আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:২২
নজরুল ইসলাম মানিক, সাভার ও আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে প্রায় ৬৩ ঘণ্টা ধরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বার্ডস গ্রæপের শ্রমিকরা। পরে সেনাবাহিনীর হাতে বার্ডস গ্রæপের চেয়ারম্যান আটক হয়েছে এমন খবরে সার্ভিস বেনেফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে টানা ৬৪ ঘন্টা পর বুধবার দুপুর ১টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন কারখানাটির শ্রমিকরা। শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া শ্রমিক অশান্ত থাকায় মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টির কারণ স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক। পঁচন ধরেছে উত্তর বঙ্গ থেকে আসা কাঁচামাল।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার বাইপাইলে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে প্রায় ৬৩ ঘণ্টা ধরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বার্ডস গ্রæপের শ্রমিকরা। বার্ডস গ্রæপের শ্রমিকরা এখনো সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। পাওনাদি পরিশোধ না করা পর্যন্ত তারা সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।এছাড়া শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাগুলো উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে।
অবরোধকারী শ্রমিকরা জানান, গত মাসের ২৮ তারিখ থেকে বার্ডস গ্রæপের সকল কারখানা লে-অফ করা হয়। শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখে এবং সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ ৩০ সেপ্টেম্বর দেয়ার কথা ছিল। চুক্তিমত শ্রমিকদের বেতন কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করলেও যে সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল তা পরিশোধ করতে আরো তিন মাসের সময় চেয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। যার কারণে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট এক নোটিশের মাধ্যমে বার্ডস গ্রæপ লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশে কর্তৃপক্ষ জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ কিছুদিন যাবৎ কারখানাতে কোনো প্রকার কাজ নেই। এরপরেও কারখানা কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে আর্থিক লোকসানের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছিল। শত চেষ্টা করেও নতুন কোনো কাজের অর্ডার সংগ্রহ করতে পারেনি, যা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। এমতাবস্থায় গত ২৮ আগস্ট থেকে গ্রæপটির আর এন আর ফ্যাশনস লিঃ, বার্ডস গার্মেন্টস লিঃ, বার্ডস ফেডরেক্স লিঃ এবং বার্ডস এ এন্ড জেড লিঃ এর সকল সেকশনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিল্পাঞ্চলে এখন পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। সার্বিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নজরদারি রয়েছে। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, সেনাবাহিনীর হাতে বার্ডস গ্রæপের চেয়ারম্যান আটক হয়েছে এমন খবরে সার্ভিস বেনেফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে টানা ৬৪ ঘন্টা পর দুপুর ১টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন কারখানাটির শ্রমিকরা। এরপরই শ্রমিকরা সড়ক থেকে সড়ে কারখানার প্রধান ফটকে গিয়ে অবস্থান নেন। ওই কারখানার শ্রমিকরা দুপুর ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেয়ার পর বিকেল ৫ুটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল করতে শুরু করেছে।
শিল্পপুলিশ জানায়, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে শিল্পাঞ্চলের জিরাবো রোডে অবস্থিত এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড ব্যতীত বাকি সব কারখানা চালু রয়েছে। এ আর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড স্ববেতনে সাধারণ ছুটি রয়েছে। এছাড়া টঙ্গাবাড়ি এলাকায় ম্যাংগো টেক্স লিমিটেড স্ববেতনে ছুটি রয়েছে, তবে ওই অঞ্চলের মন্ডল নিটওয়্যার, ন্যাচারাল ডেনিম, ন্যাচারাল ইন্ডিগোসহ অন্যান্য সব কারখানা চালু রয়েছে। এদিকে আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর এলাকায় এনভয়, দ্যা রোজ, হামীম, শারমীন, মেডলার, অনন্তসহ অন্যান্য সকল কারখানা চালু রয়েছে। তবে ‘সেতারা’ স্ববেতনে সাধারণ ছুটি রয়েছে। অন্যদিকে বাইপাইলের স্কাইলাইন কারখানা স্ব-বেতনে ছুটি রয়েছে তবে চালু রয়েছে অন্যান্য সকল কারখানা। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বুধবার অধিকাংশ পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাগুলো উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ সমস্যাসহ নানা সমস্যার কারণে বেশ কয়েকটি কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
তবে গতকাল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বাইপাইল এলাকায় এবং ডিওএইচএস সামনে মহাসড়কটির পয়েন্ট দুটিতে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ শুরু করে বার্ডস গ্রæপের শ্রমিকরা। পরবর্তীতে ডিওএইচএস এর সামনে থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সরে গেলেও বাইপাইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বার্ডস গ্রæপের এক শ্রমিক জানায়, গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর আমাদের আইনগত পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো ধরনের পাওনাদি পরিশোধ না করে সকল শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে। আমরা আমাদের পাওনাদি না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহার করবো না।
এ ব্যাপারে শিল্পপুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বার্ডস গ্রæপের সকল কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। এ সময় শ্রমিক কর্মচারীদের আগস্ট মাসের বেতন সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ ও সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ ৩০ সেপ্টেম্বর পরিশোধের দিন ধার্য করা হয়। চুক্তিমতো শ্রমিকদের বেতনের টাকা পরিশোধ করলেও ৩০ সেপ্টেম্বর সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণের টাকা দানের আরও তিন মাস সময় চায় প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত টাকা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। যা এখন পর্যন্ত চলছে।
এদিকে, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ইপিজেড থেকে চন্দ্রামুখী লেন ফাঁকা রয়েছে। তবে এ লেনে রিকশা, অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র চলতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ এসবের চালকদের বিরুদ্ধে। এদিকে, শুধু নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক নয়, পাশাপাশি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর পয়েন্টও। যার ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচামাল আটকা পড়েছে।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |