আজ রবিবার | ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১১:৩৫
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে ৩ বছরের জন্য আবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। দশম বারের মতো দলটির প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হলেন তিনি। এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে টানা ৩ বারের মতো পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। গতকাল বিকাল ৩টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এই অধিবেশনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে। কাউন্সিল অধিবেশন শুরুর পর ৮ বিভাগের ৮ জন কাউন্সিলর বক্তব্য রাখেন। বাজেট উপস্থাপন এবং সংশোধিত ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করার পর সেগুলো অনুমোদন হয়। তারপর বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করা হলে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করা হয়। কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে সারা দেশ থেকে আসা প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর অংশ নেন। দলটির ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সর্বময় ক্ষমতা দলীয় প্রধানের হাতে অর্পণ করা হয়। তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে চেয়ারম্যান করে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের অপর দুই সদস্য ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এদিকে চলতি মেয়াদের কমিটির শেষ বক্তব্যে দল থেকে বিদায় চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেখানেই থাকি না কেন আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। আমি চাই আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করুন। দলকে সুসংগঠিত করুন। নতুন আসতে হবে। পুরাতনের বিদায় নতুনের আগমন, এটাই চিরাচরিত নিয়ম। তবে শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের সময় উপস্থিত কাউন্সিলররা ‘না’ ‘না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এতে তার বক্তব্য শেষ করতেও কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শনিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, এই কমিটি ২০১৯ সালে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে গঠিত হয়েছে। আপনারা দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা যথাসম্ভব পালনের চেষ্টা করেছি। এরপর অনেক ঝামেলা, অনেক কিছু গেছে। করোনা মোকাবিলা, যুদ্ধ সবকিছুর মধ্যদিয়েও আমরা সময়মতো কাউন্সিল করতে পেরেছি।
যেসব জেলা ও ইউনিটে এখনো সম্মেলন হয়নি, নতুন যে কমিটি আসবে সেই কমিটির নেতৃত্বে সেসব জায়গায় অবশ্যই যেন সম্মেলন হয়। সেদিকে নজর দিতে হবে। উপস্থিত কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেখানেই থাকি না কেন আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। আমি চাই আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করুন। দলকে সুসংগঠিত করুন। পুরাতনের বিদায় নতুনের আগমন এটাই চিরাচরিত নিয়ম। এই কথা বলে আমি আপনাদের থেকে অনুমতি চেয়ে নিয়ম অনুযায়ী ২০১৯ সালের সম্মেলনে যে কার্যকরী সংসদ নির্বাচিত হয়েছিল সেটা বিলুপ্ত ঘোষণা করছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছি। এ সময় ‘না’, ‘না’ বলে চিৎকার করেন কাউন্সিলররা। তাদের থামাতে না পেরে শেখ হাসিনা বলে উঠেন ‘এ রকম করলে হবে না তো’। পরে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব হবে। সমর্থন হবে।
তখন আপনারাই বিবেচনা করবেন। আপনাদের ওপর সব ভার ছেড়ে দিয়ে বিদায় নিচ্ছি। এরপর অধিবেশনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে প্রবেশের পর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। একই সময় দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সময় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে দুপুরের খাবার ও নামাজের বিরতি দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে যারা আছেন: সম্মেলনে আগামী ৩ বছরের জন্য সভাপতি পদে দশমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে পুরনোদের সঙ্গে দেখা মিলেছে নতুন মুখেরও। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হয়েছেন হাবিবুর রহমান সিরাজ। তিনি আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে আছেন মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), এডভোকেট কামরুল ইসলাম, সিমিন হোসেন রিমি, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আগের সবাই বহাল আছেন। তারা হলেন- মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন-আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, এডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নতুন পদ পেয়েছেন সুজিত রায় নন্দী। তিনি আগের কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ ছাড়া গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে সাখাওয়াত হোসেন বাদ পড়েছেন। সম্পাদকম-লীর সদস্যরা হলেন- অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক, ডা. রোকেয়া সুলতানা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। কার্যনির্বাহী সদস্যরা হলেন- আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, নূরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, দীপঙ্কর তালুকদার, এডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন, বেগম আখতার জাহান, ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, এডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল করিব কাওছার, প্রফেসর মেরিনা জাহান, পারভীন জামান কল্পনা, এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, এডভোকেট সফুরা বেগম রুমি, এডভোকেট সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, মো. গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, এডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, মোহাম্মদ সাইদ খোকন, আজিজুস সামাদ ডন, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
আঘাত আসবে, ষড়যন্ত্র আসবে-শেখ হাসিনা: এদিকে কাউন্সিলে দেয়া বক্তব্যে আওয়ামী লীগ শাসনামলের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল নির্বাচন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা তার দলই এনেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকায় ক্ষমতায় থাকতে তাদের ভোট চুরি করতে হয় না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসনামলে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন মানেই ছিল, আমরা যেটা বলতাম ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা। খালেদা জিয়ার শাসনকালে ‘এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার’ তৈরির কথাও বলেন তিনি। সেই অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগই গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট দেয়ার যে সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু আমরা সেটা করেছি। নির্বাচন সংস্কারে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও মহাজোটের প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি এক্ষেত্রে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবদানও স্বীকার করেন।
যাতে কেউ ভুয়া ভোট দিতে না পারে সেইজন্য ছবিসহ ভোটার তালিকা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর যে কাজই করুক, আমাদের জেল খাটাক, যাই করুক, তারা অন্তত সেই প্রস্তাবের কিছু কাজ বাস্তবায়ন করে গেছে। এরপর আওয়ামী লীগের শাসনকালে নেয়া আরও নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ওই সিল মেরে আগেই ব্যালট বাক্স ভরবে, সেটা যেন না পারে, যে কেউ ভোট দিতে গিয়ে যেন দেখতে পারে সেখানে আগে থেকে ভোট ভরা আছে কিনা, সে জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এখন এটা চালু করা হয়েছে। ইভিএম চালুর প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে কিন্তু কারচুপি করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা সেটা জানি না। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই আইন মোতাবেকই মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। সেখানে আমরা আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করি না। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। আগে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সক্ষমতা নিজস্ব ছিল না, সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এটা রাখা ছিল। আমরা সেটা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এই আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি।
বাজেট থেকে সরাসরি তাদেরকে টাকা দেয়া হয়। নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকতো, তাহলে খালেদা জিয়ার মতো ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতাম। তা তো আমরা করি নাই। আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। আমরা সেই বিশ্বাস নিয়েই চলি। দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আর আমি চার চারবার প্রধানমন্ত্রী। আমাদের পরিবার দুর্নীতিই যদি করতো, তাহলে আর দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি। মানুষের জন্য কিছু করতে এসেছি। এ কারণেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, এটা অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে এটা মেনে নিতে পারি না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শুধু পদ্মা সেতু না। আজকে তিনটা এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের আওয়ামী লীগ সরকারের করা। চতুর্থটা হচ্ছে কক্সবাজার। সারা দেশে রাস্তা, ঘাট, পুল, ব্রিজ করে কিছুদিন আগে ১০০টা সেতু, ১০০টা সড়কের উন্নতি। এটা আমরা করতে পেরেছি। করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও বলেন তিনি। জনগণের কল্যাণে আওয়ামী লীগের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি।
একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে একটা দেশকে উন্নত করতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে। আমরা সেইভাবেই এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। জাতির পিতাকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগের ইতিহাস দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস, বাংলাদেশের মানুষ যেদিন পেট ভরে খেতে পারবে, যেদিন প্রত্যেকের মুখে হাসি ফুটবে, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম সেইদিনই ক্ষান্ত হইবে। আজকে আওয়ামী লীগ এটুকু বলতে পারে, বাংলাদেশের কোনো মানুষ অভুক্ত থাকে না। তাই পিতাকে বলতে পারি, পিতা আমরা কথা দিলাম, আপনার জনগণ কখনো অভুক্ত থাকবে না, আপনার জনগণ কষ্টে থাকবে না। আপনি আজকে নেই। আপনার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়ে জনগণের পাশে থেকে আমরা এই জনগণকে সুন্দর জীবন দেব, উন্নত জীবন দেব। কোনো ষড়যন্ত্রই এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না বলে আশা রেখে শেখ হাসিনা বলেন, আঘাত আসবে, ষড়যন্ত্র আসবে, কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবে, সেটাই আমরা চাই। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ আমরা পূরণ করবো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে বেশি ভুগতে হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে এই সংঘাত বন্ধের উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, একটা বাধা করোনা আর যুদ্ধ। এই জন্য আমার আহ্বানÑ আমরা যুদ্ধ চাই না, স্যাংশান চাই না, ওগুলো বন্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বন্দি থাকার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা কী, আমরা জানি। সব থেকে বেশি মেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুদ্ধের সময়, শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এই জন্য যুদ্ধ চাই না। আমি বিশ্বনেতৃত্বের কাছে আহ্বান করব, ওই ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করেন। তাদেরকে উস্কানি দেয়া বন্ধ করেন। এই যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্যই আমি আহ্বান করেছি, সকলকে যার যেটুকু জমি আছে চাষ করেন বা উৎপাদন করেন। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। উৎপাদন বাড়িয়ে আমাদেরটা আমরা খাবো। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলব না। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের চলতে হবে।
আওয়ামী লীগ প্রস্তুত, মোকাবিলা করা হবে-ওবায়দুল কাদের: সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশকালে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মনে করে, শেখ হাসিনাকে হটাতে পারলে সব হারানো ময়ূর সিংহাসন খুঁজে পাবে! পাবে না। ১০ই ডিসেম্বর পারেনি। পেয়েছে অশ্বডিম্ব! ৩০শে ডিসেম্বরও যদি পারে ঘোড়ায় ডিম পাড়বে। আছে সম্ভাবনা? আওয়ামী লীগ প্রস্তুত, মোকাবিলা করা হবে। সোনার বাংলা গড়ার জন্য আমরা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে যাবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। আওয়ামী লীগকে তথা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সবার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিশ্বস্ত ঠিকানা হোক শেখ হাসিনা। আগুনসন্ত্রাসকে রুখতে ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, যত দুর্যোগ-বিপদই আসুক না কেন, আমরা মানুষের পাশে ছিলাম, আছি। মানুষের পাশে থাকবো, এটা আমাদের অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের সবার চেতনায় বঙ্গবন্ধু, আমাদের সবার নিঃশ্বাসে বঙ্গবন্ধু, আমাদের বিশ্বাসে বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। ওবায়দুল কাদের বলেন, মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে যিনি জীবনের জয়গান গান, তার নাম শেখ হাসিনা। সারা বিশ্বে তিনি আজ সমাদৃত। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন। সেজন্য বিরোধীদের অন্তরে জ্বালা ধরেছে। তাকে নির্বাচনে হারাতে পারবে না বলেই ষড়যন্ত্র করছে তারা।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:19 AM |
Sunrise | 6:40 AM |
Zuhr | 12:01 PM |
Asr | 3:01 PM |
Magrib | 5:21 PM |
Isha | 6:42 PM |