উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ -মৃত্যুর ৩৫ বছরেও গড়ে ওঠেনি ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল চারণ কবি বিজয় সরকার স্মৃতি সংগ্রহশালা । ২১শে পদকপ্রাপ্ত এই কবির স্মরণে গানের একাডেমি করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি । ফলে সঠিক স্বরলিপি না থাকায় এ প্রজন্মের শিল্পীরা নিজেদের ইচ্ছা মতো বিজয় সঙ্গীত পরিবেশন করে চলেছেন ।
১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি নড়াইল সদর উপজেলার বাসগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । বাবার নাম নবকৃঞ্চ অধিকারী মা হিমালয় অধিকারী । কবি ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে পরলোকগমণ করলে কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয় । কবির মৃত্যুর পর তার স্মৃতি ধরে রাখার মানসে ১৫ বছর আগে ডুমদি গ্রামে কবির বসত ভিটায় জেলা পরিষদের অর্থায়নে ছোট পরিসরে এক কক্ষ বিশিষ্ট বিজয় মঞ্চ তৈরি করা হয় । জনবল না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে সেটিও নষ্ট হতে বসেছে ।
সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, জেলা পরিষদ নির্মিত বিজয় মঞ্চটির দেওয়াল এবং পিলারে ফাটল ধরেছে ।দেবে গেছে বারান্দার বিভিন্ন অংশ । ঘরের ভেতরে বাসা বেধেছে পোকামাকড় । দূর দূরান্ত থেকে আগত বিজয় ভক্তদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই । বিদ্যুৎ সংযোগ নেই । নেই পানি পানসহ পয়নিস্কাশনেরও ব্যবস্থা । শিল্পীর জীবদ্দশায় হিন্দু অধ্যুষিত এই গ্রামে যে আনন্দ উৎসব দেখা যেত এখন সেখানে সুনশান নীরবতা ।
বিজয় ভক্ত মো.ফসিয়ার রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,চোখে না দেখলে কেউই বিশ্বাস করতে চাইবেন না এত বড় একজন নাম করা কবিয়ালকে কিভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে । তিনি বলেন এই অজপাড়াগায়ে জন্ম নিয়েই মনে হয় বিজয় সরকার অপরাধ করেছিলেন । অথচ তাকেসহ তার গান নিয়ে ভারতে গবেষণা করা হচ্ছে । তিনি প্রায় দুই হাজারের মতো বিভিন্ন গান লিখে গেছেন ।
চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী বলেন, বিজয় সরকারের কয়েকটি গানের মর্মাথ নিয়ে ৫০টি ছবি একেছি । তার গান মানুষের মনকে ছুয়ে যায় । সুলতান মেলা,বিজয় মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার ছবিগুলো এ প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে ।
জেলা প্রশাসক আনজুমান বলেন, কবিয়াল বিজয় সরকার ছিলেন মরমী গানের স্রষ্ঠা । যে গান মানুষকে আকৃষ্ট করে,মনকে দোলা দেয় । আসরের প্রয়োজনে তিনি আসরে বসেই গান রচনা করে গাইতে পারতেন । এমন মরমী কবির স্মৃতি এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তার বসতভিটাসহ নির্মিত বিজয়মঞ্চ সংরক্ষণে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।