আজ বৃহস্পতিবার | ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:১৬
টেন্ডারবাজি, জমি দখল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ, বালু উত্তোলনসহ আড়াইহাজারের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ জাতীয় সংসদের হুইপও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময় পর্বে বাবু অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা।
স্ত্রীর নামেও দেশে-বিদেশে গড়েছেন কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ। বাবুর কথার বাইরে আড়াইহাজারে টুঁ শব্দ করা যেত না। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলার শিকার হতে হতো। থানার পুলিশ, প্রশাসন সব কিছু চলত তাঁর হাতের ইশারায়।
তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর সাবেক এই সংসদ সদস্য ও হুইপ আত্মগোপন করেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ পালিয়ে গেছেন তিনি। ভুক্তভোগীরা বর্তমানে বাবু ও তাঁর স্বজনদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
আড়াইহাজারের মাফিয়া নজরুল ইসলাম বাবুবালু মহাল নিয়ন্ত্রণ : নজরুল ইসলাম বাবু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কালাপাহাড়িয়া এলাকায় মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন।
তাঁর বালু মহালের নিয়ন্ত্রণ করত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন, বর্তমান চেয়ারম্যান ফাইজুল হক ডালিম, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল মিয়াসহ একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট বালু উত্তোলনের নামে কৃষকের ফসলি জমির মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করত। ফলে ওই এলাকায় কয়েক শ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই বালু মহাল থেকে প্রতিদিন পাঁচ লাখ টাকা পেতেন বাবু।
টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ : আড়াইহাজার উপজেলার সব ধরনের টেন্ডার নজরুল ইসলাম বাবুর কবজায় ছিল।
তাঁর বন্ধু মনির ওরফে বোমা মনির এবং সরকারি সফর আলী কলেজের সাবেক ভিপি আমির ও তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী অলিউল্লাহ অলি দেখভাল করতেন ঠিকাদারির সব কাজ। আড়াইহাজার উপজেলা ও দুটি পৌরসভার সব ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন তাঁরা।
বিদেশে টাকাপাচার : সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু আড়াইহাজার চৌরাস্তা এলাকার ডুবাই প্লাজার মালিক নূর খান ও তাঁর ভাই আওয়ামী লীগ নেতা সোহাগ খানের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করতেন।
ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ : আড়াইহাজারের পোশাক কারখানার মালিকদের জিম্মি করে ফকির গ্রুপসহ অন্য কারখানাগুলোর ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন বাবু। তাঁর ছোট ভাই দুপ্তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম ও বাবুর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) অলিউল্লাহ অলি ঝুট ব্যবসা দেখভাল করতেন। ঝুট ব্যবসা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বাবু।
সরকারি অফিস নিয়ন্ত্রণ : নিয়োগ, বদলিসহ সরকারি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হতো তাঁর নির্দেশমতো। দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকায় উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রমও নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
চেয়ারম্যান নির্বাচনে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় : আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও একক প্রার্থী ঘোষণা করে তাঁদের কাছ থেকে বাবু হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এ ছাড়া দুটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা : আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর দীর্ঘ ১৬ বছরে হামলা, মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করেছেন নজরুল ইসলাম বাবু।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ : উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক নিহত তোফাজ্জল হোসেন খানের মালিকানাধীন কৃষ্ণপুরা এলাকায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৪৭ শতাংশ জমি দখল করে কাঁচাবাজার ও মার্কেট নির্মাণ করেন নজরুল ইসলাম বাবু। এই মার্কেটের নামকরণ করা হয় বৌবাজার মার্কেট। নিহত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আরিফুল হক খান জুয়েল জানান, তাঁদের জমিটি জোর করে দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া নিতেন বাবু। প্রতিবাদ করলে তাঁকে একাধিকবার হত্যাচেষ্টা চালায় বাবু ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী।
গাজীপুরা এলাকার মৃত আবুল হোসেনের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ৪০ শতাংশ জমি দখল করেন বাবু। আবুল হোসেনের ছেলে মামুন মিয়া বলেন, ‘আমাদের জমিটি জোর করে দখল করেন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। জমিটি ফেরতসহ বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী বাবুর শাস্তি দাবি করছি।’
দুদকের প্রতিবেদন : মালয়েশিয়ায় নজরুল ইসলাম বাবুর বাড়ি-প্লট এবং স্ত্রী সায়মা ইসলাম ইভার নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। ২০১৯ সাল থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে আসছিল দুদক। অনুসন্ধানে দুদক নজরুল ইসলাম বাবু ও তাঁর পরিবারের বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়, যা তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। রাজধানীতে রয়েছে তাঁর তিনটি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া রাজধানীর পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাঠার প্লটের মালিক বাবু, যার দাম চার কোটি টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তাঁর কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সে স্টার ট্রেডিং করপোরেশনে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে। নজরুল ইসলাম বাবু ও তাঁর স্ত্রী রাজধানীর গ্রিন রোডে সোনারগাঁ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি। এই ইউনিভার্সিটিতে তাঁদের শেয়ার ২৫ শতাংশ। আড়াইহাজার সদরে কৃষ্ণপুরা মৌজায় বাবুর একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। বাজবী মৌজায় তাঁর আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। আড়াইহাজারের দুপতারা এলাকায় সূচনা সাইজিং মিলসের মালিক বাবু। নরসিংদীর তিনগাঁও মৌজায় বাবুর ১৪১ শতাংশ জমি রয়েছে। একই মৌজায় তাঁর ২১৭ শতাংশ জমি আছে। মালয়েশিয়ায় নজরুল ইসলাম বাবুর একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। দেশটিতে তাঁর স্ত্রী সায়মা ইসলামের নামে রয়েছে একটি বাণিজ্যিক প্লট। এ ছাড়া, মালয়েশিয়ায় বাবুর নামে একটি কম্পানি রয়েছে।
নজরুল ইসলাম বাবু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—মেসার্স সূচনা ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, মেসার্স স্টার ট্রেডিং কম্পানি, মেসার্স বাবু এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স সূচনা ডায়িং প্রিন্টিং ওয়েবিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 4:54 AM |
Sunrise | 6:12 AM |
Zuhr | 11:43 AM |
Asr | 2:51 PM |
Magrib | 5:13 PM |
Isha | 6:31 PM |