আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:২৭

শিরোনাম :

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডন যাচ্ছেন:ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সিলেটের জাফলং সীমান্ত থেকে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জাহাজের মাস্টারের ওপর ক্ষোভ থেকে তাকে হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত আকাশ:র‌্যাব-১১ শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য এত মানুষ জীবন দেয়নি,এই সরকারের ক্লিয়ার ম্যান্ডেট হলো আমরা সংস্কার কার্যক্রমগুলো করবো:উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ(ভিডিও) সরকার প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছে না বলে অভিযোগ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাঁদপুরের মেঘনায় মাঝির বাজার এলাকায় জাহাজে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনে প্রশাসন আর কারও পক্ষে ব্যবহার হতে চায় না।

আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৫০তম বছর

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৫০তম বছর অর্থাৎ বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তি আজ। আমাদের প্রিয় এই দেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম গৌরব অর্জন ও অহঙ্কারের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে এ জাতির বীরত্বের আত্মপ্রকাশের দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমেই ১৯৭১ সালের এদিনে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় নতুন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। তাই আজ আমাদের বিজয়ের গৌরবের বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে আজ লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। মহান বিজয়ের ৫০তম বছর নানা কর্মসূচিতে পালিত হবে। নানা রঙে সাজানো হবে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত। এ দিন সরকারি ছুটি থাকবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। কৃতজ্ঞ জাতি আজ দিনভর বর্ণাঢ্য আয়োজনে সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে একাত্তর সালে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। নতচিত্তে স্মরণ করবে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া শহীদদের। আজ ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির নেতৃবৃন্দ। করোনা মহামারির কারণে এবার সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণকালে নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ উপস্থিত থাকতে পারবেন না। গতকাল বুধবার সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘মহান বিজয় দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। কোভিড-১৯ এর কারণে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।

তাদের মধ্যে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক উপস্থিত থাকবেন। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রামনাথ কোবিন্দ তিন দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। আজ ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের রাষ্ট্রপতি গেস্ট অব অনার হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। একই দিন বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের সাউথ প্লাজায় বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং রক্তস্নাত বিজয়ের আবেগ ও আনন্দ উদযাপনের জন্য আয়োজিত মহাবিজয়ের মহানায়ক অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করবেন।

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শুরু হয় চূড়ান্ত স্বাধীনতার যুদ্ধ। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী করে। অথচ সাধারণ জনগণের ভোটের মূল্য দেয়নি পাকিস্তানি শাসক। ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানা শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। মিছিল মিটিং সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। এরই মধ্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অসহায় নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানিদের কাছে বন্দি হন। ঐ অবস্থায় জাতি যখন দিশেহারা ঠিক এমনি এক অমানিশার ঘোর অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝলসে উঠলো প্রকৃতি ও মানুষ। বাতাসের প্রতিটি তরঙ্গে কান পেতে সবাই শুনলো-‘উই রিভোল্ট’। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।  দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। গণতন্ত্র রক্ষায় সাধারণ জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষায় শুরু হওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের আজ বিজয়ের ৫০তম বর্ষে এসে ভূলুন্ঠিত জনগণের ভোটের অধিকার। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কূটকৌশলে হরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় অর্জন করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি। কেন্দ্রে সরকার গঠন নিয়ে নতুন করে শুরু হয় ষড়যন্ত্রের পালা। নির্বাচনের পর পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে টালবাহানা শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। এমনকি ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও মুলতবি করা হয়। পাকিস্তানের সামরিক ও ভুট্টো চক্রের ষড়যন্ত্র এবং হঠকারিতার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মাঝে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা দ্রুত প্রবলতর হয়ে উঠতে থাকে। এজন্য মূলত দায়ী পাকিস্তানের সামরিক চক্র ও ভুট্টো। কারণ তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে অবশেষে তারা সামরিক সমাধানের পথকেই বেছে নেয়।

১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করতে চায়। সোনার বাংলাকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে হানাদার বাহিনী এদেশের জনগণের কাছ থেকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে তারা ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, আরমানিটোলা ও পিলখানায় নির্মম গণহত্যা চালায়। অসহায় নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়। ঘরে ঘরে ধর্ষণ ও লুটপাট চলে। বিপন্ন মানুষের আর্তচিৎকারে সেদিন আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হলেও হানাদার বাহিনীর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি। মুহুর্মুহু গোলাবারুদের বিস্ফোরণে রাজধানী ঢাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা ত্যাগের পূর্বে তিনি সেনাবাহিনীকে গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে যান। ঢাকা ত্যাগের আগে দিনের বেলায় রংপুর ও সৈয়দপুরে বেশ ক’টি জায়গায় স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বিলম্ব হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং হত্যাকান্ডকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন।
বিবৃতিতে শেখ মুজিব বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি এবং রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ সদিচ্ছা দেখিয়েছি। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও তার উপদেষ্টারা বিষয়টির রাজনৈতিক সমাধান চাইলে তাদের সেদিকেই যেতে হবে। তিনি দেশের বিভিন্নস্থানে নির্যাতন ও গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২৭ মার্চ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন। ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেখ মুজিবকে করাচিতে নিয়ে যায়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালায়। পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম এই গণহত্যা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত। এ সময় চির আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতার লাল সূর্যটি যখন নির্যাতন ও দুঃশাসনের কালো মেঘের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছিল ঠিক সেই সময় জাতির ভাগ্য অনিশ্চয়তায় মধ্যে ঠেলে দিয়ে প্রলয় আতঙ্কে আতংকিত হয়ে এ জাতির তথাকথিত রাজনীতিবিদ সিংহ শাবকরা অনেকেই আত্মগোপন করেছিলেন। তাদের কেউ যান বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে গংয়ের বাড়িতে, কেউ যান ওপারে। মুহূর্তের মধ্যেই নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে জনগণ। নিজের বাঁচার পথ নিজেকেই বেছে নিতে হয়। নেতৃত্বহীন মানুষ সামনে এগিয়ে চলে। অসীম সাহস, সুগভীর দেশপ্রেমের প্রচন্ড বাতাসে কালো মেঘ সরিয়ে জন্ম-জন্মান্তরের প্রত্যাশিত স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে (আজকের স্বাধীনতার সোল এজেন্ট বলে দাবিদার গোষ্ঠী) ব্যর্থ হলে জাতি পুনরায় অনাদিকালের জন্য পরাধীনতার নাগপাশে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পড়ার উপক্রম হয়। এমনি এক অনিশ্চয়তা ও ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের বনিআদমেরা যখন বাকরুদ্ধ, শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, জীবন নিয়ে পালিয়ে বাঁচবে নাকি জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আশা দেয়ার, ভরসা দেয়ার, সান্ত¡Íনা দেয়ার যখন আর কেউ এগিয়ে আসছে না, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঠিক এমনি এক অমানিশার ঘোর অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝলসে উঠলো প্রকৃতি ও মানুষ। বাতাসের প্রতিটি তরঙ্গে কান পেতে সবাই শুনলো-‘উই রিভোল্ট’। প্রতিরোধের মশাল জ্বলে ওঠে চট্টগ্রামের ষোলশহরের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের  সৈনিকদের প্রাণপ্রিয় নেতার ডাকে। ৩৫ বছরের এক মেজর নিজ দায়িত্বে ঘোষণা করেন বিদ্রোহ। এটিই স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম বিদ্রোহ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।  এই একটি কণ্ঠের ঘোষণায় গোটা দেশ উঠে দাঁড়ায়। মানুষ হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। স্বাধীনতার মন্ত্রে জ্বলে ওঠার সময় সেই কণ্ঠ গর্জে ওঠে। সেই কণ্ঠ স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টি করার মতো মানুষের চেতনায় যুদ্ধ করার অমিত সাহস জোগায়। শত্রুর বিরুদ্ধে তৈরি করে ক্ষুব্ধ মানুষের অগ্নিবলয়। সেই সিংগা ফুঁকানো কণ্ঠের ঐতিহাসিক ঘোষণা মানুষের রক্তে বিদ্রোহের বান ডেকে দেয়। ইতিহাসের সেই যুগ বদলে দেয়ার ঘোষণার মহানায়ক জিয়াউর রহমান। সবাই বুঝতে পারল চুপসে গেলে চলবে না, ঝলসে উঠতে হবে। দিকভ্রান্ত জাতি খুঁজে পায় পথ। ফিরে পায় আত্মবিশ্বাস। মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেই সেদিন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয় এবং তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান, গঠন করেন অস্থায়ী সরকার। জলে-স্থলে-আকাশে চলতে থাকে তীব্র প্রতিরোধ। এরই মধ্যে ভারতের প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনীর জন্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সর্বপ্রকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অন্য কথায়, ততদিনে পাক হানাদার বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আটকে পড়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণের ফলে তাদের মনোবলও ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় দিল্লিস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ব্যাপারে। ১৬ ডিসেম্ব^র আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত সময় নির্ধারণ করে ভারত আল্টিমেটাম দেয়। এবার সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। মাত্র ১৩ দিনের যুদ্ধে পাকবাহিনী নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে। অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু প্রায় ৯ মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা যখন পাকিস্তানি বাহিনীকে কোণঠাসা করে একের পর এক এলাকা মুক্ত করছিল, যখন পাক হানাদার বাহিনী গ্রাম ছেড়ে মূল শহরগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল তখন ভারত ৩ ডিসেম্ব^র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করে। মাত্র ১৩ দিন যুদ্ধ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সব কৃতিত্ব ভারত নিজের বলে দাবি করার অপচেষ্টা চালায়। অবশেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে, সম্ভ্রমহারা দশ লাখ মা-বোন-জায়ার ক্রন্দনধোঁয়ায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোরের যে রাঙা আলোটি স্পর্শ করেছিল ভূমি, দেনদরবার নয়, কারও দয়ার দানে নয়, সাগর-সমান রক্তের দামে বাংলাদেশ ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা, রক্ত-সাগর  পেরিয়ে গৌরবময় এই বিজয়ের সূচনা জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই।

Please follow and like us:
error20
fb-share-icon
fb-share-icon20

এক্সক্লুসিভ জাতীয় প্রধান খবর

আরও পড়ুন

গত ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ

  • আর্কাইভ

    অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে অভিনব প্রতারণা; চাইনিজ নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে উত্তরখান থানা পুলিশ

    জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডন যাচ্ছেন:ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন

    সিলেটের জাফলং সীমান্ত থেকে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

    রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর

    জাহাজের মাস্টারের ওপর ক্ষোভ থেকে তাকে হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত আকাশ:র‌্যাব-১১

    শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য এত মানুষ জীবন দেয়নি,এই সরকারের ক্লিয়ার ম্যান্ডেট হলো আমরা সংস্কার কার্যক্রমগুলো করবো:উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া

    প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে ‘ঘাপটি মেরে থাকা পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের’ অপসারণে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান এজেডএম জাহিদ হোসেন’র

    ময়মনসিংহে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টূর্নামেন্টের উদ্বোধনী খেলা অনুষ্ঠিত

    রাণীশংকৈলে খ্রিস্টান ধর্মলম্বীদের ৪০টি গির্জায় বড়দিন পালিত

    কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে ১২ কেজি গাঁজা সহ ১ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

    সিডনিতে সর্বপ্রথম আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের উদোগে বিজয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

    ফখরুলের সঙ্গে খেলাফত মজলিস নেতাদের সাক্ষাৎ

    ক্ষমতাচ্যুত আ.লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন ছিল :কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে আমিনুল হক

    শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক

    নড়াইলে নতুন ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস প্রথম যাত্রীরা টিকিট পেয়ে ভীষণ খুশি

    হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে: মীর সপু

    দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ(ভিডিও)

    সরকার প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছে না বলে অভিযোগ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর

    ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

    কুড়িগ্রামে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

    বাসচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু : ২য় দিনের মতো বিচারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

    সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু

    সাদপন্থীদের হামলায় নিরীহ তাবলীগের সাথীদের হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের ফাঁসির দাবিতে কুড়িগ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান

    শরীয়তপুরে সাবেক ওসি-এসআইসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা

    বিএনপি’র কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আংশিক আহবায়ক কমিটি গঠিত

    “পতিত” আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভূলে যাবার সুযোগ নেই :উত্তরায় আমিনুল হক(ভিডিও সহ)

    চাঁদপুরের মেঘনায় মাঝির বাজার এলাকায় জাহাজে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড

    নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনে প্রশাসন আর কারও পক্ষে ব্যবহার হতে চায় না।

    অবশেষে পলাতক হাসিনারে ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের কর্মকর্তারা

    গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক

    • Dhaka, Bangladesh
      বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
      SalatTime
      Fajr5:18 AM
      Sunrise6:39 AM
      Zuhr11:59 AM
      Asr2:59 PM
      Magrib5:20 PM
      Isha6:40 PM
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুল হাসান বাবলু
    ই-মেইলঃ dk.kamrul@gmail.com
    copyright @ বাংলাদেশ দিনকাল / বিডি দিনকাল ( www.bddinkal.com )
    বিডি দিনকাল মাল্টি মিডিয়া (প্রা:) লিমিটেড প্রতিষ্ঠান।