আজ শনিবার | ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১২:০৩
বিডি দিনকাল ডেস্ক :- সরকারের সকল হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে শনিবার জনগনকে ‘সার্বজনিন ভোট বর্জনে’র ডাক দিয়েছে বিএনপি।
শুক্রবার সকালে দলের সর্বোচ্চ নীতিনিধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা বলতে চাই, এই একদলীয় বাকশালী সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তাই তাদের অন্যায় ও অবৈধ হুমকিকে পরোয়া করার আর কোনো কারণ নেই।”
‘‘ সার্বজনিন ভোট মাধ্যমে চলমান আন্দোলনে জনগনের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ও অংশগ্রহন একদলীয় শাসনের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষ শিগগিরই মুক্তি পাবে এই প্রত্যাশা আমরা ব্যক্ত করছি।”
মঈন খান বলেন, আমরা আজকে গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি এই আহ্বান জানাব, আপনারা এই জনপ্রিতিনিধিত্ববিহীন বর্তমান যে সরকার সেই সরকারের কোনো হুমকি-ধামকি অথবা তাদের কোনো ভয়-ভীতিতে চিন্তিত হবেন না। আপনারা সাহসিকতার সঙ্গে সেই সরকারের প্রদত্ত ভয়ভীতির মোকাবিলা করুন, যে বা যারা আপনাকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করতে চায় তাদের চিহ্নিত করুন।”
‘‘ আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই, ভাতা কার্ড জব্দ করে কিংবা ভাতা বন্ধ করে দিয়ে কিংবা আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্যকরণ কোনো অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত হবেন বা হচ্ছেন ভবিষ্যতে তাদের আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট কারচুপি করতে সরকার ও সরকারির দলের বিভিন্ন নীল-নকশার পরিকল্পানা যেমন, ছাত্র লীগ ও যুব লীগের কর্মীরা লাগামহীন জ্বাল ভোট প্রদানের পরিকল্পনা, ভোটার সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো, মৃত ও প্রবাসী ব্যক্তির নামে ভুঁয়া ভোট প্রদান প্রভৃতি বিষয়গুলো তুলে ধরেন মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা দেখেছেন, আজ থেকে অল্প কয়েক মাস আগে এক উপনির্বাচনে ৫৩ সেকেন্ডে ৪৭ টি ভুঁয়া ভোটের সিল মারা হযেছিলো। আমরা কি বলব এটা গ্রিনিচ বুকের রেকর্ডে অন্তুর্ভুক্ত করা উচিত। সেই ধারা ৭ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনে তারা আরেকটি কলঙ্কিত অনিয়ম ঘটাতে যাচ্ছে … সেটা আমাদের কারো বলার অপেক্ষা রাখে না।”
‘‘ বিএনপির পক্ষ থেকে আজ আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার হুমকি, ভাতা কার্ডধারী অসহায় মানুষের জীবনজীবিকাকে হুমকিতে ফেলা কিংবা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পোস্টাল ভোট অথবা অন্য কোনো ভুমিকায় তাদেরকে অবতীর্ণ করিয়ে নির্বাচনে প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এর প্রত্যেকটি আইনগত অপরাধ। বিশেষত যারা আমাদের দরিদ্র ট্যাক্সপেয়ারের যে অবদান সেই অবদান থেকে রাষ্ট্রীয় ভাতা ও বেতন পাচ্ছেন তারা দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র থেকে এই সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এটা দল ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনো অনুদান নয়।অতএব ভাতা কার্ডের বিনিময়ে বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে ভোট দিতে বাধ্য করা সম্পূর্ণ বেআইনি।”
গুলশানে নিজের বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। যেখানে মঈন খানের সাথে ছিলেন দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।
‘বিএনপির অবস্থান’
আবদুল মঈন খান বলেন, ‘‘ বিএনপির একটি উদারনৈতিক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দল। বিএনপিকে নিয়ে অনেক গল্প সরকার সাজিয়েছে, অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। আমরা জানি অতীতে হয়ত এমন একটি বিশ্ব পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিলো … আপনারা জানেন, আফগানিস্তানের একটি চিত্র ছিলো তখন হয়ত সরকারের এই সব গাল-গল্প অনেককে মিথ্যাভাবে প্রভাবিত করেছে কিন্তু আজকের পৃথিবী আলাদা। আজকে সরকার নতুন করে যদি সেই ২০১৪ এর ফর্মূলা এপ্লাই করে বিএনপি এই শান্তিপূর্ণ উদারনৈতিক দলের কোনো মিথ্যা ভাবমূর্তি দেশে বা বিদেশে প্রচার করতে চায় বা চাইছে সেটা কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়ে গেছে।”
‘‘ বিশ্বের মিডিয়া ও বিশ্বের গনতন্ত্রীকামী মানুষ তারা বাংলাদেশের আজকে তারা কোন চিত্রে দেখেছে সেটা কিন্তু তারা ইতিমধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছে। এখানে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই। আমি বলেছি ২৮ অক্টোবরের ক্র্যাকডাউনের কথা তারাই বলেছে, আজকে নতুন করে তারা যে কথাগুলো বলছে যে, একজন মানুষের ইচ্ছায় আজকে বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের ইচ্ছা নির্ধারিত হবে… এটা কোদিন হতে পারে না।”
তিনি বলেন, ‘‘ ইনশাল্লাহ আমরা এই দেশের এই অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারি সরকারকে একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় হটিয়ে দিয়ে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করব।”
‘‘ সরকার ভাবছে ৭ জানুয়ারি তাদের জয়লাভের দিন। আমি বলব, ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের পরাজয়ের দিন। কারণ সেদিন তারা বাংলাদেশের নতুন করে অপমৃত্যু ঘটাবে।”
‘সরকার নাশকতা সৃষ্টি করে দায় চাপাচ্ছে’
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ এর আগেও ঘটেছে যে, আমাদের আন্দোলনকে বিপদগামী করার জন্য, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য সরকার নিজেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় আমাদের ওপর চাপানো চেষ্টা করেছে। এখনো সেই অপচেষ্টা চলছে। আপনারা ক‘দিন আগে দেখেছেন যে, কেউ কিছু জানে না কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো যে, হাসপাতালগুলোতে একটা নির্দিষ্ট দিনে রেডি রাখার জন্য যাতে তারা চিকিৎসা করতে পারে। ঠিক ওইদিন একেবারে ঢাকা মহানগরীর ভেতরে বেশকিছু গাড়িতে আগুন ধরে গেলো এবং বেশ কিছু লোক সেখানে মারা গেলো।”
‘‘ এবং কোনো তদন্ত ছাড়াই সেদিন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো যে, এটা করেছে, যারা অবরোধ করেছে তারা। গোটা ব্যাপারটা একটা অপরাধের কথা, একটা অনুমান নির্ভর একটা কথা বলা … তারপরে সেই কাজটা ঘটানো এবং ঘটিয়ে তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো। এটা এখন থেকে নয়, বহু বছর ধরে সরকার এই অপকৌশল চালিয়ে আসছে। তারা বিরোধী দলের আন্দোলনটানে বিপদগামী করার জন্য অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ এখানো তারা তারা নির্বাচন করছে, বিরোধী দল এই নির্বাচনে নাই। এরপরও কয়েকজন মানুষ মারা গেলো, অনেক মানুষ আহত হলো, অনেক জায়গায় অগ্নিসংযোগ হয়েছে, বাড়িঘর আক্রমন হয়েছে সেটা কে বলবে? বিএনপি এই নির্বাচনের মধ্যে নাই বা যারা বিরোধী দল আন্দোলনের রত তারা নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নাই।”
‘‘আমরা স্রেফ বলছি জনগনের কাছে এই নির্বাচন একটা প্রহসন, এটা অর্থহীন নির্বাচন যেটাতে দয়া করে কেউ জড়িত হবেন না। কারণ এটা একটা অপরাধমূলক ততপরতা, এটাতে জড়িত হওয়াও অপরাধ। আমরা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছি। আর কোনো আহ্বান আমাদের নাই। অতএব আর কোনো কাজ করলে ওইটা দায় আমাদের ওপর নাই। এই বর্জন করার আইনগত অধিকার আমার কাছে।এই বর্জন যারা করবে তারা আমাদের আহ্বান শুনবে। এর বাইরে অন্য যা করবে সেটা তাদের(সরকার) হুকুমে করবে আমাদের হুকুমে না।”
‘ভোট মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনই হয়ে গেছে’
আবদুল মঈন খান বলেন, ‘‘ ভোট তো যেদিন মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৩০ নভেম্বর সেদিনই হয়ে গেছে। সরকার প্রকাশ্যে অত্যন্ত লজ্জা ও কলঙ্কের বিষয়… মানুষ ভোট চুরি করে, ভোট রিগিং করে গোপনে.. আর আজকে ভোট-চুরি ভোট রিগিং হয় প্রকাশ্যে… এর চেয়ে বড় লজ্জার কথা তো হতে পারে না। প্রকাশ্যে আজকে ৫ তারিখে … যে কোনো লোককে জিজ্ঞাসা করুন তারা বলে দেবে কোন আসনে কে আসবে।”
‘‘ কিসের ৭ তারিখ ভোট? ৭ তারিখে একটা ঘোষণা হতে পারে… নির্বাচন তো হয়েই গেছে। আমরা সরকারের এই ভাওতাবাজী, ধাপ্পাবাজী, ভুয়া নাটক, তামাশা আমরা ল্যাজিটিমাইজ করবে না। সেই কারণেই আমরা এটা প্রত্যাখান করেছি। এটা ইলেকশন না এটা সিলেকশন।”
‘ওরা দেশ নিয়ে খেলা করছে’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ ওবায়দুল কাদের খেলার কথা। বিএনপি রাজনীতিকে খেলা বলেই মনে করে না। বিএনপি মনে করে রাজনীতি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়… এটা খেলার বিষয় না। আমরা এই খেলায় অংশগ্রহন করি নাই, এই খেলায় অংশ নিতে রাজি না।”
‘‘ যারা নির্বাচনটাকে খেলা মনে করে তারা এটাকে নিয়ে খেলা করছে। তারা জনগনের ভাগ্য নিয়ে খেলা করছে, মুক্তিযুদ্ধের আকাংখা নিয়ে খেলাধুলা করছে, আমাদের অর্জন নিয়ে খেলাধুলো করছে এবং দেশটা সর্বনাশ করে দিচ্ছে।”
মুক্তকামী জনসাধারণ উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে প্রকৃত গণতন্ত্র পূণঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। ইনশাল্লাহ আমরা যেমন দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছি তেমনি এদেশে পুনরায় গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব। বাকশালের কবরস্থানের ওপরে আমরা যেমন বাগান রচনা করেছিলাম, আবার আমরা করতে পারবো ইনশাল্লাহ।”
‘আমাদের হরতালের উদ্দেশ্য প্রতিবাদ জানানো’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘ দেখুন হরতাল মানে কি? আমাদের প্রতিবাদ। আমাদের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে যতখানি সম্ভব তারা করবে।”
‘‘ আজকেও খবরে কাগজে এসেছে, সহিংসতায় দুইজন মারা গেছে… এটা প্রতিদিন ঘটতেছে। এখন ওদের(সরকার) একটা মাত্র লক্ষ্য আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর যেভাবে হোক দায় চাপানো। আমরা সেটা হতে দেবো না। আমরা জনগনের কাছে আবেদন জানিয়েছি, আপনারা হরতাল পালন করুন, এই নির্বাচন বর্জন করুন। সেজন্য আমাদের নেতা-কর্মীরা সেইভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালন করবে। উদ্দেশ্যে আমাদের প্রতিবাদটা জাতির কাছে জানালাম, বিশ্বের কাছে জানালাম এবং জাতিও আজকে এর প্রতিবাদ করছে।”
৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনে শনিবার ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘন্টার হরতালের কর্মসূচি ইতিমধ্যে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ঘোষণা করেছে।
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 12:00 PM |
Asr | 3:00 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:41 PM |