এস, এম, মনির হোসেন জীবন- রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি বেঁচা কেনা সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম হোতা মোঃ শহিদুল ইসলাম মিঠুসহ ৫ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোঃ শহিদুল ইসলাম মিঠু (৪৯), মিজানুর রহমান (৪৪), মোঃ আল মামুন ওরফে মেহেদী (২৭), মোঃ সাইমন (২৮) ও রাসেল হোসেন (২৪) গ্রেফতার করা হয়। আজ র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক নোমান আহমেদ কিডনি বেঁচা কেনা সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেনেন্ট কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এসব তথ্য জানান। লেফটেনেন্ট কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, রাজধানীর ভাটারা, বনশ্রী ও মিরপুর এলাকায় কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর সদস্যরা যৌথ অভিযান চালায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮ টা থেকে অভিযান শুরু হয়ে আজ বুধবার ভোর ৫ টা পর্যন্ত চলে। অভিযানকালে র্যাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি বেঁচা কেনা সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম হোতা মোঃ শহিদুল ইসলাম মিঠুসহ এই চক্রের ৫ সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তিনি আরও জানান, এসময় তাদের নিকট থেকে বিভিন্ন ভিকটিম এর সাথে চুক্তির এফিডেভিট কপি, ভুক্তভোগীদের পাসপোর্টসহ মোট ১৪টি পাসপোর্ট, কিডনি ক্রসম্যাচিং এর বিভিন্ন দলিলাদি, দেশী ও বিদেশী মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফটোকপি, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের জাল সীলমোহর, খালি স্ট্যাম্প, সিপিইউ, মোবাইল ও সীমকার্ড জব্দ করা হয়। র্যাব-১ এর অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, রাজধানীতে প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগত তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে। ইতোপূর্বে র্যাবের অভিযানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি কেনা বেচা চক্রে অন্যতম হোতা ও ফেসবুক পেজের এডমিনসহ চক্রের ৫ সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবকে জানায়, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি কেনা বেচা এই চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা মূলত ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় এর এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এই চক্রের সদস্যরা পাশ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনা বেচা সদস্যদের চক্রের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে বলে জানা যায়। এসংঘবদ্ব চক্রের ১ম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। চক্রের ২য় দলটি ১ম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ৩য় অন্য একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সাথে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভূয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভূক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। এই চক্রের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভূক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপাচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ/অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়। সংবাদ সম্মেলনে লেফটেনেন্ট কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, গ্রেফতারকৃতরা এই চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগী প্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে এবং অগ্রীম ২ লাখ টাকা প্রদান করতো। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবের কাছে স্বীকার করে জানান, এই চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম অভিযুক্ত মোঃ শহিদুল ইসলাম মিঠু (৪৯) ২০১৬ সালে নিজের চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে গমণ করে। সেখানে অবস্থানকালীন সে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখতে পায় এবং সে নিজেই কিডনি প্রতিস্থাপনের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে। পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে যোগসাজশে সে এখানে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে এবং অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন। এখন পর্যন্ত তার মাধ্যমে ৫০ এর অধিক কিডনি ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে।