আজ বুধবার | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:১৮
এম, এ কাশেম, চট্টগ্রাম থেকে : বিভিন্ন স্থানে দলীয় নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধামকি ও পথে পথে বাধা ছিলো অনেকটা ভীতিকর পরিস্থিতির মতো। কিš, তার পর ও সকল ধরণের হুমকি ও বাধা ছাড়িয়ে দুপুর হতেই চট্টগ্রাম মহানগরীর রেলওয়ে ‘পলোগ্রাউন্ড’ মাঠ হয়ে ওঠে রীতিমতো জনসমুদ্র। সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে দলটির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশের মূল স্থান পলোগ্রাউন্ড’র সু’বিশাল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ও হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। পাশের সিআরবিও এলাকা পূর্ণ হয়ে ওঠে মানুষের ভিড়ে। বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত বিএনপি’র পূর্ব কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষ পর্যন্ত মহা সমাবেশের রুপ ধারণ করে। আর এতে বিএনপি’র নির্যাতিত এবং হামলা-মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার জাগানিয়া হয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হয়েছে। এই সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান সহ কেন্দ্রীয় অন্যান্য নের্তৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এসএম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবর রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, সহ গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন প্রমুখ। জ্বালানি তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও ল²ীপুর জেলার নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন। বিএনপি নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে টাইগারপাস থেকে নিউমার্কেট ও সিআরবি এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আশপাশের বাকি সড়ক গুলোতে ও যানচলাচল অস্বাভাবি কভাবে কমে যায়।
বেলা ২টার দিকে আমবাগান রেলক্রসিং এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মী বাহী একটি বাসে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সীতাকুন্ড থেকে আসা ওই বাসে লাঠি হাতে অতর্কিত হামলা চালায় ২০-২৫ জন যুবক। তবে ওই হামলায় বড় কোনো ক্ষতির সম্মুখিন হয়নি কেউ। মীরসরাই থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা জহুরুল হক বলেন, ‘এবারের পরিস্থিতি ছিলো অনেকটা ভিন্ন। এবার পুলিশ খুব একটা অসুবিধা করেনি। শুধু মাত্র বারইয়ারহাট পৌরসভায় পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাধারণমসম্বপাদক ওপৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন বারইয়ারহাট থেকে গাড়ি ছাড়তে বাধা দিয়েছেন। তবে, আমরা কৌশল করে সমাবেশে যোগ দিয়েছি৷ স্টপেজ থেকে কোনো গাড়িতে উঠিনি।’ পলোগ্রাউন্ড মাঠের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চট্টগ্রামের এই জনস্রোত দেখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা উচিত। একই সাথে চট্টগ্রামে শুরু হওয়া আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে সরকারের পতন ঘটানোর হুঁশিয়ারি ও উচ্চারণ করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এক দফা এক দাবি-হাসিনা তুই কবে যাবি’। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। তিনি বলেন, আজকে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে এবং সেই আন্দোলনেই পতন ঘটবে সরকারের। নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে আগামী নির্বাচন। আজকে চট্টগ্রামের সমাবেশে উপস্থিত লাখ লাখ মানুষের শ্লোগান একটা-ই বর্তমান আ’লীগ সরকারের পতন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি’র এই সমাবেশ আর সমাবেশ নেই, তা এখন মহাসমাবেশে পরিণত হয়েছে। আজকে আমরা এমন একটা জায়গা থেকে কথা বলছি যার অদূরে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র। সেখান থেকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ জিয়াউর রহমান। আমি চট্টগ্রামের মানুষকে বলবো, এই সমাবেশকে আপনারা সফল করেছেন। ’তিনি বলেন, ‘আজ জাতিসংঘ পরিষ্কারভাবে বলেছে, বাংলাদেশে গুম হয়। ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার নাই। এখানে হত্যা হয়, গুম হয়। আমাদের সব নেতার ওপর মিথ্যা মামলা দিয়েছে এই ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার।’ তিনি বলেন, ‘র্যাব একটা প্রতিষ্ঠান, সেটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, শুধু র্যাবকে নয়, শেখ হাসিনার সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। আগের রাতে ভোট নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেছে। এই সরকার বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে। ’মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই শেখ হাসিনা সব লুট করে বিদেশে পাচার করছে। এ দিকে জনগণ না খেয়ে মরছে। প্রতিটা তরকারির দাম তিন থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বাড়িয়েছে। শুনছি, বিদ্যুতের দাম আবার বাড়াবে। এরা লুটপাত করে কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি বানায়। আর জনগণ কষ্টে দিনাতিপাত: করছে। দু’মুঠো খাবার পায় না মানুষ। মানুষের নিরাপত্তা নেই, দিনদুপুরে ডাকাতি, ছিনতাই হয়। ’তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী আজ বন্দি। তিনি ঠিকমত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তারা আমাদের ভয় দেখান আমাদের নেত্রীকে আবার জেলে পাঠাবেন। আসলাম চৌধুরী ছয় বছর ধরে জেলে আছেন। এরা বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ, র্যাবকে দলীয়করণ করেছেন। আজ সারাদেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ আর ছাত্রলীগের কর্মীরা জনগণের পকেট কেটে বিদেশে পাচারে সহযোগিতা করছে।’ সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই চট্টলা থেকে ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। বাংলাদেশ অন্য কারো ডাকে স্বাধীন হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধে। আজ দেশে গণতন্ত্র নেই। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমরা আজ আবার ও যুদ্ধে নেমেছি।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আজ আর যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। পেটের ভাতের জন্য মানুষ আজ হাহাকার করছে। ভাত দিতে পারবেন না, বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না, ক্ষমতায় থাকবেন কেনো? শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের প্রধানমন্ত্রী না। চোরের স্বভাব যায় না। সুযোগ পাইলে করে চুরি। তাই এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন আমরা মানি না।’ স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে শেখ হাসিনার পতন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামবাসী ডাক দিয়েছে, তাহলে আর দেরি কিসের। শেখ হাসিনা আপনি ক্ষমতা ছাড়ুন, পদত্যাগ করুন, নইলে আপনাকে দেশের শান্তিকামী মানুষ ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনে হেঁচড়ে নামাতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, ‘পুলিশের কিছু অংশ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। ঢাকা থেকে আসতে নেতা-কর্মীদের বাধা দিয়েছে। অনেক নেতা-কর্মীকে হোটেল-রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। এর পর ও সমাবেশ থেমে থাকেনি। নেতা-কর্মীরা সকল বাধা অতিক্রম করে সমাবেশের মাঠে যোগ দিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে মানুষ শেখ হাসিনাকে বার্তা দিয়েছে শেখ হাসিনা এখন-ই পদত্যাগ করো।’ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহŸায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সহ স্থানীয় অন্যান্য নেতারা ও বক্তব্য রাখেন।
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:19 PM |
Isha | 6:40 PM |