আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:৫২
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ বিদেশ থেকে দেশে যারা অর্থ পাঠান, রাষ্ট্র তাদের রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। রাষ্ট্র যে স্বীকৃতিই দিক না কেন, মূলত তাদের অধিকাংশই প্রবাসী শ্রমিক, যারা পরিবার থেকে দূরে থেকে এবং মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করেন। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের এখন চরম দুর্দিন চলছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিজ দেশে ফিরে যেতে হয়েছে বহু বাংলাদেশি শ্রমিককে। কিন্তু যে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই শ্রমিকেরা, সেই নিজ দেশেই চরমভাবে অবহেলিত তারা। নতুন আয়ের পথ বন্ধ। কবে তারা কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন, কেউ জানেন না। অথচ ক্রান্তিকালে রাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। বহু পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। অনেকের নুন আনতে পান্তা ফুরাবার অবস্থা।
গত বছরের চেয়ে রেমিট্যান্স এক-চতুর্থাংশ কমে যেতে পারেÑবিশ্বব্যাংকের এমন শঙ্কাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন রেমিট্যান্সযোদ্ধারা। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বেশির ভাগ দেশ ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করায় প্রবাসে কর্মরত বিপুল অভিবাসী শ্রমিক ইতিমধ্যে চাকরি হারিয়ে বাধ্য হয়েছেন দেশে ফিরে যেতে। কিন্তু দেশে ফেরা এসব শ্রমিকের সঙ্গে চলছে নিষ্ঠুর মশকরা। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আড়াই থেকে তিন লাখ অভিবাসী করোনাকালে দেশে ফেরত গেছেন। প্রায় এক বছর ধরে তারা দেশে অবস্থান করছেন। নতুন করে আবার কবে বিদেশে গিয়ে চাকরি করতে পারবেন, সেটাও জানেন না তারা। করোনার কারণে হুন্ডির বদলে সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স যাওয়ায় সরকারের হিসাবের ঘর শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক ও তাদের পরিবার চলছে অভাব-অনটনে। দেশে আসা এবং প্রবাসে থাকা উভয় শ্রমিকদের সময় কাটছে নিদারুণ কষ্টে। প্রবাসী নারী কর্মীদের অবস্থা আরো গুরুতর। ক্ষেত্রবিশেষে অবর্ণনীয়।
মহামারির আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কমলেও এরপর আবার বেড়েছে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ আর প্রবাসীদের বাস্তব অবস্থা বড় সাংঘর্ষিক। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সব চুক্তি ভঙ্গ করে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিককে ফেরত পাঠিয়েছে। সরকার ৪ শতাংশ সুদে অভিবাসীদের ঋণ ঘোষণা দিয়েছে। এতে প্রবাসীদের আগ্রহ কম। রয়েছে অভিমানও। কারণ, গার্মেন্টস মালিকদের ঋণ দিয়েছে ২ শতাংশ সুদে। রেমিট্যান্সের হিসাব আর প্রবাসীদের বাস্তব অবস্থার অসামঞ্জস্য ভেদ করতে গিয়ে ব্যাপক গোঁজামিল ধরা পড়েছে।
অভিবাসন খাতে গত ৭-৮ বছরে গড়ে প্রবৃদ্ধির হার ১৩-১৪ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস জুলাই-ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধির হার ওঠে ৩৮ শতাংশ। কীভাবে সম্ভব হলো এ ম্যাজিক? এই সময়ে প্রবাসে যাওয়ার হার কমেছে। উল্টো প্রবাস থেকে চলে এসেছে অনেকে। তাদের মধ্যে রিক্তহস্তে ফেরত আসার সংখ্যাও অনেক। প্রবাসে থেকে যাওয়াদের অনেকে ঠিকমতো বেতন পাননি। তাহলে রেমিট্যান্স বাড়ল কীভাবে?
ভেতরগত তথ্য রহস্যময়। সরকার গত বাজেটে প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দ রেখেছিল ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। কেউ ১০০ টাকা সরকারি চ্যানেলে পাঠালে ২ টাকা ফেরত পাবে। একদিকে সরকারের দেওয়া এই সুবিধা, অন্যদিকে করোনার কারণে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন বন্ধ থাকায় প্রায় সব টাকা এসেছে ব্যাংকিং চ্যানেলে। আর বিদেশ যাওয়া হবে নাÑএমন শঙ্কায় অনেকে বিদেশের ব্যাংকে জমানো টাকা বা অন্য কোনো সম্পদ গলিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে নিয়ে এসেছেন। এসব টাকা যোগ করে বড় অঙ্কের হিসাব দাঁড় করিয়েছে সরকার। ব্যাংকিং চ্যানেল দিয়ে এ সময়ে বেশি টাকা আসায় ব্যাংক ব্যবস্থাও করোনাজনিত সংকট মোকাবিলায় এই অর্থ ব্যবহার করতে পেরেছে। অথচ তাচ্ছিল্য-নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েই চলছেন রেমিট্যান্সযোদ্ধা প্রবাসীরা।
করোনার সময় বিদেশে যাওয়া এবং বিদেশফেরত শ্রমিক উভয়ে দুদিকেই গঞ্জনার শিকার। দেশে-বিদেশে গণমাধ্যমও কম যায়নি। কুয়েতসহ আরব দেশগুলোর গণমাধ্যমে হয়েছে আরেকটু বেশি। আর দেশে করোনার জন্য ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরতদের কেবল দায়ী করাই নয়, নাজেহালও করা হয়েছে। আজেবাজে মন্তব্যও হয়েছে অনেক। চলছে এখনো। সামাজিক হয়রানির করতে গিয়ে প্রবাসীদের জেল খাটানোও হয়েছে। রাজনৈতিক হয়রানিও কম হয়নি। দিন যত গড়াচ্ছে ততই প্রবাসীদের মনে জমা হওয়া বিষাদের কালো মেঘ ঘন বর্ষণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগেই এই প্রাদুর্ভাব হানা দিয়েছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালিসহ আরও নানা দেশে। যেখানে বহু বাংলাদেশি অভিবাসী কাজ করেন। ওই দেশগুলোয় বছরের শুরুর দিকেই লকডাউন শুরু হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যান প্রবাসী শ্রমিকরা। বিশেষ করে যারা অবৈধভাবে আছেন, তাদেরকে জোর করে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার বৈধ শ্রমিকদের অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও বেশির ভাগের সেটা নবায়ন করা হচ্ছে না। আবার চুক্তির মেয়াদ যাদের আছে, তাদের অনেককেই ছুটির নামে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অনেকে বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণ করেছিলেন। বিদেশ থেকে ফেরত আসায় এখন ঋণ কীভাবে শোধ করবেন, তা নিয়ে বহু শ্রমিক বেকায়দায় রয়েছেন। যেসব শ্রমিক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে ফিরে গেছেন, তাদের দ্রুত দেশের ভেতরেই পুনর্বাসনের দাবি উঠেছে। কিন্তু সরকার এখনো এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি। অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তারা যেন শ্রমিকদের বাংলাদেশে ফেরত না পাঠিয়ে তাদের দেশেই বিকল্প কর্মসংস্থানে যুক্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু সরকারের এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি দেশগুলো।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |