আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৭:১৮
এন এ হাসান, ঢাকা:-রাজধানীর উত্তরখানের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের বসতবাড়িতে কিশোরগ্যাং তাণ্ডব চালিয়েছে। এতে কিশোরগ্যাংয়ের হামলা ২৬ দিন বয়সী এক শিশু ও দুই নারী আহত হয়েছেন। অপরদিকে তিনটি ঘর ভাংচুর করা হয়েছে।
বড়বাগের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে উত্তরখান থানায় মুক্তিযোদ্ধার পুত্রবধূ নাজমা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
এর আগে গত রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধার বসতবাড়িতে হামলায় ২৬ দিন বয়সী শিশু আনিসা, দুই গৃহবধূ নাজমা বেগম (৪০) ও তার জ্যা শরিফা আক্তার (৩৫) আহত হয়েছে। পরে আহতরা টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
উত্তরখান থানায় করা মামলায় ২৫ জন কিশোরগ্যাং সদস্যের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়। এতে বেআইনীভাবে বসতবাড়িতে প্রবেশ করে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, ভাংচুর ও লুটতরাজের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন, রাজন (২০), আপডেট ছোটন (২১), সাব্বির ওরফে কেরু সাব্বির (২৫), ছোট কাউসার (২৩), রায়হান (২২), বাবু (২১), হৃদয় ভূঁইয়া (২১), রাতুল (২২), হোসেন (২২), আলভি (২১), মাহবুব (২১), জয় (২২), সজল (২২), আকাশ (২১), ফারহান (১৯), আবুল (২০), তুহিন (২৩), অনিক (২০), রাব্বি (২২), সজিব (২৩), আরাফাত (২২), রবিন (২৪), রায়হান (২০), রতন (২৩) এবং মাইদুল (২৪)। হামলাকারীরা উত্তরখানের মাস্টাপাড়া, মুন্ডা, চানপাড়া, কুড়িপাড়া ও মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় হামলাকারীরা বড়বাগের নামাপাড়া তালুকদার ফার্মের দিক থেকে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ এসে জড়ো হয়। সেই সাথে পথচারীদের ভয়-ভীতি ও মারধর করতে করতে জনমনে ভীতি সঞ্চার করে। সেখান থেকে মেইন রোডে যাওয়ার সময় বাদীনির ছেলে নাজিম উদ্দিনকে আক্রণ করার জন্য ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে নাজিম উদ্দিন প্রাণের দৌড়ে বাসায় প্রবেশ করলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বাসায় ঢুকে তান্ডব চালায়। ওই সময় নাজমা বেগমে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো চাপাতি দিয়ে আঘাত করলে সেটি ঘরে বারান্দার টিনে লেগে টিন খন্ডিত হয়ে যায়। পরে তাকে এলোপাথাড়ি মারধর করে সঙ্গে থাকা কাধ ব্যাগ থেকে ৫১ হাজার ৫শত টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সেই সাথে ঘরের মধ্যে থাকা তার ব্যবহৃত দশ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন, চার আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল এবং তিন আনা ওজনের একটি আংটি নিয়ে যায়। এতে বাধা দিলে হামলাকারীরা কাপড় টানাটানি করে টানা হেচড়া করে শ্লীলতা হানি করে বলে উত্তরখান থানায় করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা।
থানায় মামলার পর ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বড়বাগ সড়কের পাশের দুটি রুমের জানালা, দেয়াল ও ভেতরের মুক্তিযোদ্ধার বড় ছেলে ফজল হকের রুমের টিনের বারান্দা ভাংচুর করা হয়েছে।
এসময় মামলার বাদি নাজমা বেগম বলেন, ‘আমি কুড়ি পাড়া থেকে পায়ে হেটে মাত্র বাসায় ঢুকেছি। ওই সময় মাগরিবের আজান হচ্ছিল। ঠিক তখন শুনতে পাই, ঘরের বাহিরের দিকে অনেক চিল্লাচিল্লি হচ্ছে এবং কিছু উঠতি বয়সের ছেলেপেলে আমাদের ঘর-বাড়ি ভাংচুর করছে। পরে আমাকে মারধরে করে সাথে থাকা টাকা পয়সা ও ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’
অপরদিকে তার ছেলে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘গত শনিবার রাত ৯টার দিকে সাদেক মাস্টার মডেল স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় গেটের বাহিরে রাজন, কেরু সাব্বির, আপডেট ছোটন, রায়হানরা একটি ছেলেকে মারধর করছে। সেটি আমি দেখতে পাই। যার কারণে পরের দিন আমায় রাস্তায় একা পেয়ে ওরা আমাকে মারার জন্য ধাওয়া করে। তখন দৌঁড়ে ঘরে এসে আশ্রয় নিলে আমাদের ঘর ভাংচুর করে এবং লুটতরাজ করে। সেই সাথে আমার মাকেও মারধর করে।’
অপরদিকে নাজমা বেগমের জ্যা শরিফা আক্তার বলেন, ‘সন্ধ্যায় আমরা ঘরে বসে ছিলাম। তখন বাহিরে ভাংচুরের শব্দ পেয়ে কে কে করে জিজ্ঞাসা করেছি। সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ঘরের সব গুলো জানালা ভেঙ্গে তাণ্ডব চালায়।’
তিনি বলেন, ‘জানালার ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরায় পড়ে আমার ২৬ দিন বয়সী শিশু মেয়ে আনিশার গাল কাচের ভাঙ্গা গ্লাসে কেটে গেছে। আবার আমার পা কেটে গিয়েছিল। সেই সাথে ১২ বছর বয়সী মেয়ে তানহার মাথায় গ্লাস ভেঙ্গে পরেছিল, কিন্তু তাতে ওর কোন ক্ষতি হয়নি।’
এদিকে বড়বাগ খোঁজ নিলে বড়বাগ এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত ৮/১০ বছর আগের উত্তরখান গোদারটেকের মুন্না হত্যা মামলার আসামি ছোট কাউসার, রায়হান ও তাদের সহযোগীরা মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা চালায়।
অপরদিক বড়বাগ সড়ক সংলগ্ন বাসার সিসি টিভি ক্যামেরার তিনটি ভিডিও ফুটেজ হাতে আসে। তাতে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৫টা ৫৮ মিনিটে নদীর পাড়ের দিক নামাপাড়া তালুকদারের গরুর ফার্মের সামনে দিয়ে বড়বাগ রোডের দিকে দুই ধাপে ৩৫-৪০ জন উঠতি বয়সী যুবক হাতে লাঠি-সোটা নিয়ে প্রবেশ করে। ৬টা ১০ মিনিটের আরেকটি ভিডিও ফুটেজে তাদের সঙ্গে কাধে ব্যাগ থাকা টি শার্ট পরিহিত এক যুবকে ধারালো ছুরি বের করতে দেখা যায়। কয়েকজন হাতে লাঠি-সোটা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। ৬টা ১১ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে কিশোরগ্যাং সদস্যদের ছত্রভঙ্গ অবস্থায় সবাইকে বড়বাগ মসজিদের রাস্তার দিকে আসতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগীর ছোট ভাই মো. আমির হোসেন বলেন, ‘মাস্টার পাড়া সাদেক মাস্টার স্কুলে বার্ষিক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিশোরগ্যাংয়ের মারামারি দেখে ফেলায় পরের দিন আমার বাগিনা নাজিম উদ্দিনকে রাস্তায় একা পেয়ে ধাওয়া দেয়। প্রাণে বাঁচতে নাজিম বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিলে তখন কিশোরগ্যাং সদস্যরা বাসায় ভেতরে ঢুকে বাসার টিনের বারান্দা, দরজা-জানালা ভাংচুর ও কুপিয়ে তছনছ করে ফেলে। এসময় আমার বড় বোনকে মারধর করে ব্যাগে থাকা ৫১ হাজার টাকা, ঘরে থাকা একটি গলার চেইন, এক জোড়া কানের দুল ও একটি আংটি নিয়ে যায়। যার সময় এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যা মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘হামলাকালে কিশোরগ্যাং সদস্যদের হাতে চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, রামদা ও লাঠি-সোটা ছিল। হামলার নেতৃত্ব দেয় রাজন, আপডেট ছোটন, কেড়ু সাব্বির, ছোট কাউসার, রায়হানের নেতৃত্বে হামলা হয়।’
আমির হোসেন বলেন, ‘দরজা আটকিয়ে রুমে না ঢুকলে ওই দিনই ভাগিনা শেষ হয়ে যেত। আর তখন বাসায় কোন পুরুষ মানুষও ছিল না। সবাই কর্ম ব্যস্ততার কারণে বাহিরে ছিল।’
এ বিষয়ে উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ভুক্তভোগী হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর থানায় এসে অভিযোগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা নেওয়া হয়েছে। হামলাকারী কিশোরগ্যাং সদস্য সবাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
অপরদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উত্তরখান থানার এসআই মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে বসতবাড়িতে হামলা ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে কিশোরগ্যাং সদস্য বাবুকে (২১) মমজ্ঞলবার মাস্টারবাড়ি ব্যাংকের বুথের গলির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে বাবু জেল হাজতে রয়েছে।’
Dhaka, Bangladesh মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |