আজ মঙ্গলবার | ১৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ভোর ৫:৪০
ডেস্ক:-তখনও ভোর হতে অনেক দেরি। এমন সময় এক ভয়ংকর ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙে মুহাম্মদ আলুশের। ৬০ বছরের আলুশ সিরিয়ার হোমস শহরের বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বাস্তচ্যুত হয়েছেন তিনি। আশ্রয় নিয়েছিলেন তুরস্ক সীমান্তের কাছে সারমাদা শহরে। সেখানেই সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্প নিজ চোখে দেখেন তিনি। তার ভাষায়, আমাদের বাড়িটা যেনো সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দুলছিল।
সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭.৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়াকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধেও যে ক্ষতি হয় না, তা একদিনেই হয়ে গেলো ভূমিকম্পের কারণে। হাজার হাজার ভবন ধ্বসে পড়েছে দুই দেশে। প্রাণহানী হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার।
তুরস্ক, সিরিয়া এবং সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল সর্বত্রই হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আট সন্তানের পিতা আলুশ আল জাজিরাকে বলেন, ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর আমরা যখন বাড়িটি খালি করছিলাম, তখন এটি রীতিমতো ভেঙে পড়তে শুরু করলো। আমি আমার নাতনীকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছি। আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে দেরী হয়ে গিয়েছিল। আমি আরও কয়েকটি ছোটখাটো আঘাত পেয়েছি। তার চোখ দিয়ে এ সময় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। আলুশ বলেন, একই ভবনে বসবাসকারী আরও দুটি পরিবারের সদস্যরা সময়মতো বের হতে পারেনি। আমরা এখানে আজ যা দেখেছি তার একমাত্র তুলনা হতে পারে কেয়ামত।
বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশে। এরফলে সিরিয়ার ইদলিব এবং আলেপ্পো ভয়াবহভাবে কেঁপে ওঠে। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে রাস্তায় আশ্রয় নেয়। শিশু, নারী এবং বৃদ্ধদের ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে। আর যুবকরা চেষ্টা করছিল যত বেশি সম্ভব মানুষকে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে বাঁচাতে। সিরিয়ার বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত অংশগুলিতে কাজ করা একটি উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে টিকে থাকা অবকাঠামো এরইমধ্যে অবিরাম বোমাবর্ষণে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে ভূমিকম্পের কারণে সেগুলো আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি।
সেখানে নিয়োযিত একজন উদ্ধারকর্মী ইসমাইল আবদুল্লাহ আল জাজিরাকে বলেন, আমাদের দলগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের বাঁচাতে দিনরাত কাজ করছে। ১৩৩টিরও বেশি বিল্ডিং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ২৭২টি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আরও কয়েক হাজার ভবন। উদ্ধার অভিযান যতই বাড়ছে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার হাসপাতালগুলির উপর চাপও তত বাড়ছে। এসব হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা খুব বেশি নয়। কিন্তু ঘণ্টায় ঘণ্টায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
‘সিরিয়ান আমেরিকান মেডিকেল সোসাইটি’র ফিল্ড ডিরেক্টর ডক্টর ওসামা আবু আল-এজ ভূমিকম্পটিকে বিপর্যয়মূলক বলে বর্ণনা করেছেন। তার ভাষায়, এ হাসপাতালে আমরা ৫৫০ জনেরও বেশি লোককে চিকিৎসা দিচ্ছি। তারা নিজ বাড়ির ধ্বংসাবশেষে চাপা পড়েছিল। এছাড়া আমরা ১২০টি মরদেহও পেয়েছি। আবু আল-এজ আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। উদ্ধারকর্মী ও অধিকার গোষ্ঠীগুলোও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের সব ধরণের সহায়তা নিশ্চিত করা হয়।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, সিরিয়ায় এখন শীতকালীন ঝড় এবং জীবনযাত্রার অভূতপূর্ব সংকট চলছে। এর মধ্যে এই নতুন সংকটে সিরিয়ানদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা যাবে না। এই বিপর্যয় আরও বাড়তে চলেছে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১২ বছর ধরে চলমান যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাবে এই অঞ্চলের মানুষ বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বাস করছে। বিস্তৃত অঞ্চলে যুদ্ধের কারণে লক্ষাধিক মানুষ অন্যত্র পালিয়ে গেছে। এরমধ্যে এই দুর্যোগ আরও হাজার হাজার মানুষকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করবে।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:20 AM |
Sunrise | 6:40 AM |
Zuhr | 12:01 PM |
Asr | 3:02 PM |
Magrib | 5:22 PM |
Isha | 6:43 PM |