আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:০২
মাহমুদ হাসান:-স্বাধীনতার পরই তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডারদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় জমি বা প্লট বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু সরকারি জমি নেননি তৎকালীন উপ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান। যখন দেশের প্রেসিডেন্ট হলেন তখন ডিআইটি বর্তমানে রাজউক একই ক্যাটাগরিতে আবারো প্লট বরাদ্দের চিঠি দিল। এবারও তিনি প্লট নিতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের আরেক সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল)। সরকারী জমি গ্রহণে প্রেসিডেন্ট জিয়ার অনীহার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জিয়া বলেছিলেন, ‘দেখ শওকত আমরা তো যুূূদ্ধ করে দেশ শত্রুমুক্ত করেছি। একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি। পুরো দেশটিই তো আমাদের। এক খন্ড জমি দিয়ে আমি করব?’ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) মীর শওকত আলী তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে এ গল্পটি করতেন। তিনি মাঝে মাঝে খুব আফসোস করে বলতেন, জিয়ার দলের লোকদের অর্থের পিছনে ছুটতে হবে কেন? জিয়ার আদর্শ অনুসরণ করলে তো জনগণই তাদের বড় সম্পদ।
” ‘৭১ এ রণাঙ্গনে বা যুদ্ধকালীন সময়ে মতিউর রহমান নিজামী বা গোলাম আযমের সাথে মুখোমুখি দেখা হলে হয় উনারা বেঁচে থাকতেন অথবা আমি বেঁচে থাকতাম। তাই তাদের একসাথে এক মঞ্চে বসা সম্ভব না স্বাধীন দেশে।” এই কথাগুলো বার বার বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লেঃ জেঃ মীর শওকত আলী বীর উত্তম। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের ১’শ ১৬ আসন নিয়ে বিএনপি তখন সংসদের ভিতর বাইরে শক্তিশালী বিরোধী দল। জামায়াতের মাত্র দুটো আসন। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামকে আরো বেগবান করতে বিএনপি সহযোগী শক্তি হিসেবে আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে জামায়াতকে নিয়ে গঠন করা হয় চার দলীয় জোট। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চার দলীয় জোটের সব কর্মসূচীতে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে মীর শওকতকে দাওয়াত দেয়া হতো। কিন্তু তিনি যেতেন না। তবে বিএনপি’র একক কর্মসূচীগুলোতে উপস্থিত থাকতেন তিনি।
চার দলীয় জোটের কর্মসূচীতে না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন মীর শওকত।
স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতি তাঁর ছিল প্রচণ্ড ঘৃণা ও ক্ষোভ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এই বীর অধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন উচ্চকন্ঠ। ‘৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন ৫ নং সেক্টরে মিত্র বাহিনীর কমান্ডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মীর শওকত। সরকারের কাছে দেয়া মুক্তিযুূূদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারল ওসমানীর রিপোর্টে তা উল্লেখ আছে।
জিয়া পরিবারের প্রতি ছিল তাঁর প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। ১/১১ ‘র ঢামাঢোলে যখন নানা ষড়যন্ত্রে ক্ষত-বিক্ষত বিএনপি ও জিয়া পরিবার তখন মীর শওকত আবির্ভূত হলেন দৃশ্যপটে। বিএনপির সংস্কারবাদীদের তুলোধোনা করতে থাকলেন তিনি। এ ঘটনা দলটির অন্তঃপ্রাণ কিছু নেতা-কর্মীদের মনে থাকার কথা। আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ও মেজর হাফিজসহ অনেককেই গণমাধ্যমসমূহে তিরষ্কার করতে থাকলেন। সংস্কারবাদীদের তিনি সুবিধাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করলেন। এ সময় তিনি তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, “পাঁচ বছর ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে পদ-পদবীতে থেকে সংস্কারের দাবী কেন তুললেন না?” পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষকের স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তি দাবী করলেন। নিষিদ্ধ সময়েও পুরনো ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। ওয়ান ইলিভেনের পর আবারো নিভৃতচারী হয়ে যান তিনি। কিছুটা রাগ-ক্ষোভ ছিল বিএনপি নেতাদের ওপর। এ সময় বদরুদ্দোজা চৌধুরী, অলি আহমদ এমনি আওয়ামী লীগ থেকেও জোর চেষ্টা ছিল এই সেক্টর কমান্ডারকে দলে টানার জন্য। কিন্তু উনি শেষ পর্যন্ত কোন দলেই যোগদান করেননি।
২০১০ সালের ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানের বাসায় ইন্তেকাল করেন এই দেশপ্রেমিক। মীর শওকত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আগেই বলে গিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর দাফনকাজ যেন তারা সম্পন্ন করে। সে মোতাবেক খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট বাসায় চলে আসে। অন্যদিকে এ সংবাদ পেয়েই সকল কর্মসূচী বাতিল করে দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাৎক্ষণিক চলে আসেন মীর শওকতের বাসভবনে। মহানগর বিএনপি নেতাদের নির্দেশ দেন দলের পক্ষ থেকে এই বীরের দাফনকাজে সার্বিক সহযোগিতা ও অংশ নিতে। কথা বলেন স্বজনদের সাথে। কিন্ত রহস্যজনক কারণে এত বছরে একবারও বিএনপির তরফ থেকে জাতির এই সূর্য সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো তো দূরের কথা ন্যূনতম স্মরণ করাও হয় না।এ নিয়ে সমালোচনাও কম নয় দলটির অভ্যন্তরে। কেন মীর শওকতকে ডার্ক আউট করা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর কথা চালাচালি হচ্ছে প্রবীণ নেতা-কর্মীদের মাঝেও। সংস্কারবাদী হয়ে,বিএনপি কার্যালয়ে তালা দেয়া নেতাদের স্মরণ করা হয় সপ্তাহ জুড়ে সেখানে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা, একজন সেক্টর কমান্ডারকে বিএনপি’র এ অবমূল্যায়নের নিশ্চয় একদিন উদঘাটন হবেই। দোয়া করছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে জান্নাতুন ফেরদৌস দান করুন। আমিন।
ছবির ক্যাপশনঃ
১। সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশন পরিদর্শন করছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান। পাশে নবম ডিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা জিওসি মেজর জেনারল (পরে লেফটেনেন্ট জেনারল) মীর শওকত আলী বীর উত্তম।
২। রাজনীতিতে প্রবেশের পর মীর শওকত আলী।
৩। মৃত্যুর বছর তিনেক আগের ছবি।
1 no. photo collected.
2 no. photo credit: Salimullah Selim
3 no photo collected
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |