ১৩০০০০-২২৬০০০ জন নিহত এবং অসংখ্য আহত ও বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে। মানবতা পুনরায় এখানে ভুলন্ঠিত হয়।
যে কোন যুদ্ধে মারণাস্ত্রের গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা এবং রণকৌশল নূতনরূপ নেয়। তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের উদ্ভব বিশে^র জনগণ প্রতিষ্ঠান একে অপরের মধ্যে যোগাযোগ, তথ্য আদান প্রদানের সময় ও পার্থক্য কমিয়ে দিয়েছে। বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের অস্ত্র ব্যবসাসমূহ তুঁঙ্গে উঠে এবং বিভিন্নরূপ ও প্রকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করেছে। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিক সক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ গুটিকতক ইউরোপীয় দেশ, আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে পূর্বের ন্যায় সীমিত আছে। তৃতীয় মহাযুদ্ধের সম্ভাব্য কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণের মধ্যে নিহিত রয়েছে। পৃথিবীর শক্তিধর দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে ফাটল ধরেছে এবং চীন ও জাপানী অর্থনৈতিক শক্তির উত্থানে অর্থনৈতিক ভারসাম্য এশিয়া এবং আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যে দোদুল্যমান আছে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্র হিসাবে পতনের পর বিশ্ব একক পরাশক্তি আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে ইজরাইল নামক রাষ্ট্রে সৃষ্টির ফলে পৃথিবীতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পদ্ধতি, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং ঘৃনা শক্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেক নূতন দেশসমূহের মধ্যে যুদ্ধের উদ্ভব হয়। ডলার ও পাউন্ড এর একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে নূতন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের সূচনা হয়। লীগ অব নেশনস পরিবর্তে ইউনাইটেড নেশন নূতন রূপ ধারণ করে সেখানে নিরাপত্তা পরিষদ তৈরি করে পঞ্চ বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখার জন্য নূতন নূতন নীতি, পরিকল্পনা এবং সামরিক শক্তির ব্যবস্থার স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। একই সাথে মানবতা, মানবাধিকার আরো বিচ্যুত ও নগ্নরূপে সর্বত্র দেখা দিয়েছে। ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া এবং চীনকে শত্রুদেশ হিসাবে আমেরিকা ও ইউরোপ কর্তৃক সরাসরি চিহ্নিতকরণ, ১৯৮৯ এর পরে ন্যাটোকে ভেঙ্গে না দেয়া, ইইএন কর্তৃক বিবিধ দেশের প্রতি অন্যায্য আচরণ, ডলার ও পাউন্ডের আধিপত্যকে ভেঙ্গে দেয়া প্রচেষ্টা, নূতন শক্তির উত্থান (রাশিয়া, জার্মানী, চীন ও জাপান, তুর্কী), বিবিধ জোট ইত্যাদির কারণে (অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি) প্রায় ৭৭ বৎসর পর এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো। এই যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ, ন্যাটো ও আমেরিকার অস্ত্র সাহায্য, বিশ্বরাষ্ট্রসমূহকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বিভক্তি, মিডিয়া আধিপত্য ও প্রপাগান্ডা, নূতন নাৎসীবাদীর উত্থান বন্ধ, রাশিয়ায় গ্যাস তেলসহ সকল খনিজ সম্পদ, ব্যবস্থা বানিজ্যের লেনদেন ডলার/পাউন্ড/ইউরোতে প্রদানে বাধ্য করা, বিশ্বকে নূতনভাবে বিভক্ত করা, ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং চীনের সাথে রাশিয়াকে শত্রু হিসাবে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা ইতাদি ব্যপকভাবে উন্মেচিত হয়েছে। করোনার সময় বিশ্ব ব্যবস্থার বিভক্তি আরো উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। বিশ্ব ব্যবস্থাপনাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত স্বার্থ নি:লর্জ্জভাবে উন্মুক্ত হয়ে যায়। যুদ্ধের ফলে অস্ত্র ব্যবসা, খাদ্য নিরাপত্তা, তৈল ও জ্বালানিসহ বিবিধ খনিজ দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণহীনতা ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রীলংকা, পেরুসহ পৃথিবীর সর্বত্র এর প্রত্যক্ষ ও বিরূপ প্রতিফলন দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের দায়িত্ব ও অস্তিত্ব সম্পর্কে সংগ্রামরত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন তুলেছেন। ইউরোপে রাশিয়ার বিপক্ষে জার্মানীর ভূমিকা ও বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভিন্নপক্ষ অবলম্বনে দোদুল্যমানতার ছোঁয়া পাকিস্তানের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। রাজনৈতিক কারণে রাশিয়া ও আমেরিকার বিপরীতমুখীর চাপে ভারত আজ দিশেহারা। ইয়েমেনে সাময়িক যুদ্ধবিরতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নূতন মাত্রা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ব মুসলিম রাষ্ট্রসমূহকে নূতন বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। বাংলাদেশও সমভাবে বাস্তবতার ও প্রচন্ড চাপের মুখোমুখি।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের শুরুর দিন থেকে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশেষত: আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নমনীয় শক্তি (Soft Power) এর বিভিন্ন একক / নিয়ামককে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তদানুসারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নমনীয় শক্তি যেমন সাইবার আক্রমন, বাণিজ্য অবরোধ, ব্যাংক লেনদেন বন্ধ/সীমিত, ক্রিপ্টোকারেন্সী বন্ধ, প্রযুক্তিক লেনদেন, কূটনৈতিক আলোচনার জন্য দলভারী, খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলেজেন্স খেলাধুলা, সংস্কৃতিক কার্যক্রম ইত্যাদি। অপরপক্ষে রাশিয়া সমভাবে তাদের মারণাস্ত্রের সাথে সাথে বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে নমনীয় শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে। প্রতিটি মহাযুদ্ধ ইউরোপ হতে শুরু হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে বিশ্বব্যাপী প্রবাহমান হয়েছে। বিশ্ব শক্তিবর্গের নমনীয় শক্তির ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, মুদ্রা ব্যবস্থা, বাণিজ্য ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধাবস্থায় চলে গিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের এটিই শুধু পার্থক্য। কঠিন শক্তির (Hard Power) ব্যবহার আপাতত: ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য দেশে এর বিস্তার হতেও পারে নাও হতে পারে। তাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রধানত: দুই পরাশক্তির নমনীয় শক্তির মধ্যকার যুদ্ধ। যুদ্ধের চরিত্র একই প্রকার তা নমনীয় ও কঠিন শক্তির হোক না কেন। কঠিন শক্তির প্রয়োগ দৃশ্যমান ও অতি দ্রুততার সাথে বন্ধ করা যায়। কিন্তু নমনীয় শক্তির প্রয়োগ প্রক্রিয়া বহুমাত্রিক এবং তা ক্যান্সারের মত অতি দ্রুততায় বন্ধ সম্ভব নয়। ফলে এর প্রভাব অতীব ভয়ংকর যা ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্বকে অস্তিত্বহীন ও সামগ্রিক ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীনের নীতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে পরিবর্তন আসলে তা বিশ্বকে ঝুঁকির তলানীতে নিয়ে যাবে (আমেরিকার চিহ্নিত শত্রু চীন এবং তাইওয়ানের নিরাপত্তা সাহায্যকারী আমেরিকা)।
এখন বাংলাদেশের দিকে চোখ ফেরাই। বাংলাদেশের উপর তৃতীয় মহাযুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে আগাম শঙ্কা প্রদর্শন করেছে। আগামীতে রেমিটেন্স এবং পোশাক শিল্পের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতি মুখ থুঁবড়ে পড়বে। বিশেষত: ইউরোপ হতে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের/ কর্মজীবীদের প্রত্যাবর্তন শিগগিরই শুরু হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল অর্থনীতি লাভবান হলেও তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোন প্রকার অতিরিক্ত সুবিধা সৃষ্টি / রেমিটেন্স বৃদ্ধি করবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত: মধ্যপ্রাচ্যে হতে প্রাপ্ত রেমিটেন্স ভিত্তিক। আমেরিকা ও ইউরোপের পোষাক শিল্পের রেমিটেন্সকে সূত্র অনুযায়ী “কৃত্রিম রেমিটেন্স” হিসাবে আখ্যা দেয়া যায়। ভবিষৎ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমেরিকা ও বিশেষত: ইউরোপ হতে পোষাক শিল্পের চাহিদা দারুণভাবে কমে যাবে। ফলশ্রুতিতে “কৃত্রিম রেমিটেন্স”ও দারুণভাবে কমে যাবে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের দূর্বল শ্রম বাজার ও কর্মবিনিয়োগ এমন বাস্তবতার মুখোমুখী হবে যে তার সাথে যোগ হবে বাংলাদেশের বিশাল কর্মবিহীন যুবক গোষ্ঠী এবং খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি। চাল ব্যতিত অন্যন্য খ্যাদ্যদ্রব্যের জন্য পরনির্ভরশীলতা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে চরম হুমকীর মুখে ফেলে দিবে। বৈদেশিক ঋণ এবং প্রকল্প সম্পাদনে দীর্ঘসূত্রীতা নিম্ন দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত ফাঁদ (Technical Trap) বাংলাদেশকে সামগ্রিকভাবে চরম বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। বাংলাদেশ নিয়মিত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে। সামরিক ও অসামরিক আমলাতন্ত্র এক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যবস্থাপনার আলোকে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের পরামর্শ দিবেন। দেশীয় এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য সরকার ও জনগণ চরমভাবে দ্বিধান্বিত এবং যে কোন জাতীয় স্বার্থবিরোধী ফাঁদে পা দিতে পারে।
রোহিঙ্গা সমস্যা ক্রমান্বয়ে ভয়ংকর রূপ নিবে। একই সাথে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হয়ে উঠবে। দেশের অর্থনীতি ও শ্রমবাজার অস্থির হয়ে উঠলে বাংলাদেশ হতে মানব পাচার চক্র অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।
বিশ্ব ও দেশের যুদ্ধাবস্থায় আমাদের কি করণীয় আছে তা বিবেচনা করা অতীব জরুরী। করোনা-১৯ এর মত যুদ্ধ পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতা পুন:সৃষ্টি করা যাবে না। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশসমূহ এ বিষয়ে ইতিমধ্যে ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে ও ভবিষ্যতে আরো আনবে। দেশ পরিচালনায় সর্বদিকগুলো সমন্বিতভাবে বিবেচনা করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে সার্বিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে হবে। মন্ত্রণালয় ভিত্তিক ক্ষুদ্র পরিকল্পনা ও সমন্বয় প্রধানমন্ত্রীর সমন্বয়কে সহজ ও বাস্তবমুখী করবে। দেশের যুদ্ধকালীন ব্যবস্থাপনাকে পুন:বিবেচনা করত: প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও সংযোজন এবং আইনগত পরিবর্তন আণয়ন করা আবশ্যক। আমি সাধারণভাবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করবো:
১। ব্যয় সংকোচনীতি বাস্তবায়ন এবং সকল প্রকার আড়ম্ভতা, দূর্নীতি দমন ও ব্যয়বহুল প্রকল্প সমূহের পুন: মূল্যায়ন করা।
২। বিদেশে পাচারকৃত রাষ্ট্রীয় অর্থ বৈধভাবে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা এবং বিদেশী রাষ্ট্রসমূহ বিশেষত: আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সাথে এ বিষয়ে কূটনৈতিক সমন্বয় করা।
৩। গ্যাস ও তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য বঙ্গোপসাগরে ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে দেশীয় ও বৈদেশিক প্রযুক্তি নির্ভর জীবাস্ম ভিত্তিক জ্বালানির উৎস খোঁজা ও মজুত বৃদ্ধি করা।
৪। কৃষির উপর নির্ভরশীলতার বর্তমান হার জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি এবং কুটির শিল্পভিত্তিক শিল্প চাহিদা সৃষ্টি করা। একই সাথে স্থানীয় শ্রম বাজার সম্প্রসারিত করা।
৫। আভ্যন্তরীণ রাজস্ব উৎস বাড়ানো এবং আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও রপ্তানি করের হ্রাসকে সমন্বয় করত: অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখা।
৬। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর সংখ্যা সংকুচিত করা এবং অতিরিক্ত জনবল ও অর্থ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সমন্বয় করা। উন্নয়ন তৎপরতা ও অর্থ ব্যয়ের কেন্দ্র শহুর হতে গ্রামভিত্তিক করা।
৭। “রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১” কে পুন: মূল্যায়নকরত: আত্মনির্ভরশীর অর্থনীতি গড়ে তোলা।
৮। বৈদেশিক নীতির পুন: মূল্যায়নকরত: আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি এবং ইউরোপ ও আমেরিকার উপর প্রযুক্তিক, শিক্ষা, রপ্তানি, ইত্যাদিতে নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমানো। গালফ দেশসমূহ (সৌদিআরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ইউই ও ওমান) আমাদের দেশের জন্য “প্রাণভ্রমর”।
৯। “ফোর্সেস গোল ২০৩০” এর সম্পূর্ণভাবে পুন:মূল্যায়ন করত: বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও সমরনীতি পরিবর্তন এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় সর্বনিম্নে আনয়ন করা। এক্ষেত্রে তিন বাহিনীর জনবল, সাজ- সরঞ্জামকে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও যুগোপযুগী করা। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ২০০৬ সালের ইজরাইল – হিজবুল্লাহ লড়াই, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, প্যালেস্টাইনদের প্রতিরোধ, আফগানিস্থানের যুদ্ধ এবং ভূপ্রকৃতির আলোকে ক্ষুদ্র ও দক্ষ যৌথ সশস্ত্রবাহিনী, ক্ষুদ্রাত্রের উপর নির্ভরশীলতা এবং জনগণভিত্তিক যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে যুদ্ধের ঝুঁকি কমানো এবং আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি করা।
১০। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষার জন্য পরনির্ভরশীলতার পরিবর্তে প্রবাসে কর্মরত দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে ব্যবহার করে স্বনির্ভর ও নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
১১। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবহার সংস্কারপূর্বক যে কোন মূল্যে ঋণ ও সুদের হার ২%-৩% এর মধ্যে আনয়ণ এবং ব্যাংকসমূহের ব্যয় ও জনবল হ্রাস করত: তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনা চালু করা।
১২। সম্ভব হলে বার্টার পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য করার মাধ্যমে ডলার/পাউন্ড/ইউরো রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং ভারত ও চীনের সাথে বাণিজ্য ভারসাম্য সৃষ্টি করা।
১৩। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য যুবকদেরকে ব্যাপকহারে দেশী ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানিক সহযোগীতা নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিক শিক্ষা প্রদান এবং তদানুসারে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকাতে জনবল রপ্তানি বৃদ্ধি করা।
১৪। রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং (Reverse Engineering) এর মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভারী মেশিনারী এবং যন্ত্রাংশের এর ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে চেষ্টা করা।
১৫। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে বিকল্প ঔষধ (Alternative Medicine) এবং প্রথাগত মেডিক্যাল এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করত: চিকিৎসার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে স্বনির্ভর হওয়া। রোগীদের বিদেশমুখীতাকে আইন করে বন্ধ এবং রেফারেল পদ্ধতি চালু করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য টেকনিসিয়ান তৈরীতে আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে হবে।
১৬। বৈদেশিক অনুদান/দান ইত্যাদি নীতিমালা ২০১৬ এর কর্মপরিসর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালাকে বিকেন্দ্রীকরণ, সহজীকরণ এবং নিয়ন্ত্রণবিমুখ করতে হবে। যুদ্ধের সময় এই নীতিমালা সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এই পরিবর্তনে আমরা বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা হতে প্রচুর দান/অনুদান আনতে সক্ষম হবে যা আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সফলতা আনবে।
১৭। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর (বিজিবি, পুলিশ, আনসার এবং ভিডিবি) সংখ্যা, অস্ত্র ও সারঞ্জামাদিকে আধুনিকীকরণ ও দেশীয় প্রযুক্তি নির্ভর করার মাধ্যমে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত করত: ব্যয়ভার কমিয়ে আনতে হবে। মানুষের সাথে সম্পৃক্ত করণের মাধ্যমে নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আনসার ও ভিডিপিকে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহযোগী শক্তি হিসাবে ব্যবহার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৮। সিভিল ডিফেন্স এবং স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর সাথে দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় করার জন্য স্থায়ী নির্দেশিকা নূতনভাবে মূল্যায়ন ও প্রণয়ন করতে হবে।
১৯। দেশের বিচার ব্যবস্থা, পুলিশী সহায়তা ও আইনজীবীদের মধ্যকার ত্রিমাত্রিক সমন্বয় এবং বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বিচারিক দৈন্যতার মূলোৎপাঠন করত: তা জনমুখী এবং ব্যয় সংকোচনমুখী করতে হবে। ফলে মামলার জট কমবে এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
২০। আভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান নির্ভর প্রযুক্তিক গবেষণা ব্যয় কমপক্ষে বাজেটের ১% -১.৫% হতে হবে। এর মাধ্যমে স্বয়ংভর ও আত্মনির্ভরশীল শিক্ষা ও বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
২১। দেশের যুদ্ধ অবস্থার জন্য যুগোপযোগী সমস্ত আইন সংশোধন এবং সমন্বিত নীতিমালাসমূহ আগামী ৩ মাসের মধ্যে সংশোধনী করার প্রয়োজনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণের সম্পৃক্তকরণের জন্য তা গণশুনানী ও ওয়েবসাইটে দিতে হবে।
২২। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির আদলে সমস্ত প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা ও আইন এমনভাবে তৈরি এবং তার নিয়ন্ত্রণভার প্রদান করতে হবে যেন সামরিক বাহিনী যুদ্ধ পরিবেশ মোকাবিলার পরিবেশ তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে পারে।
২৩। ক্রিপ্টোকারেন্সী সম্পর্কীত নীতিমালা পর্যালোচনা করে যথাযথ দ্রুততার সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও মুদ্রা নীতিতে অন্তর্ভূক্ত করে দেশে কার্যক্রমের বৈধতা প্রদান করা।
২৪। নিজেদের তৈরি জাহাজে পণ্য পরিবহনের জন্য স্বংসম্পূর্ণ তা অর্জনের সবিশেষ চেষ্টা করতে হবে।
২৫। দেশের সমস্ত কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের জন্য সমবায় ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিপনন ব্যবস্থা এবং কৃষি ও শিল্প সুমারী অনবিলম্বে চালু করতে হবে।
২৬। মধ্যপ্রাচ্যের তৈল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা এবং মূল্য অবিরত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশেষ সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন অতীব জরুরী। যে কোন মূল্যে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২৭। ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতিটি নাগরিককে যুদ্ধ পরিস্থিতি ও তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। একই সাথে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুদ্ধ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
২৮। ব্যবসায়ীরা যুদ্ধকালীন সময়ে আর্শীবাদ অথবা অভিশাপের দায়ভার নিতে পারে। জাতির এই ক্লান্তিলগ্নে সমস্ত পর্যায়ের ব্যবসায়ীদেরকে “মুনাফা নয় দেশ বড়” এই মূলমন্ত্রে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে।
২৯। সরকারি ব্যবস্থাপনার সমস্ত কোম্পানি, কর্পোরেশন, বোর্ড আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদির কার্যকলাপ পুন:মূল্যায়ণকরত: একত্রীভূত করা এবং জনবল ও আর্থিক সংশ্লেষণ সমন্বয় করা।
৩০। সাপ্তাহিক ছুটি কমানোসহ উৎপাদন, সেবা, প্রযুক্তিক শিক্ষা, বিপনন ব্যবস্থা ইত্যাদি ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে হবে।
৩১। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল এর কার্যক্রমকে জোরদার করা।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ তথা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে অনেক ধরণের ধারণা, সমাধান পদ্ধতি ইত্যাদি সকল স্তরে এখন আলোচনার প্রধান বিষয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুদ্ধের মত করে চিন্তা এবং কাজ করতে হয়। আপাত:দৃষ্টিতে জনগণ ও নীতি নির্ধারকরা বিষয়টির গভীরতা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না। জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সুইজারল্যান্ডের ন্যায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামে জয়ী হতে হবে। বিশ্বে পরমাণু যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে কঠিন শক্তির প্রকাশ সীমিত ক্ষমতার পারমাণবিক বোমা (Tactical nuclear head) এবং বায়োলজিক্যাল ও রাসায়নিক অস্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। ইউরোপে গত ৯০০ বৎসরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা সভ্যতা, তাইওয়ান এবং ইজরাইল/প্যালেস্টাইনের মত আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র পারমাণবিক বোমায় ছিন্নবিছিন্ন হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ যদি তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ এবং প্রযুক্তি অনুন্নত দেশসমূহের সাথে সহজ শর্ত বিনিময় না করে তবে এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবেই। পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ গুটিকয়েক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং দেশের মাধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অশুভ প্রতিযোগীতা ও কলাকৌশল বন্ধ করে নমনীয় শক্তিকে উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। তবেই আমরা এই ধরায় শান্তির সুবাতাস পাবো। আমাদের দেশ ও জাতির তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেঁচে থাকার সংগ্রাম সার্থক হোক। একই সাথে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রকটতা কমে বিশ্বে শান্তি স্থাপিত হোক এই প্রত্যাশা হোক সবার।
লেখক:সাবেক সামরিক এটাচি ,কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস,ব্রি: জে: মোঃ নাসিমুল গণি, পিএইচডি, এমব্লিউএস, এমডিএস, এফডব্লিউসি, পিএসপি (অব:)
ই-মেইল: ghaniboby@yahoo.com
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |