আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১০:০০
আবুবকর সিদ্দিক,জযপুরাট প্রতিনিধি:-এই শীতের মধ্যে অসময়ের বৃষ্টিতে জয়পুরহাটে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার ভোর রাত থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে জেলার অধিকাংশ নিমাঞ্চল ডুবে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, তলিয়ে গেছে সদ্য রোপা বোরো ধান ক্ষেত। এ ছাড়া এ বৃষ্টিতে অপোক্ত আলু ও সরিষা ক্ষেতে ব্যাপক ফসলহানীর আশঙ্ক করছেন কৃষকরা। আর কৃষি বিভাগ বলছে,বৃষ্টি থেমে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না।
আজ সোমবার পর্যন্ত রোদের দেখা নেই, এখন বৃষ্টি না থাকলেও প্রচন্ড ঠান্ডা আর কন কনে শীতে কাহিল অবস্থায় পড়েছে জেলার কৃষকরা।
সরেজমিনে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের এই প্রখর শীতের মধ্যে গত শুক্রবার মাঝ রাত থেকে নজীর বিহীন ভারী বর্ষনের পর থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতে নাকাল হয়ে পরেছে জনজীবন। দেখে বোঝার উপায় এটা শীতকাল না বর্ষাকাল, বৃষ্টির পানি জমেছে জেলার নি¤œাঞ্চলগুলোতে। এতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি সদ্য রোপা বেশ কিছু বোরো ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। এ ছাড়া কাঁচা সরিষা ক্ষেতে শুয়ে পরেছে মাটির সাথে। প্রকৃতির এমন বৈরীতায় হতবাক কৃষকরা।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হরেন্দা গ্রামের কাওসার আলী, শালট্টী গ্রামের আলী মোহাম্মদ, কুসুম্বা গ্রামের সাকাওয়াত, আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর গ্রামের মোযাফফর হোসেন, রায়কালী গ্রামের আজিজুল হকসহ জেলার অধিকাংশ কৃষক জানান, শীতকালে এমন বৃষ্টি তারা এর আগে কখনো দেখেননি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাকুরতলী গ্রামের এন্তাজ আলী বলেন, ‘ গরীব মানুষ, গেল বছর সরিষা আবাদ করে এ্যনা নাভ হচিল (সামান্য লাভ হয়েছিল), তাই এ বারে ধার কর্জ ৫৫ শতক জমিত সরিষা বুনিছিনো, সরিষাও ভালো হছিল, তাই দেকে মোর বাড়িআলী কয় দিন কছে, সরিষা বেচে দুধের গাই কিনবা হবে। এ্যরই মদ্দে দেওয়ার পানি, সব কাচা সরিষাগুলা মাটিত শুতে পল, এ্যাক্কেবারে শ্যাষ…….।” এরপর কি যেন বির বির করে বলে সরিষা ক্ষেত থেকে চলে গেলেন এন্তাজ।
একই এলাকার অগভীর নলকুপ মালিক ও ক্ষুদ্র চাষী সাজু মিয়া জানান, ‘ ভাই রে ঘুমালাম শীতকালে, উঠে দেখি বর্ষাকাল, এই শুষ্ক মৌষুমে এই এলাকার ৫০/৬০ বিঘা জমিতে পানি সেচ দিয়ে আর সামান্য কিছু জমি চাষ করে কোন রকমে দিন যাপন করছিলাম। যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে আগামী ২ মাসে আর কোন জমিতে পানি সেচ দিতে হবে না।’
অন্য দিকে জেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, আলু চাষাবাদেও উর্বর এ জেলায় এবার আলু চাষ হয়েছে ৪০ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। এ অবস্থায় হিমাগারে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে জেলার প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির আলুক্ষেত পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পর এই আলু কৃষকদের ঘরে ওঠার কথা। কিন্তু হঠাৎ করে গেল দু’দিনের বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে এসব আলু ক্ষেত। এ কারণে আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অধিকাংশ কৃষক সকাল থেকে ডুবে যাওয়া আলুক্ষেতের পানি নিষ্কাশনে ব্যস্ত সময় পার করলেও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কাদা-পানি উপেক্ষা করে আলু সংগ্রহ করছেন ক্ষেত থেকে।
জেলার কালাই উপজেলার ইটাইল গ্রামের জাহিদুল ইসলাম, মাত্রাই গ্রামের শহিদুল ইসলাম, ক্ষেতলাল উপজেলার মুন্ঝার গ্রামের কাওসার হোসেন, সদর উপজেলার বামনপুর চার মাথা এলাকার রনি সহ আলু চাষীরা জানান, এখনো আলু ঘরে তুলতে ২০/২৫ দিন সময় লাগবে। এই আলু তখন পোক্ত হবে বলে হিমাগারে রাখা যাবে, বীজ করে রাখা যাবে, এ ছাড়া ভর বছর খাওয়াও যাবে, কিন্তু আকস্মিক ভারী বৃষ্টিপাতে আলু ক্ষেতগুলোতে পানি ঢুকে পরেছে, এই পানি সেচ দিয়েও সরানো যাচ্ছে না, তাই তরিঘড়ি কওে যত টুকু পারা যায় তারা কাদা সরেই আলু তুলছেন, তবে তা সংরক্ষন করা সম্ভব নয় বলে এখনি বাজাওে নিতে হবে।
এই কারনে বাজাওে আলুর বাড়তি চাপ রয়েছে বলে চাহিদা কম থাকায় দামও কম। প্রতি মন সাদা গ্র্যানোলা জাতের আলু এখন মন প্রতি ১৬০/ ১৮০ টাকায় ও এ্যরোষ্টিক ও লাল পাকরী আলু প্রতি মন সর্বে¦াচ্চ ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান আলু চাষীরা।
শুধু তাই নয়, বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে আলু নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বীজের জন্য বিশেষ ভাবে চাষাবাদ করা বীজ আলু ক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে আগামী মৌসূমে বীজ সংকটের কারনে যাতে আলু চাষ যাতে ব্যহত না হয়, তাই কৃষি বিভাগের প্রযক্তিগত সহায়তাসহ সরকারি পৃষ্টপোষকতা চাইলেন আলু বীজ উৎপাদন কারীরা।
পাঁচবিবি উপজেলার শালট্টী বাজারের আলু বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মোস্তাকিম এগ্রো-সার্ভিসের স্বত্তÍাধিকারী জাকারিয়া হোসেন জানান, আমি ৭০ বিঘা জমিতে বিশেষ পদ্ধতিতে আলু বীজ উৎপাদন করছি। হটাৎ এত বেশী বৃষ্টিতে সব ভেস্তে গেল। প্রতি বিঘা জমিতে বীজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এতে তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। বৃষ্টি না হলে ৩০ লাখ টাকার আলু বীজ বিক্রি করতে পারতাম, কিন্তু যে লোকসান হবে, তা আমি কি দিয়ে পোষাব ?’
অসমেয়র বৃষ্টিতে মাঠে কৃষকের নাভিশ্বাস-অবস্থা দেখা দিলেও ঢিলেঢালা বক্তব্য কৃষি বিভাগের। দু’দিনে ১৭ দশমিক ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি ঢুলকেও তা কৃষকরা নিষ্কাশন করলে সমস্যা হবে না, এমন দাবি জেলার এই কৃষি কর্মকর্তার।
তথ্য নিশ্চিত করে জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.শফিকুল ইসলাম জানান, ‘ প্রকৃতির এমন বৈরী আচরনে দিশেহারা না হয়ে ধৈর্য্য ধরে ক্ষেতের পানি নিষ্কাশন, দ্রæত আলু উত্তোলন করে ধুয়ে ঘরে শুখানোর ব্যবস্থা করলে সফল পাওয়া যাবে, এ ছাড়া এ সপ্তাহের মধ্যে আবহাওয়া ভালো হলে অন্যান্য ফসলগুলোর অবস্থা স্বাবাবিক হবে বলেও কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |