আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৭:১৫
বিডি দিনকাল ডেস্ক :- অসৌজন্যমূলক ভাষায় চিঠি পেয়ে হতবাক হয়েছি। দলের পক্ষ থেকে দেয়া শোকজ নোটিশ প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। শোকজ নোটিশের জবাব পাঠিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি বিগত ২৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট, আমার যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাবার তারিখ, আমার নামের বানানসহ অনেক ভুলই রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে দৃশ্যমান। বিএনপিতে যোগদানের পূর্বেই আমি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থীরূপে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছিলাম। আমি বিগত ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিব (আদিষ্ট না হয়েও) এমন কঠিন, আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলব করায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি।
এখানে প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। ব্যক্তি রুহুল কবির রিজভী একজন ভদ্র, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা, তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে, তার কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি আশা করিনি।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই পত্রে বর্ণিত অভিযোগ সম্পর্কে আমার নিম্নরূপ বক্তব্য পেশ করছি-
১. আমাকে কখনও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
২. জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পদের অফার অসুস্থতার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর ২ মাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা স্থায়ী কমিটিতে আমার চাইতে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা ৪-এর অধিক হবে না বলেই আমার ধারনা।
৩. দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদানের পূর্বেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে, এ কারণেই বরিশাল যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এধরনের মারাত্মক অভিযোগ দায়ের করার কথা আমার জানা নেই। এ মামলা ছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি গত দশ বছর ধরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।
৪. ৫. ৬. বর্ণিত দলীয় সভায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অতীতে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জড়িত স্মরণীয় দিবসসমূহে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো, গত দেড় বছরে এ ধরণের অনুষ্ঠানেও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাকে ডাকার প্রয়োজনবোধ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে, বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কোনঠাসা করে রাখার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। বিগত এক বছরে আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ৬টি সভায় অংশগ্রহণ করেছি, আয়োজক জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ২টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ২টি, বিএনপি ঘরানাভুক্ত সংগঠন ১টি। দেশের খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধারা এই সভাসমূহে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অসৎ উদ্দেশ্যে আমি বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছি, এটি একেবারেই অসত্য ঢালাও মন্তব্য। বিগত ১২ই ডিসেম্বর প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধানসহ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় আমি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নতুন নির্বাচন দেবার জন্য দাবি জানিয়েছি।
৭. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমি দলীয় স্বার্থ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কোন বক্তব্য দেইনি। সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন, এখানে আমাদের বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রায়শ: বিকৃত এবং খন্ডিতভাবে প্রচার করা হয়। আমি ৩৪ বছর যাবৎ রাজনীতি করছি, কখনও কারো বিরুদ্ধে এমনকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত বক্তব্য রাখিনি। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও অনেবার বক্তব্য রেখেছি, কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। আমি কখনোই বেগম খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমান সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রাখিনি। এধরনের ঢালাও অভিযোগ এসে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে মনে করি।
৮. ১৩ বছর আগের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি একজন নগন্য রাজনৈতিক কর্মী, নিজেকে মহাসচিব ঘোষণা করেছি এটি একটি হাস্যকর বক্তব্য। প্রকৃত ঘটনা সবাই জানে। ২৯শে অক্টোবর ক্ষমতার করিডোরে অবস্থানকারী সেনা কর্মকর্তাররা স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে জোরপূর্ববক সাবেক অর্থমন্ত্রী জনাব সাইফুর রহমানের বাসায় নিয়ে যায়। গভীর রাতে সেখানে অনুষ্ঠিত সভায় জনাব সাইফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমাকে অস্থায়ী মহাসচিব রূপে ঘোষণা করা হয়। আমি সেখানে ছিলাম না, পরদিন বিষয়টি আমাকে জানানো হয়।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সততা ও দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। আমি মুক্তিযুদ্ধে তার অধীনস্ত সেনা কর্মকর্তারূপে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি, সম্মুখ সমরে আহত হয়েছি। ১৪ই ডিসেম্বর পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সারাদিনব্যাপী মরণপণ যুদ্ধের পর তার নেতৃত্বে সিলেট শহর দখল করেছিলাম। ২০২০ সালের এই দিনেই আমার দল আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আমাকে পাঠাবার আগেই চিঠির বিষয়বস্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমার অসংখ্য কর্মী মর্মাহত হয়েছে। এটিতো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, গণবিজ্ঞপ্তি প্রদানের প্রয়োজন ছিলো না। তিনি বলেন, আমার দল বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। বিগত চার বছরে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। বক্তব্য রাখার সুযোগ পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরেন। এগুলো হলো-
১. ২০২১ সালের মার্চের মধ্যেই দলের জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা।
২. দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিঝ্যের অভিযোগ ওঠে এসেছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে কাউন্সিল সভায় রিপোর্ট পেশ করা হোক। ভবিষ্যতে সকল নির্বাচনে দল থেকে একজনকে প্রার্থী এবং একজনকে বিকল্প প্রার্থীরূপে মনোনয়ন দেয়া হোক। এতে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কমে যাবে।
৩. দলের স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটিসমূহ কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে গঠণ করা হোক। সম্প্রতি আমার নির্বাচনী এলাকায় ছাত্রদলের কমিটি কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় বসে করেছেন, আহ্বায়ককেই আমি চিনি না। ছাত্রলীগের কর্মীরাও এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে। আমার সুপারিশকে বিবেচনা করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে কোন উত্তর পাইনি। ২৯ বছর সার্ভিস দেয়ার পর চিঠির একটি উত্তর আশা করতেই পারি।
৪. দলের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তাহলেই সৎ, নির্লোভ, মহান নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের আত্মা শান্তি পাবে।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |