আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৪:২৯
বিডি দিনকাল ডেস্ক : পররাষ্ট্র সচিবসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরিজ আলোচনায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন সফরকারী মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। ৩ দিনের সফরের সমাপনী দিন সোমবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের আমন্ত্রণে রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে প্রাতঃরাশ বৈঠকে অংশ নেন বাইডেন প্রশাসনের প্রভাবশালী ওই কর্মকর্তা। সেখানে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধের জায়গাটা কোথায়? তা বোঝার চেষ্টা করেন। অবশ্য এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন? মুখোমুখি অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার কোথায় মিল? আর বিরোধের মুখ্য কারণইবা কি তা তিনি তার সফরের পুরোটা সময় ধরেই জানা- বোঝার চেষ্টা করেছেন বলে ধারণা মিলেছে। অবশ্য প্রাতঃরাশ বৈঠকে আলাদাভাবে বা সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি ফোকাস দেননি বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে সচিব বলেন, অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি ঢাকা সফরে পররাষ্ট্র সচিবসহ সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকে মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার কিছু বিষয়ে বন্ধু এবং উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। সেখানে মোটা দাগে ৫টি বিষয় তুলে ধরেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই মার্কিন কর্মকর্তা।
বিষয়গুলো হলো- ১. নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। (উল্লেখ্য, অতীতের দু’টি নির্বাচন নিয়ে বরাবরের মতো প্রশ্ন রেখে গেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওই কর্মকর্তা) ২. আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হতে হবে। ৩. ভিন্নমত এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সভা-সমাবেশ এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার সুযোগ দিতে হবে।
কোনো অবস্থাতেই পাল্টাপাল্টি বা মারমুখী বাধা প্রদান কাম্য নয়) ৪. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করা এবং ৫. গণতন্ত্র চর্চার ধারা নির্বিঘ্ন করার তাগিদ।
মার্কিনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক সময়ে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র বিভিন্ন কর্মসূচিতে মানুষের অংশগ্রহণ এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শুরু এবং শেষ করার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেন। সমাবেশ করার ক্ষেত্রে বিএনপিকে প্রশাসনের তরফে কোনো রকম বাধা না দেয়ার দাবি করে সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, বিএনপি তাদের কর্মসূচিতে সরকারের বিরুদ্ধে যা খুশি বলতে পারছে। সরকার বা প্রশাসন কোথাও তাদের মাইক বন্ধ করেনি। সংবিধানে একটি সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের রূপরেখা রয়েছে দাবি করে সরকারি কর্মকর্তারা মার্কিন মন্ত্রীকে বলেছেন, তা মেনেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে শক্তভাবে নির্বাচন পরিচালনার নজির তৈরি করেছে। সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় দেশে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তা তুলে ধরা একটি বৈঠকে মার্কিন মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়- তারপরও প্রধান বিরোধী দল যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে সরকারের কি করার থাকতে পারে?
বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে তার উদ্বেগগুলো ক্যাটাগরিক্যালি তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে বৈঠকগুলো হয়েছে। সেখানে কোন ডিবেট বা তর্ক ছিল। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কথাগুলো বলেছেন এবং সম্মানের সঙ্গে তা নোটে নিয়েছে। সেই সব বৈঠকে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি দিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের ভাষ্যও তুলে ধরেছেন। মার্কিন রিপোর্টে যেসব উদ্বেগ ব্যক্ত করা হয়েছে তা যৌক্তিকভাবে এবং ডকুমেন্ট দিয়ে খন্ডনের চেষ্টা করেছেন পররাষ্ট্র সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
তারানকোর পর আফরিন মিশন, মুখোমুখি বসলেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র প্রতিনিধি: এ দিকে প্রায় ১০ বছর বিরতিতে এই প্রথম কোনো বিদেশি দূতের উপস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি আলোচনায় বসলেন আওয়ামী লীগ- বিএনপি’র প্রতিনিধি। রোববার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ওই আলোচনা হলো। যার মধ্যমণি ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর পর এমন আয়োজন এই প্রথম দেখলো ঢাকা। অবশ্য এবার বৈঠকে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছিল জাতীয় পার্টির এক নেতার উপস্থিতি। কিন্তু বরাবরের মতো এবারের বৈঠকেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফর্মুলা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। তারানকোর মতো এই বৈঠকও যদি, কিন্তুতে আটকে গেছে! মার্কিন দূতাবাসের এক কূটনীতিকের বাসায় অনুষ্ঠিত তিন দলের ওই বৈঠকে মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কীভাবে আয়োজন করা যেতে পারে সে ব্যাপারে দলগুলোর মনোভাব জানতে চেয়েছেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা বিতর্কে লিপ্ত হন। আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দুদলের (আওয়ামী লীগ-বিএনপি) সমঝোতায় পৌঁছানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি। এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও উপদেষ্টা মাসরুর মাওলা উপস্থিত ছিলেন। স্মরণ করা যায়, ওই আলোচনার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশন ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয় আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এ দেশের সুশীল সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আফরিন আক্তার বলেন, আমি এখানে প্রথমবারের মতো এসেছি। কীভাবে একসঙ্গে আমরা কাজ করতে পারি-তা নিয়ে সরকারের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছি।
ঢাকা ছাড়ার আগে মার্কিন মন্ত্রী যা বললেন-
এদিকে ঢাকার সব বৈঠকেই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী আফরিন আক্তার। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা? ঢাকা সফরে কি ধারণা পেয়েছেন? গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে আফরিন আক্তার বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সকল বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে জোর দিয়েছি। সকল বৈঠকে অবাধ ও মুক্ত নির্বাচনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছি। বিষয়টি আমরা বারবার তুলে ধরতে থাকব। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন হচ্ছে উল্লেখ করে মিজ আক্তার বলেন, আগামী ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়ে নেয়ার আশা রয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, জলবায়ুসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা রয়েছে। গত শনিবার বিকেলে ঢাকায় এসেছিলেন আফরিন। সোমবার শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান তিনি।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |