আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১০:৪৮
বিডি দিনকাল ডেস্ক : -সাদেক হোসেন খোকা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রণাঙ্গনের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য রাজনীতিক। গনমানুষের এই নেতা, তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনকে স্মৃতির এ্যালবামে বন্দি করে চিরবিদায় নিয়েছেন এক বছর আগে।
তিনি জন্মেছিলেন এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে, ১ মে ১৯৫২ সালে। পৈত্রিক নিবাস মুন্সীগঞ্জে হলেও তাঁর জন্মের সময় থেকেই পুরো পরিবার স্থায়ীভাবে চলে আসেন ঢাকায়।
প্রকৌশলী ও সমাজসেবক এম,এ করিম এবং গৃহিনী সালেহা বেগম দম্পতির ছয় কন্যা ও দুই পুত্র-সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সাদেক হোসেন খোকা। বাবার যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে মানুষ, সমাজ ও দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
তরুণ বয়সেই সফল সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন সাদেক হোসেন খোকা। শিক্ষা জীবনে মেধার স¦াক্ষর রাখার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ক্রীড়ানুরাগী। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়াঙ্গনের তুমুল জনপ্রিয় এক সাংগঠনিক-ব্যক্তিত্ব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে ¯œাতকোত্তর সম্পন্ন করেন সাদেক হোসেন খোকা। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র থাকাকালীনই অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানিদের মিথ্যাচারে পূর্ণতথ্যচিত্র নির্মাণের কেন্দ্র তথ্য অধিদপ্তর বোমা মেরে উড়িয়ে দেন গেড়িলা যোদ্ধাদের একটি দল। সেই খবর বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার ও আলোচিত হয়। এছাড়াও ৭১’র রমজান মাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের বিপরীতে অবস্থিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচনি অফিসে। ঐ দুটি অপারেশন ছাড়াও গেড়িলা যোদ্ধাদের আরও বেশ কিছু অপারেশন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। সেসব অপারেশন বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।
দেশপ্রেম আর অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তিনি হয়ে উঠেন গেরিলা থেকে গণমানুষের নেতা। তরুণ বয়সেই মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈকি আদর্শে অনুপ্রণিত হয়েছেন তিনি।
সত্তরের দশকে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সারির একজন নেতা। আশির দশকে গনতন্ত্র পূনরুদ্ধার আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন ভুমিকায় আকৃষ্ট হয়ে রণাঙ্গনের একদল যোদ্ধাদের সাথী করে যোগদেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপিতে। যোগদানের পর থেকে দলের সাংগঠনিক কাজে একই সাথে দাবি আদায়ের রাজপথে জোড়ালো ও সাহসী ভুমিকা রাখেন সাদেক হোসেন খোকা। দলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ত্রান বিষয়ক সম্পাদক ঢকা মহানগরীর সহ-সভাপতি, আহবায়ক, সভাপতি সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলের ভইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি স্বৈরাচার এরশাদ পতন আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে ভীত কাঁপিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।
৯০’র এরশাদবিরোধী গণতন্ত্র পূনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর ছিল গুরুত্বগূর্ণ ও সক্রিয় আংশগ্রহণ।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বচনে সাদেক হোসেন খোকা প্রথমবার পুরান ঢাকার কোতোয়ালী-সূত্রাপুর আসনের তৎকালীন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং যুব ও ক্রীরা মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়ীত্ব পান।
পরের ৫ বছরে দেশের খেলাধুলার উন্নয়ন ও সম্প্রসারনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। সংগঠক হিসেবে অর্জন করেন অভুতপূর্ব সাফল্য।
পরবর্তীতে, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০০২ সালে সরাসরি নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হন। মেয়র হিসেবেও সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন রাজধানী ঢাকার উন্নয়নের অন্যতম রুপকার।
নগরীর অবকাঠামোগত ব্যপক উন্নয়নের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে দেশের সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিকদের স্মৃতি অম্লান রাখতে তাদের নামে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরন করেছেন তিনি। নদীগুলোকে দখলমুক্ত করতে তিনি সকল ঐক্যবন্ধ করে সাফল্যজণকভাবে কাজ করেছেন। মেয়র হিসেবে ঢাকাকে ডেঙ্গু মুক্ত করতে রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করেছেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি দুই পূত্র ও এক কন্যা- সন্তানের জনক। তাঁর পুরো পরিবারই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির অন্যতম নীতি-নির্ধারকদের একজন ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। প্রায় দেড় দশক বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন তিনি। আমৃত্যু ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। একজন সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন পরোপকারী, দানবীর এবং লক্ষ-কোটি তরুণ-যুবকের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন মানুষের জন্য, দেশের জন্য। বাংলাদেশকে জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চেতনায় প্রতিষ্ঠিত করতে এবং একটি শক্তিশালী জাতি রাষ্ট্র ্ও ন্যায় বিচার ভিত্তিক শোষণমুক্ত মানবিক ও কল্যাণমূখী সমাজ গঠনে তিনি নির্ভিকভাবে কাজ করে গেছেন। দলমত নির্বিশেষে সর্বমহলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল ব্যাপক। যেকোন শুভ উদ্যোগে তার সম্পৃক্ততা ছিল দৃশ্যমান।
দীর্ঘ কয়েক বছর দুররোগ্য কিডনীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি, কিন্তু তাঁর মন ছিল বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম টান অনুভব করতেন সর্বদা। মিষ্টভাষী বন্ধুবৎসল, জনদরদী ও বিশাল হৃদয়বান মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর নিউ ইয়র্কের ম্যানহটনের স্লোয়ান কেটেরিং ক্যান্সার সেন্টারে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
লোকান্তরে চলে গেলেও সাদেক হোসেন খোকা থাকবেন বাংলার মানুষের হৃদয়জুড়ে, চিরঞ্জিব হয়ে। পরম করুনাময় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতির এই বীর ও শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করছি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধায় ও ভালবাসায়।
কর্মসূচী :
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত ৩০ অক্টোবর ২০২০ থেকে ৮ দিন ব্যাপী কর্মসূচী শুরু হয়েছে। কর্মসূচীর ৬ষ্ঠ দিনে আগামীকাল ৪ঠা নভেম্বর ২০২০ মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে সকাল ১১ টায় জুরাইন কবরস্থানে কোরআন খতম, মরহুমের কবর জেয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পন ও ফাতেহা পাঠ। দিনব্যাপী মহানগরীর বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিল। বাদ আসর মরহুমের পরিবারের উদ্যোগে গোপীবাগস্থ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের মাঠে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও কোরআন খতম।
এছাড়াও গত ২ ও ৩ নভেম্বর ২০২০ জাতীয় প্রেসক্লাবে মরহুম সাদেক হোসেন খোকার কর্মময় জীবনের উপর নির্মিত প্রামান্য চিত্র ও আলোক চিত্র প্রদর্শনি অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচীর উদ্ভোধন করেন। সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটি’র উদ্যোগে আয়োজিত এই আলোক চিত্র ও প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনিতে দেশের বিশিষ্ট্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, মরহুমের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, মরহুমের বন্ধুগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরীতে মরহুমের নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন থানা ও এলাকায় মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহলিফল, কোরআন খতম, স্মরণসভা চলছে। বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ও এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে।
বার্তা প্রেরক-
(সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স)
সদস্য সচিব
সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটি।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |