এই ভাবে পর পর তিনদিন সম্পূর্ণ অনাহারে থেকে স্বামীজী ধর্মপ্রসঙ্গ করে চলেছেন। জল পর্যন্ত খেতে পারেননি। তৃতীয়দিন রাত্রে সবাই চলে যাবার পর একটি গরীব লোক এসে তাঁকে জিঞ্জাসা করল, মহারাজ, আপনি তিনদিন তো অনবরত কথাই বলেছেন, জল পর্যন্ত খাননি। এতে আমার প্রাণে বড় ব্যথা লেগেছে।
স্বামীজীর মনে হল স্বয়ং ভগবানই দীনবেশে এসেছেন। তিনি বললেন :’ তুমি আমায় কিছু খেতে দেবে? ‘
লোকটি জাতিতে চামার, সে বলল : ‘আমার প্রাণ তো তাই চায়, কিন্তু আমার তৈরী রুটি আপনাকে দিব কি করে? আঞ্জা হয় তো আমি আটা ডাল এনে দিই, আপনি ডাল-রুটি বানিয়ে নিন। ‘
স্বামীজী বললেন : ‘না, তোমার তৈরী রুটিই আমায় দাও, আমি তা -ই খাব। ‘ লোকটি শুনে ভয় পেল —রাজা যদি জানতে পারে যে সে চামার হয়েও সন্ন্যাসীকে রুটি তৈরী করে দিয়েছে তবে হয়তো তাকে শাস্তি পেতে হবে। তবুও সাধুসেবার প্রবল আগ্রহে নিজের বিপদ তুচ্ছ করেও স্বামীজীর জন্য রুটি তৈরী করে নিয়ে এল। তার দয়া দেখে স্বামীজীর চোখে জল এল, ভাবলেন :আমাদের দেশের কুঁড়েঘরে এরকম কত মানুষ বাস করে, যারা বাইরে দীন -দরিদ্র -অন্ত্যজ কিন্তু অন্তরে মহান।
এদিকে স্টেশনের কয়েকজন ভদ্রলোকের নজরে পড়ল স্বামীজী চামারের হাত থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছেন। তারা এসে তাঁকে বলল : ‘আপনি যে নীচ ব্যক্তির ছোঁয়া খাবার খেলেন এটা কি ভাল হল। স্বামীজী উত্তর দিলেন : ‘তোমরা তো এতগুলো লোক আমাকে তিনদিন ধরে বকালে, কিন্তু আমি কিছু খেলাম কিনা তার কি খোঁজ নিয়েছিলে?
অথচ এ ছোট লোক হল, আর নিজেরা ভদ্র বলে বড়াই করছ? ও যে মনুষ্যত্ব দেখিয়েছে, তাতে ও নীচ হল কি করে।