আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১:২০
‘হারামজাদা আমার সঙ্গে বেয়াদবি করে। তুই তারে গুলি করে মেরে ফেল।’ খোকার এমন হুকুম পাওয়া মাত্রই জয় ইজাজকে মাথার বামপাশে গুলি করে। বিরোধের সূত্রপাত ভোটকেন্দ্রে। ভোটের লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে ইজাজকে ধাক্কা দেয় খোকা। এর প্রতিবাদ করাতেই হত্যা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কলেজপাড়ায় ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুর রহমান ইজাজ (২২) হত্যা মামলার এজাহারে ঘটনার কারণ সম্পর্কে এমনই বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নিহত ইজাজের পিতা হাজী মো. আমিনুর রহমান ১৬ জনের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় ছেলে হত্যার মামলা করেন। মামলায় ১ ও ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল হোসেন খোকা (৪৫) ও জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি মো. হাসান আল ফারাবী জয়কে (২৮)। ৫ই জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার ঘণ্টা দু’য়েক পর শহরের কলেজপাড়ায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে। এর পরপরই জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ইজাজকে গুলি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ইজাজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি অনার্স কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের একজন কর্মী।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সে বিজয়ী চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শোভনের সমর্থক ছিল। স্থানীয় খ্রিস্টিয়ান মিশন স্কুলকেন্দ্রে শোভনের পাশ করার ফলাফল প্রকাশের পর কেন্দ্র থেকে মিছিল করে কলেজপাড়াতে যায় ইজাজসহ অন্যরা। সেখানে জামাল মিয়ার বাড়ির সামনে রাস্তার ওপরে সন্ধ্যা নামার আগ মুহূর্তে খোকা ও জয়ের সশস্ত্র হামলার মুখে পড়ে তাদের মিছিল। খোকার ধর ধর ডাকে মিছিলের ছেলেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে ইজাজকে গুলি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, ৫ই জুন সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার হিসাবে ইজাজ খ্রিস্টান মিশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়াতে যায়। খোকা লাইন ভেঙে জোর জবরদস্তি করে ভোট দিতে গিয়ে ইজাজকে ধাক্কা দিয়ে লাইন থেকে বের করে দেয়। ইজাজ প্রতিবাদ করলে খোকার নেতৃত্বে অপরাপর আসামিরা তাকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে। এরপর ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ইজাজ বাসা থেকে বের হয়ে সরকারি কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পূর্বে থেকে উৎপেতে থাকা আসামীরা ইজাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র খোকাসহ সকল আসামিরা পিস্তল, রাম দা সহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ইজাজসহ তার বন্ধুদের পথরোধ করে।
সে সময় জালাল তার কাছে থাকা পিস্তলটি হাসান আল ফারাবী জয়ের হাতে তুলে দিয়ে বলে, ‘হারামজাদা আমার সঙ্গে বেয়াদবি করে। তুই তারে গুলি করে মেরে ফেল।’ এক নম্বর আসামি খোকার হুকুম পাওয়া মাত্রই ২য় আসামি জয় ইজাজকে মাথার বামপাশে গুলি করে। গুলির আঘাতে ইজাজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুলি বামপাশ দিয়ে ডুকে মাথার মগজ বেরিয়ে আসে। ইজাজের সঙ্গে থাকার ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্দ হয়ে যায়। এজাহারে আরও বলা হয়, বাসা থেকে কলেজে যাওয়া আসা অবস্থায় জালাল হোসেন খোকার সঙ্গে ইজাজের বিরোধ সৃষ্টি হয়। খোকা একজন চিহ্নিত খুনি। সে ও তার অনুগত বাহিনীর মাধ্যমে সমস্ত কলেজপাড়ায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মামলার এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা হচ্ছে কলেজপাড়ার জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে সাগর (৩২) ও শাফি আলম (২৮), কাউতলীর হোসেন রাজার ছেলে শাহাদাত হোসেন সানী (২৮), কলেজপাড়ার আবদুল আউয়ালের ছেলে অপু (৩০), মামুন (৩৮) ও মাসুম (৪০), মামুন মিয়ার ছেলে শাহরিয়ার প্রকাশ লাদেন (২২) ও রুবেল (২৮), হাবিবুর রহমানের ছেলে অলি (৩০), জাহের মিয়ার ছেলে রুমান (৩৫) ও তারেক (৩০), তারা মিয়ার ছেলে সৌরভ (৩০), অজ্ঞাত পিতৃপরিচয়ের মামুন (২৮) ও মোরসালিন (২৮)। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জন আসামি রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর অভিযান চলছে। ঘটনার পরই আমরা সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করি। তাদের বাড়িঘরে অভিযান চালানো হয়। শহরের প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়। এ ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তৎপর রয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ইজাজকে প্রথমে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে শহরতলীর ঘাটুরায় বেসরকারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ওইদিন রাতে শহরের নিয়াজ মুহম্মদ স্কুল মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা এবং রাতে গ্রামের বাড়ি সুহিলপুরে দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাজা শেষে সুহিলপুর গ্রামে দাফন করা হয়। শহরের নামাজে জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন নবনির্বাচিত সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শোভন, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী এম এইচ মাহবুব আলম, সুহিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল।
এদিকে গতকাল দুপুরে হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে আশরাফুর রহমান ইজাজের সহপাঠীরা। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন রায়হান, সিয়াম, মাশরাফি ও রেজুয়ান। এদিকে হত্যা ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন কলেজপাড়ার মানুষ। সন্ধ্যার পর থেকে নেমে আসে ভুতুরে নীরবতা। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যান না কেউ। যদিও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে সেখানে বিভিন্ন পয়েন্টে।সূত্র:মানবজমিন
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |