আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ২:৪৪
উত্তরা পূর্ব থানা প্রতিনিধি – রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনাল পর্যন্ত ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে বহিরাগত পেশাদার ছিনতাইকারীরা। তবে, এসব ছিনতাইকারি আনুমানিক বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছর। ওরা মিরপুর, টঙ্গি ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ছিনতাই করে আবার চলে যায়। এদের সাথে মিলে মিশে রাস্তায় ছিনতাই করে একদল মৌসুমি ছিনতাইকারি গ্রুপ। এরা উত্তরা একাকার নয়। বহিরাগত। বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের হাতে সম্বল ও প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশ সদস্যরাও। বিশেষ করে যারা বিদেশ যেতে ঢাকায় আসেন বা বিদেশে থেকে এসে বাড়ির উদ্দেশে যান তারা ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। পুলিশের দাবি বিমানবন্দর এলাকায় যেসব ছিনতাইকারী সক্রিয় তারা সবাই ঢাকার বাইরে থেকে আসে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্র সহ বিভিন্ন তথ্য সূত্রের।
পুলিশ বলছে, অধিকাংশ ছিনতাইকারিরা হলো মাদকাসক্ত। পুলিশ জীবনের ঝুকি নিয়ে পোষাকে ও সিভিলে ছিনতাইকারি আটক করে। আবার কখন ও পুলিশকে চাকু মেরে আহত করে বহিরাগত ছিনতাইকারি গ্রুপ। এমন একজন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তার নাম নাম ওয়াসিম। সে উত্তরা পূর্ব থানায় কর্মরত আছেন।
সরজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দরে ফ্লাইওভার, থার্ড টার্মিনাল থেকে শুরু করে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজের নিচে সকাল থেকে শুরু করে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত ধারালো অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও দামি বস্তু ছিনিয়ে নিচ্ছে এসব চক্র। আবার প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে এসে পথরোধ করে ছিনতাই করছে। কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পায় না। কেউ সাহস দেখালে তাদের ওপরও চালানো হয় হামলা। ফলে ঘটছে প্রাণহানি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নানা পদক্ষেপ নিলেও কার্যত সুফল মিলছে না। উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, হাউজবিল্ডিং, আজমপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের আনাগোনা রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেখা যায়।
উত্তরা পূর্ব থানার এএসআই ওয়াসিম জানান, ইতিপূর্বে আমি মাদক উদ্বার করতে গিয়ে উত্তরার আব্দুল্লাহ পুরে মাদককারবারিদের হাতে হামলার শিকার হই। মাদক ও ছিনতাই রোধে আমি কাজ করে যাচিছ।
উত্তরা বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরা বিভাগে ছিনতাইরোধে নিয়মিতই অভিযান চালানো হচ্ছে। এরপরও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই র্যাব-পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ছে ছিনতাইকারীরা। তবে,সন্ধা থেকে শুরু করে রাতের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এবং ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঠেকাতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মহসীন নামে এক ব্যক্তি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, রাজধানীতে আমি ব্যস্ততম রাস্তায় গাড়ি নিয়ে চলাচল করি। কিছুদিন আগে উত্তরার আজমপুর বাসষ্ট্যাম্ড এর সামনে এক ছিনতাইকারীকে সুপারম্যানের মতো বাসের জানালা দিয়ে এক যাত্রীর কান ছিঁড়ে সোনার অলংকার নিয়ে পালাতে দেখেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত শত গাড়ির সামনে দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে রাস্তার বিপরীত দিক দিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।’
বিমানবন্দর এলাকার ছিনতাইকারী দলের সদস্য কাওসার (ছদ্মনাম) বলেন, বিশ্বাস করে কইতাছি আপনি কিন্তু টিভিতে দেখাইন না আমাকে? আমগো জায়গা ভাগ কইরা দেয়া হয় রাইতে। কে, কোথায় কাজ করুম। আমরা তিন থ্যাইকা চারজন বিমানবন্দরে কাজ করি বেশি। ছিনতাই করার আগে আমরা নেশা করি। জুতার ঘাম, ড্যান্ডি, ইয়াবা, গাঁজা খেয়ে কামে নামি। তখন শরীরে শক্তি থাকে।
সেলিম নামে আরেক ছিনতাইকারি জানান, এই এলাকার সব চিপাচাপা আমার ছোটকাল থ্যাইকা পরিচিত, এমন কি পুলিশরাও ধাওয়া দিলে পালাতে সহজ হয়। সারাদিন বিমানবন্দর স্টেশনে থাকি। এখানে কুলিগিরি করি। রাতের বেলায় দু’একটা ছিনতাইয়ের অপেক্ষায়। কাম না করলে খামু কি?
ডিএমপি উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ছিনতাই কমানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ডিএমপি পক্ষে থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশের পোশাক ছাড়া সিভিল টিমের মাধ্যমে ছিনতাইকারী ধরার জন্য আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছি। এ পর্যন্ত যত ছিনতাইকারী ধরেছি তারা অধিকাংশই টঙ্গী, গাজীপুর ও আশপাশ এলাকা থেকে আসা।
এবিষয়ে ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম সাংবাদিকদের জানান, উত্তরার আব্দুল্লাহ থেকে বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনাল পর্যন্ত সন্ধা থেকে শুরু করে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত কিংবা ‘রাতের শেষভাগে দুর্বৃত্তরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে ছিনতাই করে বেড়ায়। এ সময় ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়।
তিনি জানান, ছিনতাইকারি রোধকল্প পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সিভিল পুলিশ কাজ করছে পুলিশ। রাস্তায় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে সব সময় আমাদের পুলিশ সদস্য সজাগ থাকে এবং তাদের আটক করে থাকে। তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ছিনতাইয়ে লিপ্ত হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারি দল। ওরা একত্রিত হয়ে রাস্তায় সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে থাকে। তবে, উত্তরা পূর্ব থানা, উত্তরা পশ্চিম থানা এবং বিমানবন্দর থানা এই তিনটি থানা এলাকা ছিনতাইকারীদের আনাগোনা বেশি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি জানান, আব্দুল্লাহপুরে যেসব ছিনতাই হয়, তারা অধিকাংশই টঙ্গী থেকে আসে। সেইসাথে বেড়িবাঁধ থাকার কারণে তারা আব্দুল্লাহপুর থেকে চুরি করে টঙ্গী পালাতে সক্ষম হয়। আমাদের পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারীদের ধরার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, বেশিরভাগ ছিনতাইকারী মাদকসেবী। বিভিন্ন স্পটে সিসিটিভি ক্যামেরা বাড়িয়েছি এবং পুলিশ সদস্যদের সিভিল টিম এবং বিভিন্ন স্পটে বিশেষ পুলিশ টিমের মাধ্যমে ছিনতাই কারীর ধরার জন্য কাজ করছে। প্রতিদিনই দুই-চারজন ছিনতাইকারী পুলিশের হাতে আটক হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, গত এক সপ্তাহে উত্তরা বিভাগে প্রায় ৫০/৬০ জন ছিনতাইকারিকে আটক করা হয়েছে। তবে, ছিনতাইকারিদের রোধকল্পে পুলিশ রাত দিন কাজ করে যাচেছ।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |