আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | ভোর ৫:০২
এন. এ. হাসান।।রাজধানীর দক্ষিণখানের কাওলার এলাকায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও দক্ষিণখান নদ্দাপাড়ার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলি ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে দক্ষিনখান থানায় দুই গ্রুপের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি মামলা করা হয়।
কাওলার শিয়ালডাঙ্গা মোড়ে আশিয়ান গ্রুপের পয়সা বাজার সুপারশপের পার্কিং নির্মাণকে কেন্দ্র করে সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরবর্তীতে ওই দিন দিবাগত রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিনখান থানায় আশিয়ান গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন এবং দক্ষিণখানের মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের চাচা মোসলেহ উদ্দিন বাদী হয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা করেন।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘পয়সা বাজার সুপার শপের জমি দখলকে কেন্দ্র করে আশিয়ান সিটির নজরুল ইসলাম ও নদ্দাপাড়া নজরুল ইসলামের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন।
তারা বলেন, ‘পয়সা বাজারের ঝালাইয়ের কাজে বাধা দেন স্থানীয় নজরুল। এ নিয়ে আশিয়ান সিটির নজরুল ইসলামের সাথে স্থানীয় নজরুল ইসলামের তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় এক গ্রুপের লোকজন অপর গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। হামলার এক পর্যায়ে আশিয়ান সিটির একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার চলাকালে একজনকে পিস্তল হাতে নিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করতে দেখা যায়। অস্ত্রধারী ওই লোকটি আশিয়ান গ্রুপের লোক বলে দাবি স্থানীয়দের।
অস্ত্রধারী লোকটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণখান থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘যখন আশিয়ান সিটির নজরুল ইসলামের গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছিল, তখন আত্মরক্ষার্থেই তার লোকজন অস্ত্র হাতে নিয়ে ভয় দেখিয়েছে।’
আশিয়ান গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেনের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণখানের কাওলার শিয়ালডাঙ্গা মোড়ে আশিয়ান গ্রুপের পয়সা বাজার সুপারশপের পার্কিং নির্মাণের ঢালাই কাজ চলছিল। তখন আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে নদ্দাপাড়া ক্লাব মোড় এলাকার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (৪২), কামরুল ইসলাম (৩৫), এমদাদ হোসেন (৩২), জাহিদ হোসেন শুভ (২৮), মামুন (৪৪), সোহেল (৪০) ও মোসলেহ উদ্দিনসহ (৪৯) আরো অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও লাঠিসোটা নিয়ে আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের পথরোধ করে। পরে নজরুল ইসলাম ভূঁইয়াকে এলোপাথাড়ি মারপিট করে নীলা ফুলা জখম করে। এ সময় তার ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর করে। এছাড়াও গাড়ির ড্রাইভার মুহিতের মাথার উপরের অংশে ধারালো দা দিয়ে কোপ মেরে আহত করে। পরবর্তীতে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
অপরদিকে পাল্টা মামলায় মোসলেহ উদ্দিন উল্লেখ করেন যে, তাদের জায়গার একাংশ জোরপূর্বক দখল করে আশিয়ান গ্রুপের পয়সা বাজার সুপার শপের নির্মাণ কাজ করছিল। তখন তিনি সেখানে গিয়ে বলেন, ‘ জায়গার সমস্যার সমাধান না করে সেখানে কেন পয়সা বাজার শপিং মল নির্মাণ করা হচ্ছে।’ একথা বলা মাত্রই আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া (৫৫), রুহুল আমিন (৪৫), আশিয়ান গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান, মাজাহারুল ইসলাম, জিএম মাসুদ, রয়ান (৪২), ড্রাইভার মুহিত (২৮), রাকিব (৩৫), পাঞ্জাব (৪৫) ও শাহীনসহ (৩৬) আরো অজ্ঞাত ২০/৩০ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পথরোধ করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা করে নীলা ফুলা জখম করে। সেইসাথে আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার মুহিত ঘটনাস্থলে তাদের ১০/১৫ জন লোকের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে তুলে দেয়। এমতাবস্থায় গাড়ি চাপা পড়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে নজরুল ইসলামের লোকজন মোসলেহ উদ্দিনের ভাতিজা মামুনকে লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে হাত-পায়ে রক্তাক্ত জখম করে। তখন তিনি তার ভাতিজাকে বাঁচাতে গেলে হাতে-পায়ে ও পিঠে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এছাড়াও নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে তার দখলমুক্ত জমিতে ভাঙচুর করে ১৫ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিসাধন করে। তখন আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে নজরুল ইসলামের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে করতে তারা ভয়-ভীতি হুমকি দেখিয়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশিয়ান গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন অন্যদিগন্তকে বলেন, ‘ আই এম সরি। আপনি থানায় কল দেন, থানা-ই ভালো বলতে পারবে।’
অপরদিকে দক্ষিণখানের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ”ওই জমিটা ১৯৪৯ সনে আমার বাপ-দাদারা কিনে রাখছেন। শুধু তাই না আশেপাশে অনেক জমিই আমাদের। ১৯৯৭-৯৮ সালে যখন মাঠ পর্চা করে তখন আমরা একত্রেই ছিলাম। এখন আমরা বড় হয়েছি আমাদের জমি তাদের সাথে বন্টন করতে হবে। বর্ডার করতে গিয়ে দেখি আমাদের কাগজের সাথে সম্পত্তির মিল নেই। পয়সা বাজার শপিং মলে সাড়ে আট কাঠা জমি চলে গেছে। তখন আমরা পয়সা বাজারকে বলি- ‘আপনাদের ভেতরে আমাদেরও জমি চলে গেছে, আমাদের জমিটা আমাদেরকে বুঝিয়ে দেন।’ তখন তারা (পয়সা বাজারের লোকজন) বলে- ‘আমরা জমিটা কিনছি।”
তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে পয়সা বাজারের লোকজন মিমাংসায় আসে। তখন আসেন সিটির নজরুল সাহেব বলেন- জমির পরিবর্তে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে সাত-আট মাস ঘুরনো হয়। এখন তারা বলছেন, এই জমি তারা কিনে নিয়েছেন। তখন আমি বলি- আপনার ছোট ভাই জাহিদকে পাঠাইছেন, জমি মেপে সীমানা দিয়ে গেলেন। সেই সীমানার ভেতর আবার ঢুইকা গেলেন। এটা কি রকম! জোর খাটান।’
তিনি আরো বলেন, এমন করতে করতে তারা বিল্ডিং করলো। এখন আবার ঢালাই দিতে দিতে এপর্যন্ত চলে আসছে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছে, তাছাড়া আর কোনো কারণ নেই।
দুই গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া প্রসঙ্গে দক্ষিনখান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আফতাব উদ্দিন বলেন, জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন। দু’পক্ষের মামলা নেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হাফিজুর রহমান রিয়েল বলেন, ‘শেষ বিকেলের দিকে সন্ধ্যার আগে আগে একটি ঘটনা ছিল। শোনার পর সেখানে গেলাম। আশিয়ান সিটির মালিক নজরুল সাহেবের সাথে স্থানীয় নদ্দাপাড়া আরেক নজরুলের ঝামেলা হয়েছিল। গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানি না। আমরা আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করবো। সেখানে ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছি। এ বিষয়ে মামলা হবে।’
দ্বন্দ্বের কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পয়সা বাজার সুপার শপের কাজ করছিলেন আশিয়ান সিটির নজরুল সাহেব। তখন স্থানীয় নজরুল গিয়ে সেখানে বাধা দেন। এই নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।’
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:29 PM |
Isha | 6:49 PM |