- প্রচ্ছদ
-
- রাজশাহী
- ১৯৭১ সালে একজন নারী মুক্তি যোদ্ধা দেশের জন্য খালেদা জিয়ার যত কষ্ট ও ত্যাগ
১৯৭১ সালে একজন নারী মুক্তি যোদ্ধা দেশের জন্য খালেদা জিয়ার যত কষ্ট ও ত্যাগ
প্রকাশ: ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৪:০০ অপরাহ্ণ
আবুবকর সিদ্দিক, জয়পুরহাট।যেভাবে বন্দী হলেন তৎকালীন গৃহবধূ খালেদা জিয়া: মনজুর আহমদের রিপোর্ট(দৈনিক বাংলা, ২রা জানুয়ারী, ১৯৭২ সাল)”বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বীর নায়ক মেজর (বর্তমানে কর্ণেল) জিয়া যখন হানাদার পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদেরকে নাজেহাল করে তুলছিলেন তখন তাঁর প্রতি আক্রোশ মেটাবার ঘৃণ্য পন্থা হিসাবে খান সেনারা নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাঁর আত্মীয়-স্বজন পরিবার পরিজনের ওপর। তাদের এই প্রতিহিংসার লালসা থেকে রেহাই পাননি কর্ণেল জিয়ার ভায়রা শিল্পোন্নয়ন সংস্থার সিনিয়র কো-অর্ডিনেশন অফিসার জনাব মোজাম্মেল হক।
চট্টগ্রাম শহর শত্রু কবলিত হবার পর বেগম খালেদা জিয়া যখন বোরখার আবরণে আত্মগোপন করে চট্টগ্রাম থেকে স্টিমারে পালিয়ে নারায়নগঞ্জ এসে পৌঁছেন তখন জনাব মোজাম্মেল হকই তাঁকে নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকা নিয়ে আসেন। সেদিন ছিল ১৬ই মে। ঢাকা শহরে ছিল কারফিউ। নারায়নগঞ্জে সন্ধ্যা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। এরই মধ্যে তিনি তাঁর গাড়ীতে রেডক্রস ছাপ এঁকে ছুটে গিয়েছিলেন নারায়নগঞ্জ টার্মিনালে।
বেগম জিয়াকে নিয়ে আসার দিন দশেক পর ২৬শে মে শিল্পোন্নয়ন সংস্থায় হক নাম সম্বলিত যত অফিসার আছে সবাইকে ডেকে পাক সেনারা কর্ণেল জিয়ার সঙ্গে কারোর কোন আত্মীয়তা আছে কিনা জানতে চায়। জনাব মোজাম্মেল হক বুঝতে পারলেন বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তিনি সেখানে কর্ণেল জিয়ার সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তা গোপন করে অসুস্থতার অজুহাতে বাসায় ফিরে আসেন এবং অবিলম্বে বেগম জিয়াকে তাঁর বাসা থেকে সরাবার ব্যবস্থা করতে থাকেন।
কিন্তু উপযুক্ত কোন স্থান না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ২৮শে মে তিনি তাঁকে ধানমন্ডিতে তাঁর এক মামার বাসায় কয়েকদিনের জন্য রেখে আসেন এবং সেখান থেকে ৩রা জুন তাঁকে আবার জিওলজিক্যাল সার্ভের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জনাব মুজিবুর রহমানের বাসা এবং এরও কদিন পরে জিওলজিক্যাল সার্ভের ডেপুটি ডিরেক্টর জনাব এস কে আবদুল্লার বাসায় স্থানান্তরিত করা হয়।
এরই মধ্যে ১৩ই জুন তারিখে পাক বাহিনীর লোকেরা এসে হানা দেয় জনাব মোজাম্মেল হকের বাড়ীতে। জনৈক কর্ণেল খান এই হানাদার দলের নেতৃত্ব করছিল। কর্ণেল খান বেগম জিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং জানায় যে, এই বাড়ীতে তারা বেগম জিয়াকে দেখেছে। জনাব হকের কাছ থেকে কোন সদুত্তর না পেয়ে তাঁর দশ বছরের ছেলে ডনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডন কর্নেল খানকে পরিষ্কারভাবে জানায় যে, গত তিন বছরে সে তার খালাকে দেখেনি।
সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলে খান সেনারা তাঁর বাড়ী তল্লাশী করে। কিন্তু বেগম জিয়াকে সেখানে না পেয়ে হতোদ্যম হয়ে ফিরে যায়। যাবার আগে জানিয়ে যায়, সত্য কথা না বললে আপনাকে ক্যান্টনমেন্টে নেয়া হবে।
এরপরই জনাব হক বুঝতে পারেন সর্বক্ষণ তাঁকে অনুসরণ করা হচ্ছে। যেখানে যান সেখানেই তাঁর পেছনে লেগে থাকে ফেউ। এই অবস্থায় তিনি মায়ের অসুখের নাম করে ছুটি নেন অফিস থেকে এবং সপরিবারে ঢাকা ছেড়ে যাবার ব্যবস্থা করতে থাকেন।
…উল্লেখযোগ্য যে এই দিনই জনাব এস কে আবদুল্লাহর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বেগম জিয়া ও জনাব আবদুল্লাকে এবং একই সাথে জনাব মুজিবর রহমানকেও পাক-বাহিনী গ্রেফতার করে। এবং ৫ই জুলাই তারিখে জনাব মোজাম্মেল হক অফিসে কাজে যোগ দিলে সেই অফিস থেকেই ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যান। …।”
(তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড। পৃষ্ঠা নং: ৪৭৬-৭৮)
আবুবকর সিদ্দিক, লেখক, ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
Please follow and like us:
20 20