আজ বুধবার | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৫ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১১:৩৪
বিডি দিনকাল ডেস্ক : চলমান ডলার সংকট কাটাতে ৪.৫ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সাপোর্ট) চেয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। গত রোববার আইএমএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিভার কাছে লেখা প্রস্তাবটি সংস্থাটির রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের মাধ্যমে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়েছে। দেশে আইএমএফ-এর সাম্প্রতিক সফরের পরই এই প্রস্তাব পাঠানো হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংকটে পড়া বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত চাঙ্গা করা এবং মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা আনতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। বাজেট সহায়তা হিসেবে এই ঋণ নেয়া হবে। অনেকটা বাধ্য হয়েই আইএমএফ’র ঋণ নেয়া হচ্ছে। অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে আইএমএফ-কে প্রয়োজনীয় আলোচনা শুরুর অনুরোধ করা হয়। বাংলাদেশ যাতে আগামী তিন বছরের জন্য অর্থপ্রদানের ভারসাম্য রক্ষা এবং বাজেটের প্রয়োজনে এই ঋণ ব্যবহার করতে পারে- সে বিষয়ে আলোচনা শুরুর অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে আইএমএফ’র কাছে ঋণ চেয়ে বাংলাদেশের সরকার চিঠি পাঠিয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
আইএমএফ’র এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ক্রেডিটরস রেজিলিয়্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট’ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ৪১৬ কোটি ডলার সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছে।
সূত্র জানান, এখন আইএমএফ সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য একটি টিম গঠন করা হবে। তাদের সঙ্গে শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা শেষে এই ঋণ পাওয়া যাবে। এ প্রক্রিয়ায় ৬ মাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান চাপ সামলাতে আইএমএফ’র কাছ থেকে ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্তকে খারাপ বলা যাবে না। ঋণ না নেয়া হলে বৈদেশিক মুদ্রার পতনকে ঠেকানো যাবে না। কারণ ঋণ নিলে রিজার্ভে একটা স্থিতিশীলতা আসবে। বাংলাদেশ ২০১২ সালের পর সংস্থাটি থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। তিনি বলেন, আইএমএফ অনেক শর্ত দিয়ে থাকে।
তাদের শর্তগুলো আমরা পালন করতে পারবো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যেমন; কৃষিতে ভর্তুকি তুলে দেয়া। ব্যাংকের সুদ হার ৯ শতাংশ তুলে দেয়া ইত্যাদি। এসব শর্ত হঠাৎ করে তুলে দিলে আবার অর্থনীতিতে বিপর্যয় নামতে পারে। তাই ভেবে-চিন্তে সামনে আগাতে হবে। তবে যাই হোক রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আমাদের ঋণ নিতেই হবে। জানা গেছে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে বাংলাদেশে। এতে করে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে দেশ। এদিকে ক্রমবর্ধমান ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। অন্যদিকে জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় দেশব্যাপী বিদ্যুৎ রেশনিং এর মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেও বাধ্য হয়েছে সরকার। এসব প্রেক্ষাপটেই আইএমএফ থেকে আগামী তিন বছর মেয়াদে এই ঋণ নেবে সরকার। কেবল আইএমএফ-ই নয় বিশ্বব্যাংক ও এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছেও ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চীনের নেতৃত্বাধীন দ্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পেতে আলোচনা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ৯৯ মিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে খুব শিগগিরই চুক্তি সই হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে যত বেশি সম্ভব বাজেট সাপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত চলতি অর্থবছর ১.৮৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আইএমএফ’র কাছ থেকে বড় অঙ্কের বাজেট সাপোর্ট নেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয় এক বছর আগে। এতদিন ধরে সংস্থাটির সঙ্গে ইনফরমাল আলোচনা করে ঋণ পাওয়ার বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে কবে নাগাদ শুরু হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেয়ে সংস্থাটি বাংলাদেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের জন্য একটি টিম গঠন করবে। তাদের সঙ্গে ঋণের বিভিন্ন শর্ত নিয়ে নেগোসিয়েশন হবে। আইএমএফ যত দ্রুত টিম গঠন করবে, ততো দ্রুত আলোচনা শুরু হবে,’ যোগ করেন এই কর্মকর্তা। এর আগেও বাংলাদেশ বিভিন্ন সংকটকালীন সময়ে আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে।
১৯৯০ সালে আইএমএফ থেকে প্রথম ঋণ নেয় বাংলাদেশ। তখন সামান্য পরিমাণে ঋণ নেয়া হয়েছিল। এরপর ২০০৩ সালে দারিদ্র্যবিমোচন ও প্রবৃদ্ধি সুবিধার (প্রভার্টি রিডাকশন অ্যান্ড গ্রোথ ফ্যাসিলিটি) আওতায় বাংলাদেশ ৩০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। ২০১১ সালে টাকার মান দ্রুত অবনতি হলে সরকার এপটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির আওতায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহার করে। সর্বশেষ করোনার সময়ে র্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যান্ড পারচেজ অব র্যাপিড ফাইনান্সিং ইনস্ট্রুমেন্ট আওতায় ৭৩ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ২০২১ সালের জুন শেষে বাংলাদেশের কাছে আইএমএফ’র ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮৮ কোটি ৯৮ লাখ এসডিআর বা প্রায় ১২০ কোটি ডলার। এ ছাড়া করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সরকার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে বাজেট ও টিকা সহায়তা হিসেবে ঋণ নিচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত সরকার বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, জাইকা, ওপেক ফান্ড, কোরিয়ান ঋণদাতা সংস্থা ইডিসিএফ, ইইউ, জার্মানির সংস্থা কেএফডাব্লিউ, এএফডি থেকে ৭ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা নিয়েছে। এরমধ্যে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে বিভিন্ন সংস্থা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাকি ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ছাড় হবে বলে আশা করছে সরকার।
এদিকে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, আমি মনে করি, চলতি লেনদেনের ভারসাম্য (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) রক্ষার জন্য আইএমএফ’র কাছ থেকে ঋণ নেয়া উচিত বাংলাদেশের। তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর আমরা অনেকটাই স্বস্তির জায়গায় ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক মামুন হাবিব বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে লজিস্টিক খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি হয়েছে। তাই সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে ঋণ নেয়ার দরকার আছে। তা না হলে বিশ্বে টিকে থাকা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আমরা দেখতে পেয়েছি, সামপ্রতিক সময়ে ফরেন এক্সচেঞ্জের একটি বড় ধরনের সরবরাহ ঘাটতি আছে বাংলাদেশে এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ওপর যথেষ্ট প্রেশার আছে। সেই চাপ একটু কমানোর জন্য সরকার এখন আইএমএফ’র কাছে গেছে। সেলিম রায়হান বলেন, গত এক দশক ধরে ফরেন এক্সচেঞ্জ নিয়ে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ। কারণ এই সময়ে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি – দুটোই কম বেশি ভালো করেছে। কিন্তু এখন বিশ্বে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার কারণে রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রপ্তানি ভালো হলেও আমদানি যে হারে বেড়েছে তাতে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টে একটা চাপ তৈরি করেছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের এখন ঋণদাতা না বলাই ভালো। আমরা একটু সহায়তা করেছি। শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়ে আমরা ঋণ খুয়েছি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক কারণে বাংলাদেশে এখন আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই ঋণ নেয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি। সূত্র:মানবজমিন
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:08 PM |
Asr | 3:12 PM |
Magrib | 5:33 PM |
Isha | 6:52 PM |