আজ শুক্রবার | ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৯:২১
বিডি দিনকাল ডেস্ক :- তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি গত ১ ডিসেম্বর তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভ ভিডিওতে জাইমা রহমানের ব্যাপারে এ ধরনের মন্তব্য করেন।
আজ রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিডিওটি ১ লাখ ৬১ হাজার বার দেখা হয়েছে, মন্তব্য জমা পড়েছে প্রায় ২ হাজার ছয় শ। এই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের ওই বক্তব্যের ব্যাপারে নিজেরা করির সমন্বয়ক ও অধিকারকর্মী খুশি কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন ও শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদের মন্তব্য জানতে চেয়েছিল দ্য ডেইলি স্টার।
তারা প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘নারী বিদ্বেষী, কুরুচিপূর্ণ ও নারীর প্রতি অবমাননাকর’ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
খুশি কবির বলেন, ‘আমি মনে করি এটা কেবল রুচিহীনই না, এটা কোনো ভদ্র মানুষের ভাষা হতে পারে না। একজন প্রতিমন্ত্রী এ ধরনের ভাষায় কথা বলবেন! তার বক্তব্য কেবিনেটের পুরো ভাবমূর্তিকে নষ্ট করেছে। তার বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমি আশা করি, সরকার ও দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং এমন একটা মানুষ আমাদের সংসদে থাকবে তা আমি চাই না।’
তিনি বলেন, ‘এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি দেশের সব নারীর সম্মানহানি করেছেন। এর জন্য তাকে দেশের সব নারীদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’
তিনি মনে করেন, প্রতিমন্ত্রীর সেই অবমাননাকর বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবশ্যই সবার প্রতিবাদ করা উচিত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয় ভাবতে যে, আমাদের কষ্টের করের টাকা এমন মানুষদের বেতন এবং ভোগের জন্য ব্যয় করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী হয়তো বা নিজের জনপ্রিয়তা বা দলের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে এ ধরনের কথা বলেছেন। কিন্তু এটা দলের কোনো বিষয় নয়। এতে করে জাতির একটা বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি আশা করি এটি নিয়ে সবাই প্রতিবাদ করবে। এখনো বিষয়টি নিয়ে তেমনভাবে জানাজানি হয়নি এ কারণেই হয়তো বা তেমনভাবে প্রতিক্রিয়া আসছে না।’
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘সংবিধানের ওপর শপথ নেয়া একজন মানুষ এ ধরনের বক্তব্য দেবে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা সংবিধান অবমাননা। বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংসদ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রতিষ্ঠিত কোনো গণমাধ্যমে বিষয়টি না আসায় এখনো সেভাবে প্রতিবাদ হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বিশ্বাস করছে না। তাছাড়া এখানে রাজনৈতিক ক্ষমতার বিষয়টি জড়িত আছে। আমি প্রত্যাশা করি, এ ঘটনার প্রতিবাদ হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘এমন দায়িত্বশীল একজন ব্যক্তি কীভাবে এই কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে পারে তা আমারে বোধগম্য নয়। সেই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রী দেশের সব নারীকে অবমাননা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘কার সম্পর্কে বলা হয়েছে সেটা বড় কথা না, কথা হলো একজন নারী সম্পর্কে বলেছেন। একজন নারী সম্পর্কে এমন দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি এমন বক্তব্য রাখতে পারে এটি অকল্পনীয়, অভাবনীয়, এটা শুধু কুরুচিপূর্ণই নয়, এটা ভয়াবহ অন্যায়। কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী এভাবে কথা বলতে পারেন না।’
অধ্যাপক কাবেরী গায়েন মনে করেন, ‘আমাদের দেশে রাজনৈতিকভাবে সিলেকটিভ ওয়েতে প্রতিবাদ জানানোর একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। শুধু নারীদের প্রতিবাদ করতে হবে এমন নয়। দেশের সব মানুষকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। রাজনীতি এক জিনিস, আর ক্ষমতা, শালীনতা, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সেটাকে প্রকাশ করা আরেক জিনিস। আমাদের দেশে নারী নেত্রীদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন আছে। যার যে রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকুক না কেন এই বিষয়ে নীরবতা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়।’
শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ বলেন, ‘মন্ত্রীর বক্তব্যে নারীদের প্রতি অবমাননা এবং বর্ণবৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। রাজনীতি করতে হলে অনেক কিছু জানতে হয়। আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ যারা উচ্চ পর্যায়ে আছেন তারা আসলে সেই পদের কতটা যোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের মানুষ কীভাবে এসব পদে আসেন তা আমি বুঝতে পারি না। এরা কোত্থেকে উঠে এসেছে, এদের সমস্যা কোথায় সেটি নিয়ে কথা বলতে হবে। বারবার এই বিষয়গুলো হচ্ছে। এদের নিয়ে বলার মতো ভাষা আমার জানা নেই। তাকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। অন্য দেশে হলে তাকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হতো বা তিনি পদত্যাগ করতেন। আমি মনে করি না এসব মানুষ এতো উঁচু পদে যাওয়ার মতো লোক।’
শাওন মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে এখন প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছেন। সবার মধ্যে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি ঢুকে গেছে। আমি নিজেই এখন কিছু লিখতে ভয় পাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এতটাই দমনমূলক হয়ে গেছে যে, কেউ আর কোনো বিষয়ে লিখতে বা বলতে সাহস পান না।’
‘আমাদের দেশে জবাবদিহিতা নেই। দেশের জনগণ অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই তারা আর তেমন কিছু প্রতিবাদ করছেন না। কারণ তারা বুঝে গেছেন যে, সমঅধিকার বা বিচার পাওয়াটা এখন অনেক দুরূহ কাজ। সব কিছু রাজনৈতিক হয়ে গেছে। আমরা পার্থিব উন্নয়নের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি, আমাদের মেধা মননের যে উন্নয়ন দরকার, চর্চার দরকার সেটি নিয়ে ভাবছি না,’ বলেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের মোবাইল ফোনে দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটে কল করা হয়। তবে তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে পরিচয় ও বিষয় উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি। দুপুর ৩টা ৪২ মিনিটে আবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, তিনি বিষয়টি জানেন না। আরেকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জানলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি বিষয়টি সঠিকভাবে জানি না। সেই প্রতিমন্ত্রী যদি নারী বিদ্বেষী কোনো কথা বলে থাকেন অবশ্যই সেটি দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই প্রতিমন্ত্রীর বিচার করার অধিকার রাখেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী। আমাদের এখানে কিছুই করার নেই।’ সূত্র দ্য ডেইলি স্টার
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:08 PM |
Asr | 3:13 PM |
Magrib | 5:34 PM |
Isha | 6:54 PM |