- প্রচ্ছদ
-
- প্রধান খবর
- বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দঃ মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সংকটে
বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দঃ মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সংকটে
* টিকা না পেয়ে অনেকে মারা যাচ্ছেনঃ মান্না * মনুষ্য বসবাসে দেশকে অযোগ্য করে তুলেছেঃ রিজভী
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট, ২০২১ ১:১৯ অপরাহ্ণ
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন,মুক্ত পরিবেশ ছাড়া মুক্ত সাংবাদিকতা করা যায় না। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই বলেই আজ সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করতেই রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।এসরকারের আমলে সাগর-রুনিসহ ৪২জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হচ্ছে না।আজ যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে শুধু সাংবাদিক নয় গনতন্ত্রকামী সকল মানুষকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধপ্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে এক সাংবাদিক সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব বলেন।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দৈনিক নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার ও এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম,ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার ফরিদ আহমদ, সাবেক সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত, বাছির জামাল, রাশেদুল হক, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মাহফিজুল ইসলাম রিপন, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ গাজী আনোয়ারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, সাব-এডিটর কাউন্সিলের প্রশিক্ষন ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক নাবিল রহমান, বিএফইউজের সাবেক দফতর সম্পাদক আবু ইউসুফ, সাংবাদিক নেতা আব্দুর রহমান খান, জেসমিন জুঁই,সাখাওয়াত হোসেন মুকুল, আবু হানিফ প্রমুখ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কুদ্দুস রিজভী আহমেদ বলেন, দেশে শোষন, নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম,খুন ও লুটপাটের রাজত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে দেশ মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ঐতিহাসিক সত্যের প্রমাণ লাগে না। আপনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিনা? আপনার পরিবার মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিনা সেটাই এখন প্রমাণ সাপেক্ষ্য ব্যাপার। সত্যিকার অর্থে আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন নাকি বৃহত্তর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন সেটাই এখন প্রধান ট্রপিক। তিনি বলেন, যারা সত্যিকার অর্থে মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে অপমান করা হচ্ছে। আর তারা (আওয়ামী লীগ) দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চালাচ্ছে।
রিজভী বলেন, লুটপাট ও দুর্নীতি আড়াল করতেই সরকার একের পর এক ইস্যু তৈরি করে নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করারও পায়তারা করা হচ্ছে। যেনো কেউ তাদের লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে সেজন্যই এমনা করছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, রুহুল আমিন গাজী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। উনি কারাগারে কেন? তার উপর কেন নির্যাতন করা হচ্ছে? বর্তমানে সত্য প্রকাশ করলেই সাংবাদিকরা হামলা-মামল ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমনকি সাংবাদিকদের খুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিন এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহার করুন।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস। বাংলাদেশে এতো গুম হচ্ছে অথচ সরকার কোনো মনোযোগ দিচ্ছে না। কারণ এই গুমের প্রধান হোতাই তো এই সরকার। প্রতিটি গৃহে আজ আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন, কাকে তুলে নিয়ে যাবে সেই শঙ্কা এখন ঘরে ঘরে। গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের আর্তনাত তারা শুনতে পায় না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, করোনা মোকাবেলায় এসরকার ব্যর্থ হয়েছে। টিকায় ব্যর্থতার কারণে এতো গুলো লোক মারা গেল।তিনি বলেন, এরা মানুষের জান বাঁচাতে পারবে না, জীবন বাঁচাতে পারবে না। এরা কেবল মানুষের জেলে দিতে পারবে, নির্যাতন করতে পারবে,নির্বিচারে গুম, খুন করতে পারে।
তিনি বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে সবাকে এ জালিম সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মাঠে নামতে হবে। যে যেরকম করে পারেন, লড়াইটা ছাড়বেন না। সবাই রুখে দাঁড়ান, খুব যে বেশি দিন লাগবে ব্যাপারটা এমন না। পতনের আগে যে রকম কাঁপতে থাকে এই সরকার তেমনি কাঁপছে। ওদের একেক জায়গার দুর্বলতা মানুষের সামনে প্রকাশ পাচ্ছে। পায়ের নিচ থেকে মাটি তাদের চলে যাচ্ছে।
মান্না বলেন, রুহুল আমিন গাজীকে যারা কোনো রকম সত্য কারণ ছাড়াই মিথ্যা অভিযোগে এত দিন ধরে গ্রেফতার করে রাখতে পারে তাদেরও একদিন পতন হবে। আসিফ নজরুল একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছে। সে কারো নাম বলেনি। ওদের গায়ে লাগলো কেন? কারণ ওদের অনেক লোক ফাস্ট হোম, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম করে রেখেছে বাইরে। টাকা-পয়সা জমিয়েছে। তাদেরও ওই অবস্থা হবে।
দৈনিক নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন,সাংবাদিকরা এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না।বিভিন্ন কালো আইন ও হামলা করে, মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। রুহুল আমিন গাজী সাহেবকে বেআইনিভাবে দশ মাস আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি শুধু একজন সাংবাদিক না, তিনি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ। সাংবাদিক ও পেশাজীবিদের দাবি আদায়ের শীর্ষ নেতা।তিনি সর্বদা সত্য কথা বলেন, কাউকে ভয় পান না। যে কারণে আজকে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ১০ মাস আটক করে রাখা হয়েছে। যে আইনে তাকে আটক করা হয়েছে সেটি একটি গণবিরোধী আইন। এটি মুক্ত সাংবাদিকতা বিরোধী আইন।
সভাপতির বক্তব্যে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না, সে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও থাকে না। আমাদের সংবিধানে বাক স্বাধীনতার কথা উল্লেখ থাকলেও সরকার সেটা মানছে না বরং গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যেখানে সত্য প্রকাশে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আজ সাংবাদিকের কলম স্বাধীন নয়, সেটি কাজ করছে উপর মহলের নির্দেশে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে গণতন্ত্র অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের এনেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। ৭২-৭৫ সালে ৪টি সংবাদপত্র রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। পরেরবার এসে দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমসসহ অনেক পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। কাজেই মুক্ত সাংবাদিকতা চাইলে মিডিয়ার জাতশত্রুদের সরাইতে হবে।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন,দেশে বাকস্বাধীনতা নিয়ে আজ চরম সংকটে লেখক-সাংবাদিকরা। এখন কথা বলতেও ভেবেচিন্তে বলতে হচ্ছে। পরিস্থিতির কারণে শুধু গণমাধ্যমই নয়, সাধারণ নাগরিকরাও কিছু বললে বা লিখলে সাত পাঁচ ভেবেই বলে। কোনো কথা সরকারের বিরুদ্ধে যায় কি-না, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে যায় কি-না, এটি এখন বড় সংশয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরা আজ সত্য কথা লিখতে পারছেন না। লিখতে হচ্ছে সরকার ও মালিক পক্ষকে খুশি রেখে।তিনি বলেন, বলেন, দেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্টসহ যেসব আইন হয়েছে, সেগুলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছি, তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী ও সাংঘর্ষিক। তিনি রুহুল আমিন গাজীর মুক্তি দাবি করে বলেন, অচিরেই সাংবাদিক সমাজ কঠোর কর্মসূচি দেবে।
Please follow and like us:
20 20