আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | ভোর ৫:১০
বিডি দিনকাল ডেস্ক :- সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখনই জাতীয় আপতকালীন পরামর্শ কমিটি গঠনসহ পাঁচটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি সর্বাত্মক পরিকল্পনা গ্রহনের এই দাবি উপস্থাপন করে।
পাঁচটি সমন্বিত দাবি হচ্ছে:
# দরিদ্র মানুষকে ঘরে রাখার জন্য তাদের ঘরে নগদ কমপক্ষে এককালীন ১৫ হাজার টাকা এবং খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে।
# মানুষকে বাইরে বের হবার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
# অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে অতি দ্রুত টিকা প্রদান সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য একটি সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট রোড-ম্যাপ প্রনয়ন করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অবিলম্বে দেশে টিকা উতপাদনের কার্য্কর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
# বর্তমানে সারাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সর্বাত্মক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবারহ, আইসিইউ ও করোনা বেড বৃদ্ধিসহ অত্যাবশ্যকীয় চিকিতসা সামগ্রি ও পর্যাপ্ত চিকিতসক-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে।
# অনেক বিলম্বে হলেও এখনি দেশে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সকল রাজনৈতিক দল, এনজিও এবং সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে একটি জাতীয় আপতকালীন পরামর্শ কমিটি গঠন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “ এই পাঁচটি বিষয় করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রধান টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে যে লড়াই সেটা বস্তুত একটি দীর্ঘস্থায়ী লড়াই।”
“ অবিলম্বে দরিদ্র, দুঃস্থ ও কর্মহীন জনগোষ্ঠির প্রত্যেককে অবিলম্বে এককালীন নগদ ১৫ হাজার টাকা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের জিডিপির ৬-৭% এই খাতে বরাদ্দ করেই দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে মানবিক সহায়তা দেয়া সম্ভব। যা দরকার সেটা হলো সরকারের স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। ঐক্যবদ্ধভাবে এই মহাসংকট মোকাবেলার জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে পুনরায় উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “ লকডাউন কার্য্কর করতে হলে দিন আনে দিন খায় শ্রেণীর মানুষের কাছে টাকা পৌঁছাতে হবে, খাদ্য পৌঁছাতে হবে তাদের হাতে। সেজন্য এই কাজগুলো করা দরকার এই মুহুর্তে।”
“ যেটা বলেছেন ড. আবদুল মঈন খান যে এই মুহুর্তে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ করুন যাতে করে এই শ্রেনীর মানুষের কাছে তার খাদ্য ও তার টাকা পৌছানো যেতে পারে। এটাই একমাত্র পথ এই লকডাউন কার্য্করের।”
লকডাউনে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং দিন আনে দিন খায় শ্রেনীর মানুষের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকার দিশেহারা অবস্থা তুলে ধরতে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন হয়।
করোনার লকডাউনে অভাবে তাড়নায় মুন্সিগঞ্জের দিনমজুর দ্বীন ইসলামের আত্মহত্যা, দিন আনে দিন খায় শ্রেনীর মানুষের দুর্ভোগ, তাদের জীবন-জীবিকার কষ্টের নানা ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ করোনা মহামারী একটা সর্বাত্মক যুদ্ধ। ভোট ডাকাত সরকার করোনা যুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তো নেয়নি বরঞ্চ তারা ব্যক্তিগত আচার আচরণ, হিংসা ছড়ানো ও বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে জাতিকে ভয়াবহ বিভক্তির দিকে ঠেলে দিয়ে করোনা যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের পরিবেশ বিনষ্ট করেছে।”
“ সম্প্রতি সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচার যুদ্ধকালীন সময়ে একজন অদক্ষ সেনাপতির আচরণের সমতুল্য। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা প্রথম থেকেই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একসাথে সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে এই বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলার আহবান জানিয়েছিলাম এবং বিকল্প প্রণোদনা ও বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।”
করোনা ক্ষমতাসীনদের জন্য আর্শীবাদ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনপ্রতি আড়াই হাজার টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি আর হতদরিদ্রের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রি চুরির কাহিনী এসব দেখে মনে হয় করোনা সরকার দলীয় লোকজনের জন্য যেন বরং আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের এক অবস্থানপত্রে ধরা পড়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রদেয় ৫০ লক্ষের তালিকায় ১৪ লক্ষ ৩৩ হাজার লোকের নামই ভুয়া। আজকের পত্রিকায় একটা খবর আছে যে, ঝিনাইদহে দুই জন কোটিপতিকে আ্পনার এই ত্রাণ দেয়া হয়েছে। একজনের নাম খোকন সরকার আরেক নাম হচ্ছে রাজু দাস। তারা কোটিপতি। একজনের জুয়েলারি আছে, আরেকজনের কোম্পানি আছে।”
“ মেগা প্রজেক্টের মেগা দুর্নীতির সব কাহিনী তো আপনাদের জানা আছে। এসকল মেগা প্রজেক্টে প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে চরম অস্বচ্ছতা, অদক্ষতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় ও মহা দুর্নীতির মহা রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। এই ব্যাপারে ইতোপূর্বে অনেকবার বলা হয়েছে। ওই সকল প্রকল্পের অর্থ বর্তমানে মানুষের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে বরাদ্দ দিতে পারে সরকার। কিন্তু তা তারা করছে না।”
করোনা টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “ আজকে টিকা প্রদানকে গুরুত্ব দিতে হবে। সারা পৃথিবীতে আজকে প্রমাণিত হয়েছে- যেসব দেশ ৭০/৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে তারাই কিন্তু করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।এর কোনো বিকল্প নাই।”
“ আমরা লাখে লাখে টিকার হিসাব দেখলে হবে না। এখানে কোটি কোটি টিকা একেক মাসে আসার হিসাব আমরা দেখতে চাই। তাহলেই বাংলাদেশকে করোনার এই ভয়াল গ্রাস থেকে আমরা পরিত্রাণ করতে পারবো, নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। সেই লক্ষ্যে আমি আবার সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, এই ব্যাপারে রাখ-ঢাক না করে অতি দ্রুত কোটি কোটি টিকা আমদানি করার ব্যবস্থা করেন, জনগনকে রক্ষার ব্যবস্থা করেন, এদেশের মানুষের জীবন-জীবিকাকে রক্ষা করেন। তা নাহলে আপনারা এদেশের ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, একদিন এদেশের জনগন আপনাদের ব্যাপারে সঠিকভাবে আপনার ব্যর্থতা ইতিহাসে লেখে রাখবে।”
জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন কমিটির আহবায়ক স্থায়ী কমিটি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক বলেন, “ গত বছর দুই কোটি মানুষের কাছে আমরা সাহায্য পৌঁছিয়ে দিতে পেরেছিলাম। এবার এই দ্বিতীয় টেউয়ের আমরা আগের মতোই ব্যবস্থা নিয়েছি। এবার প্রতিটি জেলায় আমাদের দলের অফিসে হেলথ সেন্টার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ঔষধ- স্বাস্থ্য সামগ্রি থাকবে। অলিরেডি এই কাজ বেশ কয়েকটি জেলায় শুরু হয়ে গেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি জেলার অফিসে এই হেলথ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে।”
দরিদ্র মানুষকে আর্থিক সাহায্য ও খাবার-দাওয়ার। যেহেতু লকডাউন। কোথাও গেলে আমরা প্রশাসনের থেকে বাধাপ্রাপ্ত হই। সেজন্য আমরা যে যা পারি সীমিত সামর্থের মধ্যে মানুষজনকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছি। একটা বিরোধী দল হিসেবে এতো কষ্টের মধ্যেও আমরা করোনা রোগীদের পাশে আছি ও কাজ করে যাচ্ছি।”
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ বক্তব্য রাখেন।
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:29 PM |
Isha | 6:49 PM |