আজ সোমবার | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১২:৫৪
ব্যবসায়ীরা গ্যাস চাইলে সরকার দিতে পারবে কিন্তু যে মূল্যে বাইরে থেকে কেনা হবে সেই মূল্যই দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগণের টাকা দিয়ে গ্যাসে ভর্তুকি দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেও তিনি জানান।
সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর পয়েন্ট অব অর্ডারে করা এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা জানান। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে পর্ব তো শেষ হয়ে গেল। এখন তো আর উত্তর পাওয়ার বা প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। এ সময় স্পিকার বলেন, আপনি পরে কোনো একদিন বলবেন। চুন্নু বলেন, আমি পয়েন্ট অব অর্ডারে বলছি, এখন কিন্তু দুটি বিষয় খুব আলোচনায় এসেছে। প্রথমত ৪৫০ কোটি ডলারের আইএমএফ’র যে ঋণ সে ঋণের বিষয়টা, এটা পাওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে, একটি হলো যে ওই ঋণের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে, এর ফলে কৃষিপণ্যে যেটা উৎপাদন করে তার সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় যাবে। যদি বেড়ে যায় তার ফলে আমাদের অর্থনৈতিক যে চাপ আছে তা বাড়বে, ফলে মূল্যস্ফিতি বেড়ে যাবে, সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। কীভাবে সরকার এর মোকাবিলা করবে?
ইতিমধ্যে একজন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু আমাদের দেশে এসেছিলেন, তিনি যখন পাকিস্তানে যান, উনি পাকিস্তান সফরের পরে (পিটিআই)পাকিস্তান ইনসাফ যে দল, সে দল ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যায়। এই ভদ্রলোক আসার পরে অনেকে মনে করেছিল এদেশেও কিছু একটা হয়ে যাবে।
তবে উনি যাবার পরে সরকারকে বেশ একটু খুশি খুশি লাগছে আর অন্য দলটিও দেখছি বেশ খুশি। তবে আমরা জাতীয় পার্টি ওইভাবে নিচ্ছি না, স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি। তবে ওনার সফর নিয়ে রাজনৈতিকভাবে একটা গুঞ্জন আছে। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা হয় কিনা?
এ সময় সংসদে এ বক্তব্যের আপত্তি জানাতে থাকেন সংসদ সদস্যরা। চুন্নু তাদের বলেন, আরে আমাকে বলতে দেন, হৈচৈ করছেন কেন? এরপরে স্পিকার তার মাইক বন্ধ করে দেন, বসতে অনুরোধ করেন। তারপরেও চুন্নু তার বক্তব্য দিয়ে যেতে থাকেন। পরে স্পিকার আবার মাইক চালু করেন। চুন্নুকে বলতে শোনা যায় এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি উত্তর দেন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে, জাতি জানবে।
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন ভেবেছিলাম আজ আর কথা বলবো না, কিন্তু প্রশ্ন যখন হয়েছে আমি উত্তর দিচ্ছি। এর আগেই প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত প্রশ্ন উত্তর শেষ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ ঋণ দেয় যে দেশ ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। এখানে তেমন কোনো শর্ত দিয়ে কিন্তু আমরা ঋণ নেইনি। অর্থনৈতিকভাবে যেমন বিদ্যুৎ আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন পৃথিবীর কোন দেশ বিদ্যুতে, গ্যাসে ভর্তুকি দেয়, কেউ দেয় না।
আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, সরবরাহ নিশ্চিত করেছি কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ডে দেড়শ’ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর আমরা এখন মাত্র ৫ ভাগ বাড়ালাম, আর বাড়ছে কিছু গ্যাসের দাম। গ্যাস যেটা আমরা ৬ ডলারে স্পট মূল্যে কিনতাম এলএনজি সেটা এখন ৬৮ ডলার। কতো ভর্তুকি দেবে সরকার। সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে এখনো আমরা নিম্নআয়ের বা মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কিন্তু আমরা ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিয়েছি সেখানে মানুষ মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন তেল, চিনি, ডাল এগুলো যাতে সীমিত আয়ের যারা কিনতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তার থেকে নিম্নআয়ের যারা তাদের জন্য মাত্র ১৫ টাকায় ওএমএস এর চাল আমরা দিচ্ছি। সেইসঙ্গে তেল, ডাল, চিনিও তারা কম দামে কিনছে। আর হতদরিদ্র যারা কিছুই কিনতে পারে না তাদের কিন্তু আমরা বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। যারা স্বল্প আয়ের তারা যাতে কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এ ব্যবস্থা করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি। এখন গ্যাস উৎপাদন, গ্যাস বিতরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎ বিতরণে যদি ৪০, ৫০ হাজার, ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয় তাহলে সেটা কি করে দেবো। দাম বাড়লে মূল্যস্ফিতির নিয়ন্ত্রণের যে চেষ্টা করে সেটার কিছু সফলতা কিন্তু আমরা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে মুল্যস্ফিতি কিন্তু কিছুটা কমেছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ১৩.৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফিতি। একটা উন্নত দেশের কথা, পৃথিবীর সব দেশেই এ অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সে অবস্থায় পড়েনি। আর বিদ্যুতের দাম যদি বৃদ্ধি পায়, মানুষ যদি একটু সাশ্রয়ী হয়, যেমন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবন সেখানে কিন্তু আমরা বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয় তাহলে কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারে। আর গ্যাস অধিক দামে যারা আমাদের বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী এখানেও অনেকে আছে তাদের তো আমি স্পষ্ট বলেছি যে, গ্যাস আমরা দিতে পারবো কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসবো সেই মূল্য যদি আপনারা দেন তাহলে আমরা গ্যাস দিতে পারবো। এখন যেটুকু বাড়িয়েছি তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায় তাহলে যে মূল্যে কেনা হবে সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোনো যৌক্তিকতাই নাই। আর এটা ভুলে যাবেন না যে ভর্তুকির টাকাটা তো জনগণেরই টাকা।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে
এর আগে সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এখন থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে। বগুড়া-৫ আসনের এমপি মো. হাবিবর রহমানের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সফলতার ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আর্থিক খাত, ইত্যাদির দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে নেয়ার লক্ষ্যে ৫ জন মন্ত্রী, ১ জন প্রতিমন্ত্রীসহ ৩০ সদস্যবিশিষ্ট স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করে গত বছর ১৬ই আগস্ট গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:07 PM |
Asr | 3:10 PM |
Magrib | 5:31 PM |
Isha | 6:50 PM |