আজ বৃহস্পতিবার | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৬ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৬:৪৪
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- ওই নতুনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখির ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর। আজ পহেলা বৈশাখ। আজ নববর্ষ। স্বাগত ১৪২৯ সাল। ভোরে পূর্ব দিগন্তের সূর্যোদয়ের প্রথম আলো বিচ্ছুরিত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই সূচিত হবে বাংলা নববর্ষের শুরু। তখন থেকেই বৈশাখের সর্বজনীন উৎসব-আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠতে দেখা যাবে সারাদেশ, সব বয়সের মানুষকে। তবে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকপে এবার নববর্ষের কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। সব রকমের অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। প্রতি বছর নববর্ষের দিন শহরের রাস্তা ও উদ্যানে নামবে মানুষের ঢল। শুধু তা-ই নয়, শহর-নগর, গ্রাম-গ্রামান্তর সর্বত্রই বইবে বর্ষবরণের প্রাণোচ্ছল উৎসব-তরঙ্গ। পীড়াদায়ক তাপদাহ তুচ্ছ করে, অস্বস্তি উপেক্ষা করে ভোর থেকে দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যা-গভীর রাত পর্যন্ত চলে বৈশাখবরণ। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নববর্ষ উপলেক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করবে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে।
যেভাবে এলো পয়লা বৈশাখ : ১৯১৭ সালে প্রথম আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর পাওয়া যায়। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৩৮ সালেও ছিল একই আয়োজন। ১৯৬৭ সাল থেকে বাংলার এ অংশ ঘটা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। ঢাকা শহরে পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সংগঠনটি গানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহ্বান জানায়। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহ্বান জানান। স্থানটির পরিচিতি বটমূল হলেও প্রকৃতপক্ষে যে গাছের ছায়ায় মঞ্চ তৈরি হয় সেটি বট গাছ নয়, অশ্বত্থ গাছ। ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা।
ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি তোলার মৌসুমে এ নিয়ে ঝামেলা হতো। এতে অসময়ে কৃষকেরা খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য হতেন। খাজনা আদায় আরও সহজ করতে মুঘল সম্রাট আকবর প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌরবর্ষ ও আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের পঞ্জিকা তৈরি করেন। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ (মতান্তরে ১১ মার্চ) থেকে বাংলা সন গোনা শুরু হয়। তবে আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ নভেম্ব^^র, ১৫৫৬ খ্রি.) থেকে এই সনের কার্যকারিতা ধরা হয়। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলাবর্ষ নামে পরিচিত হয়। আকবরের সময়কাল থেকে পয়লা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর পরদিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে ভূমির মালিকেরা নিজ নিজ অঞ্চলের মানুষকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতে শুরু করেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়, যার রূপ পরিবর্তিত হয়ে এখন এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বইকে বোঝানো হতো। আসলে হালখাতা হলো বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরোনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানিরা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো বেশ প্রচলিত।
ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন ও আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় রং-বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:08 PM |
Asr | 3:13 PM |
Magrib | 5:34 PM |
Isha | 6:53 PM |