আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১:১০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা:কোটাবিরোধী স্লোগানে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসিতে জড়ো হয়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী।
বিজয় একাত্তর হলের গেট বন্ধ করে দেয় ওই হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা। শিক্ষার্থীরা জোর করে ভিতরে ঢুকতে চাইলে তাদের ওপর বারবার আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ওই হলের পদপ্রত্যাশী নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোনাফ প্রান্ত। যদিও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা হল গেট খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত একত্তরসহ সব হল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
রাত সাড়ে এগারোটার পর জিয়াউর রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কবি জসিম উদদীন হলসহ সব হল ও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা হলপাড়ায় মিছিল নিয়ে এসে সমবেত হন। এছাড়াও শহীদুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, এফএইচ হল, একুশে হল, রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে জড়ো হন টিএসসিতে। হাজারো শিক্ষার্থীর স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে টিএসসির চারপাশ।
রোববার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় এলাকায় সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ শুরু করে তারা।
উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস:এদিকে ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ঘিরে এসব স্লোগান দিয়েছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
রোববার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় এলাকায় সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ শুরু করে তারা।
বিক্ষোভ মিছিলে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘চাইতে আসলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।বিক্ষোভ শেষে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।
স্লোগানে উত্তাল শেকৃবি: প্রধানমন্ত্রীর উক্তিকে কেন্দ্র করে রাজাকার, রাজাকার স্লোগানে উত্তাল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এর প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করেছে ছাত্রলীগ।
রোববার রাত ১১ টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হল শেখ লুৎফর রহমান হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি-রাজাকারের ঘাটি’, ‘শেরেবাংলার মাটি, রাজাকারের ঘাটি’,’চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’-ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চেয়েছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন করেছেন যা শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্যে লজ্জার। সেজন্য আমরা তার এই কথার প্রতিবাদে এত রাতেও রাস্তায় নেমেছি।
মিছিল শেষে ছাত্রলীগের কর্মীবৃন্দ এই স্লোগান ও বিক্ষোভ মিছিলের বিরোধীতা করে এবং এধরণের স্লোগান দিয়ে মিছিল না দেওয়া জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়। পরবর্তীতে জয়বাংলা এবং ডাইরেক্ট একশন স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত যবিপ্রবি:‘তুমি নই, আমি নই, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ঘিরে মধ্যরাতেই এ স্লোগান দেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।
রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ূর হলে এ স্লোগানের রব উঠে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের চারটি ব্লকের শিক্ষার্থীরা হঠাৎ বের হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানে স্লোগানে সরগরম হয়ে ওঠে হল। এক পর্যায়ে মিছিলটি হল থেকে বের হয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্লোগান দিতে দিতে প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে এসে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে।
এসময় তারা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না’, ‘তুমি নও, আমি নই, রাজাকার রাজাকার’ প্রভৃতি স্লোগানে উত্তাল হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
রাত সাড়ে বারোটার দিকে মিছিল শেষ হয়। আজ দিনে পরবর্তী সীদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে মিছিল শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
স্লোগানে মুখর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জের ধরে ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’, ‘কিসের তোর অধিকার,তুই বেটা রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিলে যোগ দেয়।
রোববার রাত ১১ টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, শেখ হাসিনা হলে দফায় দফায় স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে সাড়ে ১১ টার দিকে বঙ্গবন্ধু ও নজরুল হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে জড়ো হোন।
এসময় শিক্ষার্থীরা— ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার, ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’, কিসের তোর অধিকার,তুই বেটা রাজাকার’ তুই বেটা রাজাকার এই মূহুর্তে বাংলা ছাড় স্লোগান দেন।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য প্রদানকালে মুক্তিযোদ্ধাবাদে সবাইকে রাজাকারের সন্তান ও নাতি বলেছেন। যেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না তাই তারা এর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন । তার বক্তব্য অনুযায়ী আমরা সবাই রাজাকার। আমরা এর বিরুদ্ধে এবং কোটা বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছি।
মধ্যরাতে উত্তাল শাবিপ্রবি, ছাত্রলীগের অবস্থান:‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ঘিরে এ স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের সামনে অবস্থান নেন।
রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলে এ স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি ছাত্রীদের আবাসিক হলগুলোতে এ স্লোগান দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের চারটি ব্লকের শিক্ষার্থীরা হঠাৎ বের হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানে স্লোগানে সরগরম হয়ে ওঠে হল। এদিকে সৈয়দ মুজতবা আলী হল থেকে বড় একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু হলের সামনে এসে নানা ধরনের স্লোগান দেয় এবং তাদের মিছিলে যোগ দিতে ‘রাজাকার বের হ, রাজাকার বের হ’ বলে স্লোগান দেয়। পরে মিছিলটি শাহপরান হলের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চায়।
একদিকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ আর অন্যদিকে জয় বাংলা স্লোগানে প্রকম্পিত হয় ক্যাম্পাস। শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শাহপরান হলের সামনে অবস্থান দেখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সামনে আগ না বাড়িয়ে মিছিল বন্ধ করে স্থান ত্যাগ করেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন। এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় মিছিল বের করেছি।
উল্লেখ্য, রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যে ‘ মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা কোটা পাবে না, তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে ‘ এমন প্রশ্ন রাখেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মুখর হতে দেখা যায়।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |