আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:১৯
ডেস্ক : লিবিয়ায় মানবপাচারের ঘটনায় জড়িত বিদেশে পলাতক দালালদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। লিবিয়ার মিজদা শহরে গত মাসে মানবপাচারকারীদের বর্বরোচিত হামলায় ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হন।
সিআইডি জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এরই মধ্যে এসব বাংলাদেশিকে পাচারের সঙ্গে ১০-১২ জন দালালের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহেই ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া শুরু হবে।শুধু লিবিয়ার মানব পাচার দালালদের জন্য নয় সকল দেশের মানবপাচারের দালালদের বিরুদ্দে এই ব্যবস্থা থাকবে ।
বর্বরোচিত এ ঘটনায় ২৬টি মামলা হয়েছে দেশে। এর মধ্যে সিআইডি ১৫টি মামলার তদন্ত করছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৪৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই হামলায় আহত ১২ ভুক্তভোগীর মধ্যে ৯ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর তাদের নিয়ে গতকাল রবিবার বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই এসব কথা জানান সিআইডির ডিআইজি আবদুল্লাহ হেল বাকী এবং বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা লিবিয়ায় নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, এ ঘটনায় করা মামলার তদন্তকালে অনেক আসামিই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিদেশে অবস্থানরত দালাল ও মূল আসামিদের গ্রেপ্তারে অচিরেই রেড নোটিশ জারি করা হবে। বর্বরোচিত ঘটনার পর সিআইডি আহত ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ফলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাংলাদেশ ও লিবিয়ার যৌথ উদ্যোগে বোরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ৯ ভুক্তভোগী ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। সেখান থেকে সিআইডির মানবপাচার ইউনিট তাদের বাহিনীর সদরদপ্তরে নিয়ে আসে।
মামলার তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থলের বর্ণনা, ঘটনার সার্বিক বিবরণ ও প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য নিতে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য নেওয়া হয়। পরে জবানবন্দি নিতে তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। পাচারের শিকার যে ৯ জন দেশে ফিরেছেন, তারা হলেন- ফরোজ বেপারি, জানু মিয়া, ওমর শেখ, সজল মিয়া, তারিকুল ইসলাম, বকুল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, সোহাগ আহমেদ ও সাইদুল ইসলাম। তবে বাপ্পী দত্ত, সম্রাট খালাসী ও সাজিদ নামে তিন ভুক্তভোগীকে এখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী জানু মিয়া জানান, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। সোহাগ ও শ্যামল নামে দুই দালালের মাধ্যমে তিনি লিবিয়ায় যান। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মতিঝিল নিয়ে আসা হয় তাকে। তার পর বাসে করে যান বেনাপোল সীমান্তে। সেখান থেকে কলকাতা হয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাই। ওখান থেকে দুবাই হয়ে মিসরে যান তিনি। মিসরে যেখানে তাকে রাখা হয়, সেখানে আরও ১০০ বাংলাদেশি ছিল। মিসর থেকে তাদের নেওয়া হয় লিবিয়ার বেনগাজিতে। সেখানে সোহাগ ও শ্যামলের সহযোগী রাহাত তাদের আটকে রাখে। এমনকি তাদের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে টাকাও দাবি করে তারা। টাকা না পেয়ে পাচারকারীরা তাদের খাবার বন্ধ করে দেয়।
পরে বাংলাদেশে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি রাহাতের দেশীয় সহযোগীদের কিছু টাকা দেন। এর কিছু দিন পর বেনগাজি থেকে অন্য এক দালালের কাছে তাদের হস্তান্তর করে রাহাত। ২৭ জানুয়ারি একটি চাকরি দেওয়া হয় তাকে। সেখানে এক মাস কাজ করার পর তাকে বেতন দেওয়া হয় ১৭-১৮ হাজার টাকা। অথচ লিবিয়া নেওয়ার আগে তাকে বলা হয়েছিল- তিনি ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন।
জানু মিয়া আরও জানান, বেশি টাকা উপার্জনে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি যাওয়ার চিন্তা করেন তিনি। এর জন্য তানজিরুল নামে এক দালালকে তিনি ৬০ হাজার টাকাও দেন। এই তানজিরুলের বাড়ি তার বাড়ির কাছেই। সে জানু মিয়াকে জানায়, পথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ভার তার। পরে গত ১৫ মে তিনিসহ ১০ জন একটি গাড়িতে করে ত্রিপলিতে যাওয়ার জন্য রওনা দেন। তাদের সঙ্গে আরও দুটি গাড়িতে অন্তত ২০ বাংলাদেশিও ত্রিপলি যাচ্ছিলেন। পথে মিজদা শহরের কাছে তারা অপহরণের শিকার হন। সেখানে অপহরণকারীরা তাদের কোনো খাবার দিত না। তাদের অপহরণ করে যেখানে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে ঘানা ও নাইজেরিয়ার লোকজনও ছিল।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জানু মিয়া বলেন, অপহরণকারীরা আমাদের কাছে অর্থ দাবি করে। যদি অর্থ না দেওয়া হয় তা হলে আমাদের খুন করা হবে বলে জানানো হয়। এমনকি প্রতিদিন কাউকে না কাউকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ দেখানো হতো আমাদের। জানানো হতো- টাকা না দিলে তাদেরও এমন পরিণতি হবে। গত ২৭ মে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ঘানা ও নাইজেরিয়ার ভুক্তভোগীরা এক অপহরণকারীকে হত্যা করে। এর পরেই চক্রের অন্য সদস্য এবং স্থানীয়রা এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। এতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন এবং ১২ জন মারাত্মকভাবে আহত হন।
বেঁচে ফেরার বিষয়ে জানু মিয়া বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকার পর কেউ একজন হাসপাতালে নিয়ে যায় আমাদের। কিন্তু দুটি হাসপাতাল ঘুরেও আমাদের চিকিৎসা মেলেনি। পর দিন ভোরে আমাদের মরুভূমিতে ফেলে চলে যান স্থানীয়রা। সেখান থেকে আমরা স্থানীয় এক লিবীয় নাগরিকের বাসায় আশ্রয় নিই। সেই লিবীয় সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা আমাদের ত্রিপলির একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। তার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের চিকিৎসা দেয়নি। পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের লোকজন এসে আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |