আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:১৭
মনির হোসেন জীবন – বগুড়া সদর থানা এলাকায় মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মোঃ লিটন নামে জনৈক এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি মোঃ মোমিনসহ ৪ কুখ্যাত খুনিকে রাজধানীর মতিঝিল এবং ওয়ারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) । গ্রেফতারকৃতরা হলেন, হত্যা কান্ডের মূল হোতা মোঃ মোমিন (২৭), মোঃ তৈয়ব (২৯), মোঃ তানজিল (২৮) ও মোঃ রাহুল (২০)। এদের মধ্যে তৈয়ব, তানজিল ও রাহুল তিন আপন ভাই এবং মোমিন তাদের আপন মামা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি বিশেষ দল গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর মতিঝিল ও ওয়ারী এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করতে সক্ষম হয়। আজ রোববার দুপুর ১২ টায় র্যাব-৩, টিকাটুলি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান। আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ২০২২ সালে বগুড়া সদর থানা এলাকায় মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে লিটনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যাকান্ডের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার প্রধান এজাহার নামীয় প্রধান আসামি হলো মোঃ মোমিন। বাকী তিনজন মোঃ তৈয়ব (২৯), মোঃ তানজিল (২৮) এবং মোঃ রাহুল (২০) তার সহযোগী আসামী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা র্যাব জানায় , তৈয়ব, তানজিল ও রাহুল তিন আপন ভাই এবং মোমিন তাদের আপন মামা। এছাড়াও ভিকটিম লিটন একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করত। এছার আসামিরা বগুড়ার সদর এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল। আটককৃতরা আরও জানায়, এদের মধ্যে আটক রাহুল ওই এলাকায় মাদক বিক্রয় করার সময় তাদের পাশের বাড়িতে বসবাসরত সালমান মাদক বিক্রয় করতে বাধা প্রদান করে। এ নিয়ে সালমান ও রাহুলের মধ্যে একটি বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এই বিরোধের জের হিসেবে ২০২২ সালের ১৬ জুলাই তারিখ বেলা ১১ টার দিকে আটক রাহুল এবং সালমান পরস্পর বাকবিতন্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে পাশের বাড়ির বাসিন্দা ভিকটিম লিটন ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, ভিকটিম লিটনও ইতিপূর্বে তাদের মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে আসছিল, যার জন্য ওই মামলার আটক প্রধান আসামি মোমিনের সাথে তার বিরোধ চলে আসছিল। পরবর্তীতে রাহুল ভিকটিম লিটন ও সালমানকে শায়েস্তা করার জন্য তার দুই ভাই তৈয়ব ও তানজিল, তার মামা মোমিন, নানা সোলাইমান, খালা রিতা বেগম এবং খালাত ভাই রাব্বিসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে ডাক দিলে তারা বাঁশের লাঠি, কাঁঠের বাটাম, লোহার রড, ধারালো চাকু, ধারালো হাসুয়াসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ভিকটিম লিটনের বাড়িতে হামলা চালায় এবং এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এলোপাতাড়িভাবে বাঁশের লাঠি ও কাঁঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে লিটনসহ তার পরিবারের সবাইকে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা ভিকটিমসহ জখমপ্রাপ্ত সকলকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম লিটনের অবস্থা আশংকাজনক দেখে তৎক্ষণাত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই ভোর রাতে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম লিটন মারা যায়। পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, এবিষয়ে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বগুড়া জেলার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় মোমিনকে প্রধান আসামি এবং তানজিল, রাহুল, তৈয়ব, সোলাইমান, রাব্বি, রিতা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ওই মামলার ৭নং আসামি রিতা বেগমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও অন্যান্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। র্যাব জানিয়েছে, পরবর্তীতে পলাতক থাকা অবস্থায় ৫নং আসামি সোলাইমান ঘটনার কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করে। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর মতিঝিল এবং ওয়ারী থানা এলাকায় র্যাব-৩ এর সদস্যরা পৃথক ঝটিকা অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামীসহ চারজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এছাড়া ওই মামলার ৬নং আসামি রাব্বি বর্তমানে পলাতক রয়েছে এবং তাকে গ্রেফতারের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চলমান রয়েছে। র্যাব সূত্র বলছে, আটক আসামিরা সকলেই মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়াও তারা বগুড়া সদর এলাকায় চিহ্নিত এবং প্রতিষ্ঠিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা মূলত মাদক ব্যবসা করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। আটক হওয়া মোমিন ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দুই বার মাদকদ্রব্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক আটক হয়ে ৪৫ দিন এবং ৫১ দিন কারাভোগ করেছে। এছাড়া আটক তানজিলের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে এবং তৈয়ব এর বিরুদ্ধে বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর থানায় ২০০৪ সালের একটি মারামারি মামলা রয়েছে। আজ দুপুরে র্যাব-৩ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) ফারজানা হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদ করে তাদের প্রত্যেককে বগুড়া সদর থানায় পুলিশের নিকট সোপর্দ করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |