- প্রচ্ছদ
-
- রংপুর
- স্বপ্নের কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
স্বপ্নের কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ৬:৩৬ অপরাহ্ণ
কুড়িগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম #মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠের এক জনসভায় বলেছিলেন, “ কুড়িগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। কুড়িগ্রামের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সুদৃষ্টি থাকায় এবং তাঁর নিজস্ব মেধাপ্রসৃত ভাবনা থেকে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বাস্তব অগ্রযাত্রা শুরু হয়।বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ২১ ডিসেম্বর ২০২০ এ বিশ্ববিদ্যালয় ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’ এর খসড়া অনুমোদন করে। ৯ মার্চ ২০২১ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়ালি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২১’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২১’ ২৮ জুন ২০২১ তারিখে সংসদে উত্থাপন করেন। কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিলটি এক মাসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি গত ২৪ আগস্ট ২০২১ তারিখে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে, গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে কমিটির পক্ষে ফজলে হোসেন বাদশা সংসদে চূড়ান্ত বিল পেশ করেন। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ভিসি ও স্থান নির্বাচন হওয়ার কথা।সেপ্টেম্বর/২০২১ থেকে অদ্যাবধি কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে এ অঞ্চলের মানুষের জানা নেই। কুড়িগ্রামবাসী আশা করেছিল শীঘ্রই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়াদে আরও ছয়টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৮), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০১), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬), খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮) ও হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৯)। কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অষ্টম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার কৃষি খাত সমৃদ্ধকরণে কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সত্যিই প্রশংসনীয়। কুড়িগ্রামের বাসিন্দা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক আরও দুইটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দেয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,শরীয়তপুর এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোর। কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কুড়িগ্রামের মানুষের মাঝে সৃষ্টি হওয়া নতুন আগ্রহ, উদ্দীপনা ও স্বপ্ন বাস্তবতার মাঝে দোল খাচ্ছে।এ জেলার ১৬ টি নদ-নদী, চার শতাধিক চর আর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বাচিয়ে রাখা কৃষিকে নিয়ে মানুষ দেখছে নতুন সম্ভাবনা, এতদিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কৃষি ভিক্তিক গবেষণার মাধ্যমে পরাজিত করে বিজয়ী বেশে বাস্তবে এগিয়ে যাবার পথের সন্ধান করার যাত্রায় সামিল হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ ।সেক্ষেত্রে সবার একটাই জিজ্ঞাসা কবে শুরু হবে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক যাত্রা।
কুড়িগ্রাম জেলার মোট জমির পরিমাণ ৩,৪১,২২৫ হেক্টর, আবাদী জমির পরিমাণ ১,৬৭,৪৬৭ হেক্টর যার পুরোটাই সেচযোগ্য এবং অনাবাদী জমির পরিমাণ ১৯,৩২০ হেক্টর। জেলার মানুষ স্বপ্ন দেখে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান ও গবেষণা আমাদের আবাদী জমিসহ অনাবাদী জমিতেও ফলাবে সোনার ফসল। কুড়িগ্রাম এমন একটি জেলা যেখানে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ফসল জন্মানো সম্ভব। ১৬ টি নদীর পানি সবটুকুই মিঠা পানি যা প্রত্যেক জীবের জন্য কিংবা ফসল ফলানোর জন্য প্রয়োজনীয়।কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়, জেলায় কৃষির আধুনিকায়ন, গবেষণা ও উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখবে। কৃষি প্রধান কুড়িগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যুগোপযোগী ও ফলপ্রসূ হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিকাশসহ এলাকার কৃষির উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ ঘটবে। এ জেলার মানুষের স্বপ্নপূরণের স্থল হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত জেলার মানুষের শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের সঙ্গে কৃষির আধুনিকায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সূচকে কুড়িগ্রাম জেলার গুরুত্ব বেড়ে যাবে। কৃষি আমাদের আদিম পেশা। কুড়িগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শিক্ষার উন্নয়নসহ জেলার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চমৎকার অনুঘটকের কাজ করবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়‘ প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী। কিন্তু যে কোন মহৎ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকল ক্ষুদ্র,দীন কিংবা একাকী আর এরুপ থাকেনা। তখন সবকিছু মিলেমিশে এক বৃহৎ প্রত্যাশা কিংবা শক্তির সৃষ্টি করে। সেটিই হলো কুড়িগ্রাম বাসীর স্বপ্নের কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা চাই এ বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করুক। আমাদের প্রত্যাশার প্রহর যেন আর দীর্ঘায়িত না হয়!
Please follow and like us:
20 20